নীলিমার বড় হওয়ার গল্প।
৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছোট্ট নীলিমার পরিবার বলতে আছে মা, নানু আর মামা। মা আর নানু গার্মেন্টস এ চাকুরী করতো আর মামা লেখাপড়ার কাজে বাহিরে থাকতো তো সেই সুবাদে নীলিমার সারাটাদিন কেটে যেত একা একাই। একদিন অফিস থেকে ফিরে নীলিমার মা টায়ার্ড শরীরে রান্না করছে আর বলছে,"এভাবে আর পারছি না, অফিস থেকে এসে আবার রান্না করে খেতে হয়। ঘুমাইতেও পারি না ঠিকমতো। আর এদিকে মেয়েটাও কোন কাজের না। একটু যে কাজ করে দিবে তা না"। কথাগুলো সবটা শুনলো ছোট্ট নীলিমা আর এগুলো শুনে তার মনে এমন একটা ভাবনা জন্ম নিলো যে সে ঘরে কাজ করে দিলে হয়তো মা অফিস থেকে ফিরে অনেক খুশি হবে আর আদর করবে। এই ভাবনা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো ছোট্ট মেয়েটা।
পরদিন সকালে মা অফিসে যাওয়ার সময়ে মেয়ের হাতে ১০ টাকা দিয়ে বললো, "স্কুলে গিয়ে কিছু খেয়ে নিও আম্মু আর তারপর সোজা বাসায় আসবা, এদিক ওদিক যাবা না, কারো ডাকে সাড়া দিবা না, কেউ কিছু দিলে নিবা/খাবা না"।
নীলিমাঃ আচ্ছা মা, তুমি ভালো থেকো।
স্কুলে গিয়ে ১০ টাকার থেকে ৩ টাকা দিয়ে মজা খেল নীলিমা আর বাকি ৭ টাকা জমিয়ে রাখলো। স্কুল শেষে বাসায় পৌছনোর পরে নীলিমার মনে পরলো গত রাতে তার মা কি বলছিল একা একা। তো নীলিমা ঠিক করলো যে আজকে সে ঘরের সব কাজ করে রাখবে মা অফিস থেকে ফিরার আগেই। শুরু হলো ছোট্ট মেয়েটার কাজ করা। প্রথম ঘর গুছানোর পালা। ঘর ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে বিছানা গুছানো, কাপড় গুছানো সবই করলো। এরপর কি করবে ভাবতে গিয়ে সে মনে মনে ভাবলো রান্নাটাও করে ফেলবে। রান্নাঘরে গেল কিন্তু গিয়ে দেখলো রান্না করার মতো কোন বাজার নেই বাসায়। কি করবে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখলো পাশের ঘরের আন্টি টা ঘর থেকে বের হচ্ছে আর তার ছেলেকে বলছে, "বল্টু, তুই একদম ঘর থেকে বের হবি না আমি এখনই বাজার থেকে আসছি"। নীলিমা বুঝতে পারলো যে ঐ আন্টি বাজারে যাচ্ছে। তো তার জমানো সেই ৭ টাকা নিয়ে আন্টির পিছু লাগলো ছোট্ট নীলিমা। পিছু পিছু হাটতে হাটতে বাজার পর্যন্ত চলে গেল। হঠাৎ আন্টির চোখ পড়লো পিছনে নীলিমার উপর তারপর আন্টি নরম সুরে বললো, "কিগো আম্মু, তুমি এখানে কেন? কিছু কিনতে আসছো?" উত্তরে নীলিমা বললো,"হ্যা আন্টি আমার কাছে ৭ টাকা আছে কিছু কিনা যাবে?" পরে আন্টির সাহায্যে ৫ টাকার লালশাক আর ২ টাকার কাচা মরিচ কিনে নীলিমা একাই দুলতে দুলতে বাড়ির পথে রওয়ানা হলো। রাস্তা দিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে, "আমি একা একা বাজার করেছি, বড় হয়ে গিয়েছি আমি,কি মজা। আম্মু আজকে অনেক খুশি হবে"।
বাসায় পৌছে নীলিমা সোজা রান্নাঘরে চলে গেল আর ঠিক করলো সে আজকে লালশাকগুলো কেটে তারপর রান্না করবে। কিন্তু সে তো কোনদিন রান্না দুরে থাক, শাক কেটেও দেখে নাই। তবুও বটি নিয়ে কাটা শুরু করলো। না বেছেই লালশাকের যেই অংশটা ফেলতে হয় সেই অংশ সহকারে কুচি কুচি করে কেটে ফেললো সব। শাক কাটতে কাটতে নীলিমার খুব বেশি ঘুমে ধরলো। আর পারলো না সে জাগনা থাকতে, ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। এদিতে রান্নাঘরের ১২টা বাজিয়ে রেখেছে সে শাক দিয়ে। বেশ কিছুক্ষণ পর তার মা অফিস থেকে এসে ঘুম ভাঙালো নীলিমার। নীলিমা আজ সারাদিন কি কি করেছে সেগুলো বললে মা আদর করবে এমনটা ভেবে বলতে গেল কিন্তু তার আগেই মা ধামুস দুমুস মাইর বসিয়ে দিল পিঠে।
নীলিমার মাঃ কি করেছিস তুই এগুলা? সারা ঘর নোংরা করে রাখছিস। কাজ তো করিসই না কিছু আরো কাজ বাড়াইছিস, ফাজিল।
নীলিমা কাদতে কাদতে বললো,"মা, তোমার কষ্ট হয় বলে আমি বাজারে গিয়ে শাক কিনে এনে আনলাম কিন্তু কাটার পর ঘুমে ধরছিল নাহলে রান্না করে তারপর সব পরিষ্কার করে রাখতাম"।
এ কথা শুনে নীলিমাকে তার মা জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগলো আর স্যরি বললো।