চাঁদের পাহাড়-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় [বুক রিভিউ]

in BDCommunity4 years ago (edited)

বাংলার এক অজপাড়া গায়ের বেড়ে উঠা দুরন্ত ছেলে শঙ্কর। কিন্তু সে যে কোনো সাধারণ ছেলেদের থেকে একদম আলাদা।তার কল্পনাশক্তি ও ভ্রমনকাহিনির প্রতি ছিল প্রবল নেশা। সকল প্রকার খেলাধুলায় তার কোনো জুড়ি নেই, সে সবার সেরা।শঙ্করের এক অদ্ভুত ধরনের জ্ঞান ছিল ভূগোলের সকল বড় বড় ম্যাপ এবং ভুগোলের জানা অজানা রহস্যেময় জিনিসের প্রতি। গ্রামের মাঝে এ যেন এক ভিন গ্রহের কৌতূহলী ছেলে।

শঙ্কর জার্মান বিখ্যাত পর্যটক অ্যান্টন হাউন্টমান এর আফ্রিকার এক বৃহৎ পর্বত 'মাউন্টেন অব দি মুন" (চাঁদের পাহাড়) আরোহণের অদ্ভূত বিবরণ নিয়ে লিখা সেই ভূগোল বইটি শঙ্করের বহুবার পড়া রয়েছে।আর রাতে ঘুমালেও সে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পায় যে- ঘন বাঁশের জঙলের মাঝে বুনো হাতির দল মড়-মড় করে বাঁশ ভেঙে ছুটছে। তার সাথে আরো একজনকে নিয়ে শঙ্কর বেশ প্রকান্ড একটা পাহাড়ের উপর বেয়ে উঠছে।বাবার শারিরীক অসুস্থতার জন্যে বাংলার মাঠ-ঘাটের এই মুক্ত রেসের ঘোড়া টিকে অবশেষে পাটের কলে চাকুরি নিয়ে জীবিকা উপার্জনের উপদ্রব হয়। ভাগ্যগুণে শঙ্কর গ্রামের 'প্রসাদদাস বন্দ্যোপাধ্যায়' নামে একজন ব্যক্তির মাধ্যমে চলে যায় আফ্রিকার মোম্বাসায়। নতুন জীবনের খুজে।

সেখানে সে রেলওয়ে কন্সট্রাকশন এর কাজে ইউগান্ডার এক জনমানব শুন্য বিস্তীর্ন অঞ্চলে এসে পড়ে। খুবই বিচিএ সেখানের জীবন। যে জায়গায় সিংহ দু-একদিন পর পর ই সেখানের কর্মীদের উপর আক্রমন করে ও শিকার করে বেড়ায়।সিংহের থাবায় মৃত্যু সেখানের যেন এক সাধারণ বিষয় হয়ে দাড়িয়ে গিয়েছে। শঙ্করের পদোন্নতি হয়ে।এবার সে এসে পড়ে এক নির্জন রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন-মাষ্টার হিসেবে যেখানে তার সম্পূর্ণ একা বসবাস।দিনে দুবার একটি মাএ ট্রেনের আসা-যাওয়া। সেখানে আরো এক সমস্যা, সিংহের সাথে সাথে এখন ব্ল্যাক ম্যাম্বা সাপের উপদ্রবও হয়েছে।

15094407_1745135195750332_5437418410594826553_n.jpg
source

একদিন বনের ধারে মাছ ধরে ফিরে আসার সময় সে এক ইউরোপিয়ান সাহায্যপ্রার্থী কে পেল যার নাম ছিল "ডিয়েগো আলভারেজ"। তার শারীরিক অবস্থা ছিল খুবই মুমূর্ষু। শঙ্কর তাকে সেবা-যত্ন করে সুস্থ করে তুলে এবং রিখটারসভেল্ড পর্বতে আলভারেজ ও তার সাথী জিম কার্টারের হীরের খনির সন্ধানে হারিয়ে বেড়ানোর সেই রহস্যময় গল্প শুনে,সে জানতে পারে কিভাবে সে তার ভ্রমণসঙ্গী জিম কার্টারকে হারিয়ে ফেলেছে সেই রহস্যময় পর্বতমালায়। তারপর শঙ্করও বেরিয়ে পড়ে আলভারেজ এর সাথে আবার সেই রহস্যময় রিখটারসভেল্ড পর্বতে হীরের খনির সন্ধানে।

