রিক্সায় একদিন।
৩ বছর শেষ করে এবার নবম শ্রেণিতে পড়ছে উষ্ণ। হ্যা, ৩ বছর পার করে দিয়েছে লিজার পিছনে ঘুরতে ঘুরতেই কিন্তু তখনো পর্যন্ত নিজের মনের কথা বলার সাহস পায় নাই কারণ একটাই... সে রিজেক্টেড হওয়ার অপমান মেনে নিতে পারবে না। তো ক্লাসে হঠাৎ একদিন জানালো আগামি ২/১ দিন পর উপজেলা পর্যায়ে একটা কম্পিটিশন হবে বলে জানানো হলো আর সেই কম্পিটিশন এ জোগদানের জন্য লিজাসহ বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী নাম লিখালো। লিজা যাবে সেটা দেখে উষ্ণও নিজের নাম লিখালো যদিও সে জানতো না কি করতে হবে আর জানারই বা দরকার কি? সে তো আর কম্পিটিশন এর জন্য যাচ্ছে না।
তো দিন টা চলে আসলো, স্কুল ড্রেসে স্কুল থেকেই প্রধাণ শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সবাই জার্নি শুরু করলো। বাসে করে যেতে হবে বেশ কিছু টা রাস্তা এরপর আবার রিক্সা। সেদিন আবার দুর্ভাগ্যবসত হরতাল ছিল, তো রাস্তায় ভয়ে ভয়ে যেতে হয়েছে সবাইকে এমনকি একবার তো সামনে সমস্যাই দেখা গেল কিন্তু শিক্ষকরা সবাইকে সাহস দিল আর তখন উষ্ণ ভাবলো যে কোন সমস্যা হলে সে জানালা দিয়ে নেমে এরপর প্রতিবাদ করবে, ক্রিশ ছবি দেখা তখনকার পোলাপানের মাথায় আর কি ই বা আসতে পারে? রাস্তায় কোন সমম্যা হলো না, ঠিকঠাকভাবেই পৌছালো সবাই গন্তব্যে। অন্য ক্যাম্পাস, নতুন পরিবেশ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কতোই না ছাত্র-ছাত্রী। কম্পিটিশন টা ছিল মূলত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখির... পরীক্ষার মতোই বলা চলে। উষ্ণ কম্পিউটারের বিষয়াদি নিয়ে লেখালেখি করলো যদিও সে বুঝতে পেরেছিল যে সবই ভুল হচ্ছে আর ভুল হবেই না কেন? কোন রকম প্রিপারেশন ছাড়া পরীক্ষা দেওয়া যায় নাকি? তার উপরে উষ্ণ তো আর পরীক্ষা দিতে যায় নাই, সে তো গিয়েছিল কাছ থেকে মনের মানুষটাকে ভালোভাবে দেখার জন্য।
তো পরীক্ষা শেষ করে উষ্ণ আগেআগে বের হয়ে গেল যদিও সে কি লিখেছে তা হয়তো সে নিজেও জানে না। বের হয়ে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হলো একা একা তারপর বাকিরা বের হলো। তখন দুপুর হয়ে গিয়েছে। স্কুলের ফান্ড থেকেই হয়তো কিছু টাকা একজন শিক্ষককে দিয়ে প্রধাণ শিক্ষক বললো সবাইকে দুপুরের খাবার খাইয়ে এরপর যারযার গন্তব্যে পৌছে দিতে আর তারপর প্রধাণ শিক্ষক চলে গেল। সবাই গেল একটা ভাঙাচুড়া ভাতের হোটেলে। গরুর গোস্ত দিয়ে ভরপেটে খাওয়া দাওয়া হলো। এদিকে লিজার পাশাপাশি বসে এটাই উষ্ণের প্রথম খাওয়া হলো। খাওয়া শেষে উষ্ণ বলে উঠলো, "গরুর গোস্ত দিয়ে ভাত খাওয়ার পর কোল্ড ড্রিংকস না খেলে আমার কেমন যেন লাগে, স্যার"। তাদের শিক্ষক বিষয়টা সিরিয়াস ভেবে জলদি করে সবাইকে কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ালো। খাওয়া দাওয়া শেষে এখন বাসায় ফিরার পালা। সবাই মিলে বাস স্ট্যান্ডে এসে বাসে উঠলো। যারযার মতো করে বসলো। তখন উষ্ণ মনে মনে ভাবছিল সে লিজার পাশে বসতে পারলে কি ভালোই না হতো, কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। বাস জার্নি শেষ হলো, এবার রিক্সায় করে যারযার বাসায় যেতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যেই শিক্ষকটা ছিল তার আবার পিছনের দিকে যেতে হবে কারণ তার বাসা ঐদিকে। তো সেই শিক্ষক ঠিক করলো সবাইকে বাস স্ট্যান্ড থেকে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে এরপর সে চলে যাবে।
এবার চলছে ভাড়া বাচানোর পালা। মানে কাকে কার সাথে পাঠালে কাছাকাছি হয় আর এক রিক্সায় দুইজনকে পাঠানো যায়। হিসাব নিকাশ করার সময় হঠাৎ স্যার জিজ্ঞাসা করলো,"লিজার বাসার ঐদিকে কার বাসা?" উষ্ণ সাথেসাথে বলে উঠলো, "স্যার, আমার বাসা ঐদিকে"।
স্যারঃ তাহলে তুই আর লিজা এক রিক্সায় যা।
এই কথা শুনে তো উষ্ণের মনে লাড্ডু ফুটলো। ৩ বছর শুধুমাত্র পিছন পিছনই ঘুরেছে, পাশে হাটারও সাহস হয় নাই আর আজ ছোট রিক্সায় পাশাপাশি বসে যাওয়ার সেই চান্স টা মিস কেন করবে উষ্ণ? যেই কথা সেই কাজ, রিক্সা জার্নি শুরু হয়ে গেল। তখন বড় বড় অটো রিক্সা ছিল না, ছোট প্যাডেল রিক্সায় ঝাকি আর অল্প জায়গায় মনের মানুষের সাথে যাচ্ছিল, সে কি ফিল!!! আবার রোদের কারণে রিক্সার হুডটাও লাগিয়ে দিয়েছিল। তো বেশ কিছুটা পথ চুপচাপ এভাবে যাওয়ার পর লিজা উষ্ণকে বললো, "তুমি প্লিজ এখন নেমে যাও, নাহয় পরিচিত কেউ দেখলে খারাপ ভাবতে পারে"। একটু আফসোস হবে জেনেও সাথেসাথে উষ্ণ রিক্সা থামিয়ে নেমে গেল কারণ সে চায় নি তার মনের মানুষের কোন অসুবিধা হোক। রিক্সা থেকে নেমে প্যান্টের চিপা পকেট থেকে বাটন ফোন টা বের করে বন্ধু রাশেদকে ফোন দিল সাথেসাথেই আর রিক্সার পিছন দিক থেকে ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে বিষয়গুলো বন্ধুর সাথে অতি আনন্দের সহিত শেয়ার করতে লাগলো, "বন্ধুউউউ, লিজার সাথে আজ এক রিক্সায় আসলাম"।
I think there is a story in everyone's life related to rickshaws. Nice to read your post.
Affirmative.
You should talk about yours as well.