আমার সংগা কেবল একটা মাংস পিণ্ড
একটা জিঘাংসু অপরাধ।
আমার একান্তকে বাজারে বিকিয়ে দেয়ার অপরাধে
কারো সাজা হয়না, কাউকে প্রশ্ন তোলা হয়না।
এসবের দায় অপরাধীর না, সমাজের না, রাষ্ট্রের না-
এ দায় কেবলই আমার।
আমি ঘরের লক্ষী, সমাজের সম্মান
বাড়ির অলংকার।
কিন্তু অঘটনের শিকারে আমি
চারিদিকে শুনি কেবল আক্রোশ হুংকার!
ছেনাল মেয়ে ছেলে।
অস্পৃশ্যা।
অচ্ছুৎ।
জাতপাত নিপাত যাওয়ার লড়ায়ে জীবন ব্যয় করা শশুর বললেন-
ছিঃ! অস্পৃশ্যা! ছায়া মাড়াবে না আমার!
"শরীর আর কি! মনটাই সব" বলা স্বামী ডাকলো-
ছেনাল মেয়ে ছেলে!
"কোথাও যাবার জায়গা না থাকলে এ বাড়িতে ছুটে চলে আসবি"
বলা বাবাও বলে দিয়েছে -
আমার অমন কুলাঙ্গার মেয়ে চাইনে।
মরে যেয়ে উদ্ধার করুক!
অন্যের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে আমায়
কারণ আমি বাড়ির সম্মান
কাদম্বরীর মত মরে প্রমাণ করতে হবে
আমি মরলে পুনরুদ্ধার হয় বাড়ির মান!
আশ্চর্য! একটা "সমগ্র ভীষণ আমি"র জগৎ কিনা
একতাল মাংসপিন্ডের প্রচারনায় গন্ডি বদ্ধ হয়ে গেলো!
অথচ, আমিও গান পছন্দ করি!
ভালবাসি বই পড়তেও-
মাঝেমধ্যে সাধ হয় একটা লালটিপ পরি
লীনাদি'র টিফিনের আকাঙ্ক্ষায় আকুপাকু মন,
সুমিতের সাথে কবিতার আড্ডা তোলা রাখা ক্ষন-
আমার দক্ষিণী জানালারটার জন্য মনটা যে কত ছা-পোষা!
কিন্তু আমি নন্দিতা,
এখন কেবলই এক গন্ডি বদ্ধ অস্পৃশ্যা!
বড় কঠোর কথা রে... তার চেয়েও নিঠুর এই সমাজ
খালি নিঠুর না, মনস্টার 😊 বিবেচনাহীন, মানবিকতা বোধহীন পিশাচ
সমাজের চেয়েও বড় দুঃখজনক হয় আপনজনগুলার ১৮০° পল্টি
এখানে 'ঘরের লক্ষী'কে পূজাও করা হয়,'অঘটনে' পায়েও পিষা হয়,মনের চেয়ে 'মাংসপিণ্ডে'র মূল্য বেশি দেওয়া হয় কিনা!
পুজা আর কই করে। লক্ষী নাম দিয়ে কেবল শেকল বন্দি করা।
কোথাও ঠাঁই নেই। কোথাও যাবার নেই।
অদ্ভুত অসহায় করে পাঠায় স্রষ্টা।