এবার শঙ্করের মনে হলো যে সে তার আসল জীবন খুজে পেল।এরকম রহস্যময় জীবন ইতো তার ইচ্ছের ছিল,এটাই যেন শঙ্করের স্বপ্নগুলোর বাস্তব প্রতিচ্ছবি।মাসের পর মাস শঙ্কর ও আলভারেজ এর এই হীরের খনির সন্ধানে ছুটে চলা, যার আবিষ্কার কেউ করতে পারেনি,এখন পর্যন্ত নেই সে জঙ্গলের কোনো ম্যাপ, কেউই তা আবিষ্কার করতে পারিনি। যারাই চেষ্টা করেছেন সেখানের রহস্য ও খনি আবিষ্কার এর তারাই এর বিপদে মারা গিয়েছেন। দুর্গম এই পথে তাদের এই যাএা।যার প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর হাতছানি, হিংস্র সকল পশু দের সাথে তাদের দেখা,প্রাকান্ড বুনিপ নামের এক দানবের দেখা।

শঙ্কর কি অবশেষে পারবে এখানের হীরের খনির সন্ধান খুজে পেতে? নাকি খালি হাতে এই রহস্যময় অঞ্চলে অন্য সকলের মতো সেও সেই প্রকান্ড বুনিপ নামের দানবটির হাতে মারা যাবে, নয়তো হিংস্র হায়েনাদের রাতের আহারে পরিণত হবে,নাকি কালাহারি মরুভূমির বিস্তৃত অঞ্চলে ধীরে ধীরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবে তা নিয়েই মূলত এই উপন্যাস টি রচিত হয়েছে।

মন্তব্যঃ থ্রিলার ধরনের গল্প কিংবা মুভি সবকিছুর প্রতি আমার এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।এগুলো আসক্তির মতো। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর এই "চাঁদের পাহাড়" পাহাড় উপন্যাস টি পড়তে গেলে আমি এক কল্পনার রাজ্যে ভ্রমণ করি। সবকিছু যেন চোখের সামনে ছবি হয়ে ভেসে উঠে এরকম অনুভুতি হয়। আফ্রিকার জীবপ্রজাতি, ভূ-প্রকৃতি,পরিবেশ সবকিছুর এক ছবি ভেসে উঠছিল চোখের সামনে। যারা থ্রিলার টাইপ রহস্যেঘেরা ভ্রমণকাহিনী পড়তে ভালোবাসেন তাদের কাছে এই বইটি নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে।

বইঃ চাঁদের পাহাড়
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ব্যাক্তিগত রেটিংঃ৯/১০

Sort:  

সুন্দর লিখেছেন।

খুব প্রিয় বই আমার। 🙂

জ্বি ধন্যবাদ।
এই বইটা বারবার পড়লেও বোর ফিল হয়না এরকম একটা বই।

হ্যাঁ। আর থ্রিল বাদেও প্রকৃতির বর্ণনায় বুদ হয়ে থাকা যায়।

অসাধারণ রোমাঞ্চকর কিশোর থ্রিলার। সেই ছোটবেলায় পড়েছিলাম পুরো কাহিনী যদিও মনে নেই , তবে এটুকু মনে আছে- অল্প বয়সে পড়ার সময় খুব বেশি শিহরিত হয়ে গেছিলাম।

ধন্যবাদ। সুন্দর রিভিউ লিখেছেন।

এরকম আরো চাই।

হ্যা আসলেই। এই বইটা আমি কয়েকবার পড়েছি। কখনো আলসেমি লাগেনি। সারাক্ষন একটা এডভ্যাঞ্চার এর মতো ফিল হতো।

মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ রইলো।
ইনশাআল্লাহ হবে।

Hi @minhajulmredol, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @simplifylife!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON