দেশীয় চিকিৎসা জিন্দাবাদ।

in BDCommunity3 years ago

দেশীয় চিকিৎসা জিন্দাবাদ।


hole-1991881_1920.png

Source


আমার শাশুরি ব্রেইন টিউমার নিয়ে প্রবাশ থেকে দেশে ফিরে আসার পর তার মাথার ব্যাথা আর বিভিন্ন সমস্যার কারণে ঘরে রাখাটা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। তো প্রথমেই আগারগাওয়ের নিওরোসায়েন্স হাসপাতালে নেওয়া হলো আর কনফার্ম অপারেশন করতে হবে জানানোর পরেও সিট নেই জানতে পারলাম আর জানতে পারলাম যে প্রতিদিন রুগি নিয়ে গিয়ে চেক করতে হবে সিট পাওয়া যায় কিনা যেটা সম্ভব ছিল না। টাকার তেমন ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও ভারতে নেওয়ার কথা চিন্তা করে অনেক খোজ খবর নিলাম কিন্তু সময় লেগে যাবে বলে আর সেটা হলো না। তারপর ধানমন্ডি শাখার বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের স্টাফ আমার এক আন্টি জানালো যে তাদের উত্তরার শাখার উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে নাকি খুবই ভালো একজন সার্জন আছে যে অনেক বছর ধরে ব্রেইনে অপারেশন করে আসছে। খরচও একটু কম লাগবে জানা গেল তারপর রুগিকে নিয়ে সেখানে যাওয়া হলো।

বিভিন্ন মানুষের সাথে ডাক্তার সাহেবের ব্যবহার দেখে নিজেই লজ্জিত ছিলাম এমনকি নিজেরাও ভিক্টিম হওয়া সত্ত্বেও কিছুই বলা গেল না কারণ তার হাতেই চিকিৎসা হচ্ছে। পরিচিত লোক স্টাফ হওয়ায় অনেক কিছুতেই সুবিধা হয়েছিল শুধুমাত্র খরচের দিকে কোন ছাড় ছিল না। প্রায় ৮/৯ দিন পর্যবেক্ষণে রেখে এরপর ফাইনালি অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিল ডাক্তার বাবু। শাশুরির প্রবাসের মালিক থেকে পাওয়া অনুদান আর আল্লাহর রহমতে সব ঠিকঠাক মতোই হয়ে গেল। আমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর দিন অপারেশন টা হয়ে গেল আর অপারেশন ঠিকঠাক হয়েছে জানতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম সবাই। অপারেশন এর পরেও প্রায় ২০ দিন হাসপাতালে থাকতে হলো এরপ্বার বাসায় নিয়ে শাশুরিকে সেবা যত্ন করতে থাকলো সবাই আর সাথে মেডিসিন তো ছিলই।

অপারেশনের পর প্রথম দিকে বেশ কিছু সমস্যা দেখে ভাবতাম যে কেবল অপারেশন করেছে আসতে আসতে ঠিক হবে আর মাঝেমাঝে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার টুকটাক ট্রিটমেন্ট দিত এমনকি এর মাঝেও একবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো আর সেবারো কিছু টেস্ট করে ৩/৪ দিন হাসপাতালে রেখে বেশ কিছু টাকা বিল করে ছেরে দিল। মাস দেড়েক পর (সম্ভবত) বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণে শাশুরিকে নতুন করে MRI করা হলো। MRI রিপোর্ট নিয়ে সেই ডাক্তার বাবুর কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার বাবু জানালেন "টিউমার অনেক বড় হয়ে গেছে কোন এক অজানা কারণে, এখন আবারো অপারেশন করতে হবে।" আমি পরবর্তীতে অপারেশন এর আগের MRI রিপোর্ট আর নতুন রিপোর্ট মিলিয়ে দেখলাম বর্তমানে টিউমার টা আগের চেয়েও বড় অবস্থায় আছে যেটা হওয়ার কথা ছিল বলে মনে হয় না। ডাক্তার বাবুর কথায় বুঝা গেল যে আবার নতুন করে সব খরচ বহন করতে হবে। কিন্তু নতুন করে অপারেশন খরচ বহনের অবস্থা নাই জানানোর পর ডাক্তার বাবু পরামর্শ দিলেন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার জন্যে। এমনিতেই পরের বার অপারেশন করলে অপারেশন টেবিলেই মারা যাবে কিনা বলা যায় না তার উপরে খরচ বহনের ব্যাবস্থা নেই আর বাংলাদেশের সনামধন্য এতোবড় ডাক্তার মশাইয়ের হাতে অপারেশনের পরে এই অবস্থা হওয়ার পরেও আর কারোই সাহস হচ্ছে না অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে। তার উপরে করোনা ভাইরাসের প্রভাব তো আছেই যার কারণে লকডাউন থেকে শুরু করে শাটডাউন দেখে যেতে হচ্ছে।

এমতাবস্থায় শাশুরির শেষ সমসয়ের জন্য অপেক্ষা করছে সবাই। রুগির একমাত্র মেয়ে মানে আমার ওয়াইফ যখন ফোনে তার মামি কে বলে যে, "আম্মু তো বেশিদিন বাঁচবে না, তার দিকে একটু খেয়াল রাখেন আর সহ্য করেন" তখন কাকে কি বলে কি বুঝাবো সেটা আমার জানা নাই। মাঝেমাঝে ওয়াইফের চোখের দিকে তাকাতে পারি না, প্রায়ই এসে বলে ওর মাথায় নাকি খুব প্রেসার লাগে। আল্লাহ ওকে ধৈর্য দেক আর আমার শাশুরিকে সুস্থ করুক এই দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না।

এমন বড় কোন চিকিৎসার জন্য আমাদের দেশের হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট নেওয়ার চেয়ে নিরবে মরে যাওয়া মনে হয় ভালো হবে। আল্লাহ সুস্থভাবে নিয়ে যাবেন এটাই এখন নিজের জন্য কাম্য।


"সমাপ্ত | The End"

"Be Good, Think Good and Do Good"

"Stay Home, Stay Safe & Let's Beat Corona".


Sort:  

That's very unfortunate. I'm really sorry for your mother-in-law. Hope she will feel better in the upcoming days.
May Allah give you the courage to deal with this.

Thank you, apu.

Hi @ashikstd, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON