দিদিয়ের দ্রগবা: যার কথায় থেমে গিয়েছিল গৃহযুদ্ধ!

in BDCommunity4 years ago (edited)

3jnoca.jpg

“আমি অনেক ট্রফি জিতেছি, অ্যালেক্স। কিন্তু এদের কোনোটিই আমাকে গৃহযুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার চেয়ে বেশি মর্যাদা ও আনন্দ দেয়নি!”

এলেক্স হেস নামের এক ব্রিটিশ সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেয়ার
সময় এমনটাই বলেছিলেন আইভরিকোস্টের রূপকথার বাস্তব নায়ক দিদিয়ের দ্রগবা। যার কথায় থেমে গিয়েছিল একটি দেশের গৃহযুদ্ধ, থেমে গিয়েছিল রক্তপাত।

খেলা থেকেও বেশি কিছু, আর কোটি মানুষের মন জয় করে কেউ কেউ হয়ে উঠেন একটা জাতির আদর্শ। দিদিয়ের দ্রগবা এমনই এক আদর্শের নাম। পৃথিবীর সব বড় বড় দেশ, জাতিসংঘও যখন গৃহযুদ্ধ থামাতে ব্যার্থ, তখন ফুটবল পায়ে শান্তির দূত হয়ে আবির্ভাব তার। ১৯৭৮ সালে আইভরিকোস্টের আবিজান শহরে জন্মেছিলেন তিনি। আইভরিকোস্ট এর জাতীয় ফুটবল দল ছাড়াও খেলেছেন ইংলিশ প্রিময়ার লীগে চেলসির হয়ে।

70ua7x.jpg

২০০৫ সালের ঘটনা, আইভরিকোস্টে তখন গৃহযুদ্ধ চলছিল। পুরো জাতি দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ কাউকে ছাড় দেয়ার নয়। চারিদিকে মৃত্যু, ক্ষুধা, রক্ত, অত্যাচার আর হত্যা। এদিকে ২০০৬ এর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলা চলছে আফ্রিকান দেশগুলোর মাঝে। সুদানকে হারিয়ে সেবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পেয়ে গেল টানা ৫ বছরে চলা রক্তপাত আর যুদ্ধের কারণে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া আইভরিকোস্ট।

7yt5hf.jpg

voh57f.jpg

pp3fc7.jpg

যতই যুদ্ধ হাঙ্গামা থাকুক না কেন, আফ্রিকায় ফুটবলের উন্মাদনা কেমন আমরা সকলেই জানি। কিছুক্ষণের জন্য হলেও পুরো জাতি সব যুদ্ধ ভুলে টিভি সেটের সামনে বসে ছিল ফুটবলে নিজের দেশের জয় দেখার জন্য। ফলাফলও হয়েছে মন মতো। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের মূল পর্বে অংশগ্রহন করা অবশ্যই ছোট কোনো বিষয় না, তাই না?

w5rxvv.jpg

n2imwn.jpg

আইভরিকোস্টের জনগনের মতো আইভরিকোস্টের ফুটবল ড্রেসিং রুমেও তখন চলছে উল্লাস। প্রতিটা খেলোয়াড় নিজের মতো করে জয় উদযাপন করে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ দিদিয়ের দ্রগবা এসে সবাইকে উল্লাস থামাতে বললেন। ড্রেসিং রুমের সবাই তো অবাক। কী বলে এই লোক? এই প্রথম এত বড় জয় পেলাম, উল্লাস করবো না? সেদিকে কিন্তু ভ্রুক্ষেপই নেই দ্রগবার। ড্রেসিং রুমের ভেতর ডেকে আনলেন মিডিয়া। এবার সবাই বুঝতে পারলো কিছু একটা হতে যাচ্ছে।

n1xb4m.jpg

ক্যামেরাস সামনে এসে সবাইকে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলেন দ্রগবা। জাতির উদ্দেশ্যে বললেন তার সেই বিখ্যাত ভাষণ। কড়জোরে সকলের কাছে অনুরোধ জানালেন এই হিংসা, যুদ্ধ, রক্তপাত বন্ধ করার জন্য। অনুরোধ করলে নতুন করে দেশটা বিনির্মান করার জন্য। শুনতে রূপকথার গল্প মনে হলেও সেদিন সত্যি সত্যিই এমনটাই ঘটেছিল। স্তব্দ হয়ে গিয়েছিল পুরো আইভরিকোস্ট। বুঝতে পেরেছিল নিজেদের ভুল। কাঁধে কাধ মিলিয়ে পুরো জাতি আবার একসাথে হল, থেমে গেল যুদ্ধ। তাদের আদর্শ পায়ে ফুটবল নিয়ে দৌড়ানো সেই দিদিয়ে দ্রগবা!

ফুটবলটা যেন রক্তে মিশে ছিল তার। ছোট থেকে ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও কখনো হয়তো ভাবেন নি যে ফুটবলকেই পেশা হিসেবে নিতে হবে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্লাবে খেলতে খেলতে ২৫ বছর বয়সেই ডাক পেয়ে যান ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের বিখ্যাত ক্লাব চেলসিতে। ২৫.৫ মিলিয়ন ডলারে অখ্যাত এক ফুটবলারকে কিনে নেয়ায় ইংল্যান্ডের অনেকের মনেই ছিল সন্দেহ। কিন্তু খুব অল্প সময়েই নিজের পরিশ্রম আর প্রতিভায় মুগ্ধ করে ফেলেন সবাইকে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি তাকে।

p5951v.jpg

আইভরিকোস্টে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। রাস্তার পাশে, দোকানে এমনকি মানুষের বাসায় বাসায় তার ছবি ঝুলতে দেখা যায়। গৃহযুদ্ধ থেমে যাওয়ার দুই বছর পর আবারও দুই পক্ষের মাঝে সংঘাতের সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছিল। তখনোও এগিয়ে এসেছিলেন তিনি। সরকারকে অনুরোধ করে আইভরিকোস্ট এর জাতীয় দলের একটি খেলা বিদ্রোহী অধ্যুষিত একটি এলাকায় নিয়ে যান। যেখানেই জাতীয় সঙ্গীতের সময় দুই নেতা যখন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গান গাইছিলেন, তখন দ্রগবার মনে হচ্ছিল, যেন এক নতুন আইভরিকোস্ট এর জন্ম হচ্ছে।

Sort:  

Hi @reza-shamim, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @simplifylife!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON

দিদিয়ের দ্রখবাকে আবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

আজকেই মনে হয় নিউজ দেখলাম আইভোরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট আজকে হটাৎ করে মারা গেলো।

গল্পের মতন করে জানানোর জন্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে

আপনাকেও ধন্যবাদ। দিদিয়ের দ্রগবার কাহিনী যত পড়ি, ততই অবাক লাগে। আমি এত সুন্দর করে হয়তো লিখতে পারি নি।

পাঠক হিসেবে আমি মুগ্ধ আপনার লিখা পড়ে

ধন্যবাদ ভাই। পাশে থাকবেন সবসময়। ❤❤❤