কথা ছিল এই লকডাউনে বাসায় থেকে অফিস করতে হবে। কিন্তু শিপমেন্ট এর জটিলতার কারণে বাধ্য হয়ে জামা কাপড় নিয়ে ফ্যাক্টরিতে চলে যেতে হয়েছে। আমার অফিস ঢাকায়, থাকিও ঢাকায়। কিন্তু ফ্যাক্টরি গাজীপুরের একদম শেষ মাথায়। অনেক দূরের পথ। লকডাউনে বার বার যাওয়া আসার সমস্যা, তাই বাধ্য হয়েই শেষ দুই তিন দিন ফ্যাক্টরিতে থাকতে হয়েছে।
তবে ফ্যাক্টরিতে বসে অফিস করতে মোটেও খারাপ লাগে নি। সবাই একসাথে ঘরের মানুষের মতো ছিলাম, এইটাই অনেক কিছু। যদিও করোনার ভয় তো একটু হলেও মনের ভেতর ছিল। অবশেষে শিপমেন্ট কমপ্লিট করে একটু আগে বাসায় এসে ঢুকলাম। আপাতত আমার মেসের সবাই নাস্তা দিয়ে আমাকে একলা একটা রুমে আটকে রেখেছে। ৪-৫ দিন পর নাকি রুম থেকে বের হতে পারবো। এর আগে রুম থেকে বের হওয়া নিষেধ।
আমার মেসের রুমমেটদের ভয় পাওয়ার কারণটাও অযৌক্তিক না। গতকাল করোনায় প্রথমবারের মতো আমাদের দেশে একশো এর উপরে মারা গিয়েছে। এদিকে করোনার প্রকৃতি নাকি অনেক বেশি চেইঞ্জ হয়ে গিয়েছে। ফলে ভ্যাকসিনও কাজ করছে না।
অন্যদিকে ভারতের অবস্থা আরো খারাপ। মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মৃত মানুষের সৎকার করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সে দেশের সরকারকে। এমতবস্থায় নিজেকে সবকিছু থেকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব একমাত্র নিজেরই।
সে যায় হোক, যদিও দেশে বর্তমানে কঠোর লকডাউন চলছে। কিন্তু রাস্তায় বের হয়ে আমার মোটেও মনে হয় নি যে লকডাউনকে এদেশের মানুষ খুব সিরিয়াস ভাবে নিয়েছে। ঢাকার ভেতর রাস্তাঘাটে অবশ্য তেমন মানুষ দেখা যায় নি। তবে বসুন্ধরার সামনে প্রগতি স্মরণীর আগে প্রাইভেট কারের বিশাল একটা জ্যাম দেখতে পেলাম। আমার তোলা নিচের ছবিটা লকডাউনের দ্বিতীয় দিন নদ্দার ওভার ব্রিজের উপর থেকে তুলেছিলাম।
রাস্তায় গণপরিবহন বলতে শুধুমাত্র রিকশার দেখা পাওয়া গেলেও তা অপর্যাপ্ত। আমাকে অবশ্য বাসা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার হেঁটে অফিসে উপস্থিত হতে হয়েছিল। অফিশিয়াল টুকটাক কাজ সেরে অফিসের গাড়িতে করে সোজা গাজীপুরের ফ্যাক্টরিতে চলে যেতে হয়েছে।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে ঢাকার বাইরের রাস্তাঘাট মোটামুটি ভালই ফাঁকা ছিল। কিন্তু আজ যেন অন্য চিত্র দেখলাম। ঢাকায় ব্যাক করার সময় অফিসের জিপের ছাদে শুয়ে শুয়ে এসেছিলাম। গাজীপুর এরিয়ার রাস্তাঘাট দেখে মোটেও বুঝার উপায় নাই যে এই দেশে করোনার কারণে লকডাউন চলছে। রাস্তায় জনমানুষের অবাধ বিচরন, রাস্তার দুইপাশে হকারদের নানা রকমের বিক্রীর জিনিস নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে।
তবে গাজীপুর ছেড়ে ঢাকার দিকে যত এগুতে থাকি, রাস্তাঘাটের চিত্র যেন ততই পাল্টাতে থাকে। ঢাকায় ঢুকার সময় রাস্তার পাশে দেখলাম পুলিশের চেকপোস্ট। রাস্তা আস্টকিয়ে রাস্তায় থাকা প্রতিটা মানুষকে আটকিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অপ্রয়োজনীয় কারণে কেউ বের হলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে বা হালকা বকা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। আমাদের গাড়িতে সরকারি অনুমতিপত্র ছিল বিধায় আমাদের তেমন কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় নি।
ঢাকায় ঢুকতে ঢুকতে আবিষ্কার করলাম রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা হয়ে আছে। চরম ব্যাস্ততাময় এই শহরটা সন্ধ্যার পর হুট করে যেন ভূতুড়ে এক শহর হয়ে গিয়েছে। দোকান পাট সব বন্ধ, নেই গাড়ির হর্ন এর শব্দ। দুই একটা পুলিশের গাড়ি, আর রিকশা ছাড়া আর কিছুই নেই রাস্তায়। কখনো কেউ চিন্তা করেছিল, ঢাকাকে এই রূপে দেখা যেতে পারে?
ALL PICTURES CAPTURED AND EDITED BY ME. DEVICE REALME C11