।। বৃদ্ধাশ্রম ।। (অন্তিম পর্ব)

in BDCommunity3 years ago

raindrops-574971_1280.webp
Source

ছেলে মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠেছিলো। সেবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলো। সাগরের মা যে কি খুশি হয়েছিলো। পাড়ার সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়েছিলাম। আমার যে ভালো লাগা ছিলো না তা না কিন্তু সাগরের মার উচ্ছ্বাসটা ছিলো বেশি।
তারপর ধীরে ধীরে সময় এগিয়ে চললো। সাগর ডাক্তার হিসেবে পাশ করে বের হলো। তারপর সরকারি হাসপাতালে চাকরি নিলো। ছেলে কে বিয়েও দিলাম ধুমধাম করে। সাগরের কোনো পছন্দ ছিলো না। সাগরের মা অনেক খুজে একটা উপযুক্ত মেয়ে খুজে বের করেছিলো। মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজিতে পড়তো। বিয়ের পর এক বছর ভালোই চলছিলো। হঠাৎ কী যেন হলো। সব তছনছ হয়ে গেলো।

সাগরের সাথে ওর বউ এর কথা কাটাকাটি লেগেই থাকতো। আমার যে ছেলে সবসময় চুপচাপ ছিলো সে কিভাবে আজ তর্ক করছে দূর থেকে ভাবতাম। একদিন বুঝতে পারি ঝগড়ার বিষয় আমি আর ওর মা। বৌমা আমাদের নিয়ে সংসার করতে পারবে না কিন্তু সাগর আমাদের ছাড়াবে না। এই নিয়েই তাদের মধ্যে লাগালাগি। ছেলের উপর গর্ব ও হয় আবার কষ্ট ও হয়। কিছুদিন পর থেকেই সাগর বাড়ি দেরি করে আসতে থাকে।

এই সমস্যা কিছুটা থেমে যায় বৌমার মা হবার সংবাদে। বাড়িতে আবার সব কিছু ঠিক চলতে থাকে। তাদের সংসারে নতুন মুখ আসে। সাগরের মা নাম রাখে স্নিগ্ধ। বাড়ি ভর্তি আনন্দ। সবাই স্নিগ্ধ কে নিয়ে ব্যস্ত। ভেবেছিলাম অশান্তি বুঝি শেষ হয়ে গেছে।

স্নিগ্ধর দু বছর পূর্ণ হয়েছে মাত্র। সে মিষ্টি পছন্দ করে অনেক তবে চমচম টাই বেশি। তাই তার নতুন নাম হয়ে যায় চমচম। কিন্তু বৌমা তা নিয়ে সে কি রাগ। পুরনো সমস্যা আবার নতুন করে জেগে উঠে। আবার সেই ঝগড়া। এখনতো বৌমা আর লুকিয়ে কিছু বলে না। সাগরের মা এই নিয়ে সারাদিন চিন্তার মধ্যে কাটে। শরীর আস্তে আস্তে ভেঙ্গে পড়তে থাকে।
হঠাৎ একদিন কথা কাটাকাটির পর্যায়ে সাগর বৌমার গায়ে হাত তোলে। আমি সেদিন আর দূরে থাকতে পারিনি। সাগর কে বকাঝকা করি কিন্তু তাতে বৌমার রাগ কমে না। সে স্নিগ্ধকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। এসব শুনে সাগরের মা আরো অসুস্থ হয়ে যায়। হঠাৎ এক ভোরে সাগরের মা আমাকে একা রেখে চলে যায়। সাগর অনেক চেষ্টা করেছে বৌমা কে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তার একটাই শর্ত সে আমাকে সাথে নিয়ে সংসার করবে না। আমি বুঝতে পারি আমার ছেলেটা আস্তে আস্তে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ একদিন সাগর ও আমাকে একা করে চলে গেলো। ছেলেটা দুঃখ ভুলতে মদ ধরেছিলো। সেই নেশার ঘোরেই ছেলেটা গাড়ি চালাতে গিয়ে মারা গেলো এক্সিডেন্টে। স্নিগ্ধকে নিয়ে ওর মা এসেছিলো সেদিন। আর ওই দিনই স্নিগ্ধকে শেষবারের মতো দেখেছিলাম।

দাদাজান, এই যে নিয়ে এসেছি। দুজন মিলে খাবো।

আচ্ছা দাদা ভাই।

রহিম সাহেব ভাবে আজ যদি স্নিগ্ধ হতো। তাহলে কি এমনই করতো। কি জানি কি করছে আমার চমচম। খেতে খেতে আনন্দ কে লুকিয়ে চোখ মুছে ফেলেন।