গল্পের নাম পরী।
অমুক চাচা তখনো গ্রামে থাকতো, আর্থিক অবস্থা ভালো না বললেই চলে। চাচার বয়স তখন খুব একটা বেশিও না। ক্ষেতে ডাল হয়েছিল, চাচার মা তাকে বললো কিছু ডাল বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে আর বিক্রির টাকা দিয়ে কিছু বাজার করে নিয়ে আসতে বাসার জন্য। তো দুপুরের আগেই বাজারে যাবে এমন উদ্দেশ্য নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো চাচা। বিশাল বড়ো মেঠোপথ ধরে হাটতে শুরু করলো। পথিমধ্যে হঠাৎ তার চোখ পড়লো পাশের পুকুর পারে। দুপুর গড়িয়ে আসছে, কোন মানুষ নেই আশেপেশে আর এমন সময় চাচার মতোই বয়স হবে এমন একটা মেয়ে মাছ ধরছে একা একা। মাছ ধরার কি দক্ষতা সেই মেয়ের। একের পর এক মাছ ধরেই যাচ্ছে খুব সহজে। দেখে চাচার ভালোই লাগলো বিষয়টা। কিন্তু তাড়া থাকার কারণে চাচার আবারো পথ চলা শুরু করতে হলো। মেয়েটার কথা যেন ভুলতেই পারছে না। অনেকটা দুর যাওয়ার পর চাচার মাথায় আসলো যে মেয়েটা আসলে কে। গ্রামের প্রত্যেকটা ঘরের লোকজনকেই চাচা চিনতো বলা চলে, কিন্তু এই মেয়েকে তো সে কখনোই দেখে নাই। তো এখন ভেবে আর কি কাজ? অনেক দুরে চলে এসেছে যে। তো হাটতে লাগলো আর একটা সময়ে বাজারে পৌছেও গেল চাচা। বাজারে যাওয়ার পর ডালগুলো নিয়ে একটা জায়গায় দাড়ালো বিক্রির উদ্দেশ্যে। একটা সময়ে বিক্রিও হয়ে গেল যদিও খুব বেশি টাকা পায় নাই। যেই টাকা পেয়েছে সেটা দিয়ে কি কিনতে পারবে তা নিয়েও চাচা তখন বিচলিত হয়ে গেল। বাজারে ছিল এক আত্মীয়ের মুদি দোকান। ঐ দোকানে একটা সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিশপত্র বিক্রি হয়। তো চাচা গেল সেই দোকানে। দোকানদার সম্পর্কে চাচার বড় ভাই (চাচাতো, খালাতো বা কোন এক তো হবে আর কি)। তো বড় ভাইয়ের হাতে ডাল বেচার টাকা টা দিয়ে চাচা বললো,
চাচাঃ ডাল বিক্রি করে এই টাকা টা পেয়েছি। নেন ধরেন টাকা টা, আর এই টাকায় যা দেওয়া যায় দিন,ঘরে বাজার নেই।
বড় ভাইঃ দুপুরে খেয়েছিস?
চাচাঃ না, খাওয়া হয়নি।
বড় ভাইঃ পাশের হোটেল থেকে খেয়ে আয় যা, টাকা চাইলে আমার কথা বলিস।
চাচাঃ ঠিক আছে গেলাম।
এই বলে চাচা যেতে লাগলো পাশের হোটেলে। হঠাৎ রাস্তার পাশের মিষ্টির দোকানে চোখ পড়লো আর দেখলো সেই মেয়েটা (মাছ ধরছিল যেই মেয়েটা) মিষ্টির দোকানে বসে মিষ্টি খাচ্ছে। চাচা হাটতেই লাগলো কারণ বাজারের মধ্যে কথা বলতে গেলে কে কি ভাবে তার তো ঠিক নেই। তো হোটেলে গিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার একই পথে আসার সময়ে সেই মিষ্টির দোকানের দিকে তাকালো কিন্তু মেয়ে টা আর সেখানে ছিল না। তো কি আর করার? চাচা গেল সেই আত্মীয়ের দোকানে। বড় ভাই অলরেডি অনেক কিছু রেডি করে রেখেছে একটা ব্যাগে। অল্প বয়সি চাচা বড় ব্যাগ টা এতো দুর নিয়ে যাবে... তাতে কি? গ্রামের মানুষ এসব কাজ ভয় পায় না। ব্যাগ টা কাধে চেপে হাটা ধরলো। শর্টকাটে অল্প সময়ে বাসায় যাওয়ার একটা রাস্তা ছিল যদিও রাস্তা টা রাস্তা না, জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যেতে হবে। সামনে দুই একজন মানুষ যাচ্ছে দেখে সাহস করে হাটা ধরলো চাচা কারণ না হলেও অর্ধেক রাস্তা বেচে যাবে আর সাথে সময় ও শক্তি তো বাচবেই।
এই জঙ্গলটা নিয়ে অনেক গল্প আছে। লোকমুখে শুনা যেত যে এই জঙ্গলের ভিতর দিয়ে দিনের বেলায়ও কেউ একা একা গেলে ঠিকভাবে গন্তব্যে পৌছত না। লাশ পাওয়া যেত অনেকসময়। জীবিত ফিরলেও বাসায় গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেত, আবার অনেকেই নাকি বাসায় গিয়ে পাগলও হয়ে গিয়েছিল। জঙ্গলের পথে হাটতে হাটতে চাচা হঠাৎ খেয়াল করলো যে সামনের মানুষগুলো আর নেই। হয়তো তারা অন্য পথে চলে গিয়েছে। সন্ধ্যাও হয়ে আসছিল, এমন সময়ে এই জঙ্গলের ভিতরে নিজেকে একা পেয়ে চাচা ঘাবরে গেল। স্বজোরে হাটতে লাগলো। যেই না মাঝ জঙ্গল পাড়ি দিল, সন্ধ্যা হয়ে গেল তখনই। চাচার তো তখন ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো। হঠাৎ পিছন থেকে কে বা কি একটা ধাক্কা দিল চাচা কে। চাচা মাটিতে পরে গেল। কেন যেন চারিদিক অন্ধকার লাগছিল, চাচা বুঝতে পারলো সে জ্ঞান হারাচ্ছে। জ্ঞান হারানোর আগের শেষ মুহুর্তে চাচা চোখের সামনে সেই মেয়ে টা কে দেখতে পেল,এরপর কি হয়েছে তা চাচা জানে না। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো। কিভাবে বাসায় আসলো জানতে চাওয়ার পর তার মা জানালো, "কোন একটা মেয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় রেখে গিয়েছে আর বলে গিয়েছে যে চাচা নাকি রাস্তার পাশে পরে ছিল"।
জঙ্গলের ভিতরে কি হয়েছিল সেই গল্পটা নাহয় আরেকদিন বলবো।
মেয়েটা খুব ভালো, বাসায় এনে দিয়ে গিয়েছে। চাচার কষ্ট লাঘব হয়েছে। 😳
Haa vai.
Niye jay nai j upore seta aro beshi valo.
Jodio ami holey boltam basay na diye sathe kore niye gele better hoto ;P
Thanks for reading amar lekha goppo.