নিজ গ্রাম! জন্মভূমি! এই শব্দদুটোর সাথে মিশে আছে হাজারো আবেগ আর ভালোবাসা। যেই ভালোবাসার নেই কোন সমাপ্তি। যেই ভালোবাসার শুরু হয়েছিলো বহু বছর আগে। তারপর সময়ের পরিবর্তনে তা শুধু বেড়েই চলেছে। হাজার মেইল দূরে গিয়েও জন্মভূমির টানে ফিরে এসেছে প্রতিটা মানুষ। এই জন্মভূমিকে নিয়ে শত শত কবিতা লিখে গেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর কাজী নজরুল ইসলামরা।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মভূমিকে ভালোবেসে লিখে গেছেন:-
সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।
সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালোবেসে।
আমার জন্য কুমিল্লার এক অজোপাড়া গ্রামে। ধীরে ধীরে সেই গ্রামের বুকে বেড়ে উঠা। এই গ্রামের প্রতিটা অংশবিশেষ আমার কাছে সুপুরিচিত। যার প্রতিটা কোনাজুড়ে রয়েছে হাজারো স্মৃতি। এই গ্রামের প্রতিটা মানুষের সাথে রয়েছে এক অদ্ভুত ভালোবাসা।
ছোটবেলায় একবার বাবার চাকরীর সুবাদে গ্রাম ছেড়ে দাউদকান্দি শহরে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি হয় শুরু হয় পড়ালেখা। কিন্তু মনটা যেনো কোনভাবেই শহরে টিকতে চাইতো না, শুধু ছুটে যেতো চাইতো ওই ছোট্ট গ্রামটাতে। দু-একমাস পর যখন বাড়িতে আসতাম, মনে হতো প্রান ফিরে পেয়েছি। ভাইয়ের সমান বন্ধুদের সাথে আবারও দুষ্টুমিতে মেতে ওঠা আর গ্রামের ঠান্ডা শতেজ হাওয়া আমাকে উজ্জিবিত করে তুলতো। কিন্তু যখনই আবার শহরে ফিরতে হতো, তখন মনে হতো খুব কাছের কিছু ফেলে চলে যাচ্ছি। শহরে গিয়ে দুই-তিনদিন ধরে শুধু মন খারাপ করেই বসে থাকতাম।
একটা সময় বাবা চাকরি ট্রান্সফার করে আবারো চলে আসে নিজ গ্রামে। গ্রামে ফিরতে পেরে আমি যেনো আরেকটা নতুন জীবন ফিরে পাই। আবারো সবার সাথে আড্ডায় মেতে ওঠা, ইচ্ছেমতো এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো, আহা কি শান্তি!
এভাবেই চল যায় আরো ছয়টা বছর৷ পড়ালেখার তাগিদে আবারো গ্রামে ছেড়ে দূরে চলে যাওয়া। সেই থেকে আরো ছয়টা বছর হয়ে গেছে। এখন ছুটির দিনগুলোকে উপভোগ করতে শুধু গ্রামে আসা হয়। বাকি দিনগুলোতে জীবনের তাগিদে ছুটে চলা। দুই-তিন মাস পর বাড়িতে ফিরার আনন্দ অনেকটা ঈদের আনন্দের সমতুল্য। ছুটির এই সময়টাতে গ্রামের দোকানটাতে বসে রাত এগারোটা / বারোটা পর্যন্ত আড্ডা দেওয়া। বর্ষাকালে নৌকা করে ঘুরতে বের হওয়ার হওয়ার আনন্দ তারাই বুঝবে যারা বেড়ে ঊঠেছে গ্রামে।
ভবিষ্যতে ব্যস্ততা হয়তো গ্রাম হতে আমার দূরত্বটা অনেকটাই বাড়িয়ে দিবে। তারপরেও প্রতিটা ছুটিতে আমি ফিরে আসতে চাই আমার প্রিয় গ্রামটার মাঝে। নিজের পরিবার আর গ্রামের মানুষগুলোর চাইতে আপন মানুষ আর কোথাও যে খুজে পাওয়া যাবেনা। আজও গ্রামের মানুষগুলো একে অপরের সুখে দুঃখে পাশে দাঁড়ায়।
নিজ গ্রামের প্রতি এই অদ্ভুত ভালোবাসা কখনো শেষ হবার নয় ❤️🧡💛
এটা সত্য যে জীবিকার তাগিদে কিংবা পড়ালেখার কিংবা চিকিৎসা এর জন্য অধিকাংশ মানুষকে শহরমুখী হতে হয় কিন্তু গ্রামীণ জীবনের সবুজ শ্যামল প্রকৃতিকে মানুষের পক্ষে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। তাইতো মানুষ বারবার ফিরে আসে এই সবুজ শ্যামল গ্রামীণ পরিবেশে। মাঝে মাঝে আমি চিন্তা করি সারাটা জীবন যদি গ্রামের বাড়িতে থাকা যেত তাহলে খুবই ভালো হতো।
মৃত্যুর পরেও নিজ গ্রামে শায়িত হওয়া প্রত্যেকটি মানুষের কাম্য।