কোন এক মধ্যরাতে মাছ ধরতে যাওয়ার গল্প।
দারিদ্রতা কাধে নিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন রফিক মিয়া। পরিবার বলতে তার ছিল নিজের বউ,এক ছেলে আর এক মেয়ে। এটা তার ছোট পরিবারের কথা বললাম কিন্তু তার পরিবার এখানেই শেষ ছিল না। নিজের বাবা মা,২ ভাই সহকারে নিজের আলাদা ছোট্ট পরিবার নিয়ে যৌথ পরিবারে দারিদ্রতা কাধে নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছিলেন কোনভাবে। নিজে কৃষিকাজ করতো আর তার বউ মাষ্টার বাড়িতে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে দিত যার জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে মাঝেমাঝে টাকা, আরেক সময় ক্ষেতের সবজি বা চাল পেতো। রফিক মিয়ার বড় ভাই যাও টুকটাক কৃষি কাজে সহায়তা করতো কিন্তু ছোট ভাই টা ঘুরে ফিরে খাইতো। এতো বড় সংসারের খাবার জুটানো টাই যেন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছিল তাদের কাছে। বড় মেয়েটা কে দুরে এক বাসায় কাজের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিল রফিক মিয়া যেখানে থেকে খেয়েই কাজে সহায়তা করতো অল্প বয়সের মেয়ে খাদিজা। ছেলেটা ছোট ছিল তবুও তাকে সাথে নিয়ে যেত কৃষি কাজে। পরে কষ্ট করে চাচ্ছিল ছেলেটা কে লেখাপড়া শেখাবে। বর্ষাকালের কোন এক রাতে রফিক মিয়া তার ছোট্ট ছেলেটা কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো বাড়ি থেকে বেশ দুরের খালে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে। দেশ গ্রামে কারেন্ট তো ছিলই না, আর সময়টা তখন মধ্যরাত। একে তো ঘরের খাবার জুটানোর চিন্তা আর অন্যদিকে মাছ ধরা টা রফিক মিয়ার নেশায় পরিণত হয়েছিল। বর্ষায় সেবার মাছও এসেছিল ভালোই। নৌকায় চেপে বিলের মাঝের দিকে যাচ্ছিল দুই বাপ ছেলে যেখানে আগে থেকেই জাল পাতানো ছিল। তো গন্তব্যে পৌছে মাছ ধরার কাজ শুরু করলো আর বেশ কিছু মাছও পেয়ে গেল। বিল টা ছিল অনেক পুরোনো আর এই বিলের পানি নাকি কখনোই শুকায় না। তো মাছ ধরার একটা পর্যায়ে হঠাৎ করে তাদের নৌকা টা দুলতে শুরু করলো। রফিক মিয়া খেয়াল করলো যে কোন বাতাস নেই, নেই পানিতে ঢেউও, তবুও নৌকা এভাবে দুলতেছে এটা তো স্বাভাবিক হওয়ার কথা না। ধীরে ধীরে নৌকায় দুলোনি বাড়তে লাগলো। বিলের এক পার্শ্বে জঙ্গল থেকে কেমন শব্দ আসছিল আর মনে হচ্ছিল জঙ্গলের ঐদিক থেকে কেউ পানি পাড়িয়ে তাদের নৌকার দিকে আসছে। আর বিলের পাড়ে থেকে এমন একটা শব্দ আসছিল যেন কেউ একজন কাপড় কাচ্ছিল। রফিক মিয়া তার ছোট্ট ছেলেটা কে বারবার বলছিল চোখ বন্ধ রাখতে আর পাড়ের দিকে না তাকানোর জন্য কারণ সে কিছু একটা দেখেছিল বা টের পেয়েছিল আর সিজের শরীর নিজের অজান্তেই ঘামানে শুরু করলো যদিও আবহাওয়াটা ছিল ঠান্ডা যেখানে শরীর ঘামানোর কথাই না।। কিন্তু ছোট্ট ছেলেটা এমন শব্দ শুনে ভয়ে ভয়েই তাকালো পাড়ের দিকে। দেখতে পেল সাদা কাপড় পরা কেউ একজন কাপড় কাচ্ছে। রফিক মিয়া এই জিনিশ টা আগেই দেখে ছেলে কে তাকাতে না করেছিল কারণ সে বুঝেছিল যে এমন মধ্যরাতে কোন মানুষের বিশেষ করে মহিলা মানুষের সেখানে অন্তত কাপড় ধোয়ার জন্য আসার কথা না। তো ছোট্ট ছেলে এমন জিনিশ দেখে আব্বা আব্বা বলে চিৎকার করা শুরু করলো ভয়ে। আর রফিক মিয়া জলদি করে একটা সিগারেট ধরালো তারপর শরীরের সর্বখানি জোর দিতে নৌকা বাইতে শুরু করলো। পিছন থেকে কেউ একজন বিকট কন্ঠে হাসছিল আর জোর গলায় বলছিল, "আজকে বাঁইচা গেলি, পরে আসলে রক্ষা পাবি না"।
বাড়ি গিয়ে সেই রাতে ছোট্ট ছেলেটার জ্বর আসলো ভয় থেকে। তারপর রফিক মিয়া মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো যে ভবিষ্যতে পেটের দায়ে এরকম কোথাও যাওয়ার দরকার হলেও নিজের কাছের কাওকে নিয়ে যাবে না।
Hi @ashikstd, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
Congratulations @ashikstd! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next target is to reach 77000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz: