একটি পরিপূর্ণ ভ্রমনের সমাপ্তি || চট্টগ্রাম ভ্রমনপর্ব

in BDCommunity2 years ago (edited)

received_629113985132660.jpeg

আরেকটি স্মৃতিময় ভ্রমনের সমাপ্তি হলো। প্রতিবারের মতো এবারো আমরা বন্ধুরা মিলে ছুটে গিয়েছিলাম নতুনত্বের খুজে। প্রথমে সিলেটের সুনামগঞ্জে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে নানান সমস্যার কারণে স্থান পরিবর্তন করে চট্টগ্রামের আশেপাশে অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরার সিদ্ধান্ত হয়। চন্দ্রনাথ পাহাড়, শীতাকুণ্ড ইকো পার্ক, গুলিয়াখালী সী বীচ, খৈয়াছড়া ঝর্না, মহামায়া লেক ছিলো আমাদের চট্টগ্রামের ঘুরার প্রধান স্থান।

পরকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে ট্রেন যোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হই আমরা। আমাদের ট্রেন ৯.২০ মিনিটে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। আমাদের মধ্যে অনেকেরই এটি ছিলো প্রথম ট্রেন জার্নি। যার ফলে ট্রেনে পুরোটা সময় জুরেই আড্ডা আর খুনসুটির মধ্যে এগুতে থাকি আমরা। রাতের শেষদিকে সবাই একটু ঘুমিয়ে নেই পরদিনের ক্লান্তির কথা চিন্তা করে। একেবারে সকালে আমরা নেমে পরি কুমিরা রেলওয়ে স্টেশনে।

আমাদের পরিকল্পনার প্রথমেই ছিলো চন্দ্রনাথ পাহাড়ে চূড়ায় ওঠা। কুমিরা রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিনএনজিতে করে রওনা হয়ে যাই চন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যে। প্রায় একঘন্টা সিএনজি ভ্রমন শেষে সকাল ৭ টায় আমরা পৌছে যাই পাহাড়ের পাদদেশে। তীব্র রোদ থেকে বাচতে আগেভাগেই সকল প্রস্তুতি সেরে ৭.৩০ মিনিটে শুরু হয় আমাদের পাহাড়ে চড়া। আমাদের সঙ্গী একটি বাশের লাঠি আর কয়েক লিটার স্যালাইনসহ খাবার পানি। পাহাড়ে চলারপথে পাহাড়ি ফলমূল খাওয়ারও সুযোগ হয়েছিলো। প্রায় একঘন্টা উচু উচু সিরি বেয়ে আমরা পৌছে যাই পাহাড়ের চূরায়।


received_370334101951938.jpeg
received_655976218710821.jpeg

১০৭০ ফুট উপর থেকে পুরো চট্রগ্রাম শহটাকে পাখির চোখে দেখার সুযোগ হয়েছিলো সেদিন। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। দূরের সাগরটাকেও দেখা যাচ্ছিলো একদম স্পষ্ট। কিছু ভালো সময় অতিবাহিত করে নামার রাস্তা ধরি সবাই, আরো বহু জায়গায় যেতে হবে যে। বেলা ১০.৩০মিনিটে শেষ হয় আমাদের চন্দ্রনাথ জয়ের পর্ব।

চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে সিএনজি যোগে আমরা রওনা হই গুলিয়াখালী সী-বিচ এর উদ্দেশ্যে। আমরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে জোয়ার আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। সময়ের ঘাটতির কারনে বুটে করে সাগর পারে যাওয়ার সময় সাগরের তীব্র ঢেউয়ের মুখোমুখি হই। শুরুতে সাগরের ঘুরার কথা থাকলেও তীব্র ঢেউয়ের কাছে হার মেনে ফিরতে হয়। ১০ মিনিটের মধ্যেই জোয়ারে পুরো বীচ তলিয়ে যায়৷


received_747486839648678.jpeg
received_602255218291541.jpeg

গুলিয়াখালি সী বিচ ভ্রমন শেষে সিএনজি যোগে আমরা রওনা হই খৈয়াছড়া ঝর্ণার উদ্দেশ্যে। তবে যাতায়াতের রাস্তার বেহাল হাল বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়। তার উপর প্রায় দুই কিলোমিটার পায়ে হেটে পৌছাতে হয় ঝরনার কাছে। গিয়েই দেখি ঝরনার পানি একেবারে কম। তা আরো বেশি বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়। ঝরনায় গোসল করার পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে গেলেও প্রথমে ভেবেছিলাম এতো কম পানিতে গোসল করা হবেনা। তবে শেষ পর্যন্ত নেমে পরি আমিও।


received_481278310501813.jpeg
received_748295329725940.jpeg

ঝরনায় গোসল শেষে আমাদের গন্তব্য মিসরাইয়ের মহামায়া লেক। সিএনজি যোগে আমরা পৌছে যাই মহামায়া লেকে। আমাদের এবারের চট্টগ্রাম ভ্রমন পর্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পার্ট ছিল লেকের মধ্যে কায়াকিং। পুরো ভ্রমনের ক্লান্তিকে অল্প সময়েই দূর করে দিয়েছে এখানকার পাহাড়ের মাঝখানে নীল পানির আপরূপ সৌন্দর্য। বিকেলের সূর্যের আলো হেলে পড়েছিলো পানির বুকে, যা পানির সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে । চারদিকে পাখির সুরেলা কন্ঠে গান এক চমৎকার পরিবেশ তৈরি করেছিলো।

একঘন্টা কায়াকিং শেষে এবার আমাদের ফিরার পালা। প্রথমে দুই দিন ঘুরাঘুরির কথা থাকলেও নানা জটিলতার প্রথম দিন রাতেই হানিফ বাসযোগে ঢাকায় রওনা হই আমরা৷ শুক্রবার সকাল ৭.০০ টায় আমরা পৌছে যাউ নিজ নিজ গন্তব্যে। সমাপ্তি ঘটে আরেকটি স্মৃতিময় ভ্রমনের৷ হয়তো এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ ভ্রমণ পর্ব।

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL