পোস্টিং

in BDCommunity3 years ago (edited)

সাত বছর বয়সী অপু যশোর শহরে তার পরিবারের সাথে বসবাস করে। তার পরিবারে তার বাবা, মা ও তার বড় একজন বোন আছে। তার বাবা একজন সেনাকর্মকর্তা। সে তার পরিবারের সাথে যশোরে একটি আর্মি কোয়াটারে থাকত।চাকরিসূত্রে তাদের পরিবারকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে যেতে হত। একদিন বিকালে তার বাবা অফিস থেকে বাসায় ফিরে বলল, "আমাকে টাঙ্গাইল শহরে পোস্টিং করা হয়েছে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের এই শহর ত্যাগ করতে হবে।" এ কথা শুনার পর তার মা আস্তে আস্তে বাসার জিনিসপত্রগুলো গুছাতে লাগল। অপুর লেখাধুলা ও ঘোরাঘুরি করতে প্রচুর ভালো লাগে। বিকাল হলেই সে তার সমবয়সী ছেলেদের সাথে কোয়াটারের পার্কে গিয়ে খেলাধুলা করে। সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে সে দেখল তার বাবা-মা ঘরের জিনিসপত্র গোছাচ্ছে। এসব দেখে সে তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, "মা, তুমি এসব কী করছ?"
প্রতি উত্তরে তার মা বললঃ "তোমার বাবার, অন্য জায়গায় পোস্টিং হয়ে গেছে, কিছুদিনের মধ্যে আমাদের এ স্থান ত্যাগ করতে হবে, তাই আস্তে আস্তে সব জিনিসপত্র গুছাতে শুরু করেছি। তুমি তোমার রুমে গিয়ে তোমার জিনিসগুলো আস্তে আস্তে গুছাতে থাকো।"

IMG_20210419_012759.jpg

অপু মনে মনে বলতে লাগল, "এটা আর নতুন কি!" কারন সে তার জন্মের পর থেকেই এসব দেখে আসছে। কিছুদিন এক শহরে থাকার পর তার বাবার পোস্টিং এর কারনে তাদেরকে অন্য এক অজানা শহরে গিয়ে বসবাস করতে হয়। অবশ্য এটা তার কাছে ভালোই লাগে। কারন তার ঘুরাঘুরির অনেক শখ, বাবার পোস্টিং এর মাধ্যমে সে বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারে এবং বিভিন্ন মানুষের সাথে মিশতে পারে এবং সে নতুন নতুন নতুন অনেক বন্ধুও বানাতে পারে। হাত-মুখ ধুয়ে সে তার রুমে গিয়ে তার জিনিসপত্রগুলো আস্তে আস্তে গুছানো শুরু করে।

গাড়ি ভাড়া করে তারা সপরিবারে টাঙ্গাইল শহরে চলে আসল। সেখানের একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে তার বাবা তাকে ভর্তি করাল। প্রথম দিন ক্লাসে গিয়ে সে দেখল এক পাশের বেঞ্চগুলোতে ছেলেরা এবং অন্য পাশের বেঞ্চগুলোতে মেয়েরা বসে ছিল। ক্লাসে ছেলের সংখ্যা মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ছেলেদের বেঞ্চগুলোতে বসার কোনো জায়গা ছিল না, বরং সে দেখল কিছু ছেলেরা জায়গা না পেয়ে মেয়েদের বেঞ্চের পিছে বসে আছে। সেখান থেকে একটি ছেলে তাকে ডাক দিল,"এইখানে জায়গা আছে দিকে এসো।" সে ধীরে ধীরে গিয়ে তার পাশে গিয়ে বসল।

নতুন স্কুলে প্রথম দিন, নতুন জায়গা তাই সে একটু চুপ করে রইল। পাশের ছেলেটি তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করল। তারপর তাদের মধ্যে অনেক কথা হলো। সেই ছেলেটি টিফিন টাইমে তার সাথের বন্ধুগুলোর সাথে তাকেও পরিচিত করিয়ে দিল। আস্তে আস্তে তার পাঁচ বন্ধুর একটি গ্রুপ হয়ে গেল।

প্রতিদিন স্কুলে তারা এক সাথে যেত এবং একসাথে বসত। একজনের আসতে যদি দেরি হত তাহলে যে স্কুলে আগে যেত সে অন্য জনের জন্য জায়গা রেখে দিত। তাদের সবারই সাইকেল ছিল, বিকাল হলে তারা পাঁচ বন্ধু মিলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পরত। সেখানের পাহাড়ি এলাকার পাশ দিয়ে আঁকাবাকা পথে তারা সাইকেল নিয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠত। পাহাড়ী সে রাস্তাগুলোর পাশ দিয়ে তারা একেক দিন একেক জায়গায় যেত। স্কুলে বন্ধের দিন, শুক্রবারে তারা বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলত। মাঝে মাঝে তারা মারবেল খেলত, মাঝে মাঝে গ্রামীণ বিভিন্ন ধরনের খেলায় মেতে উঠত। মাঝে মাঝে স্কুল ছুটির পর বৃষ্টি হলে তারা বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলত।

একদিন স্কুলের ক্রিয়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তারা পাঁচ বন্ধু একসাথে মিলে মঞ্চে একটি কৌতুক উপস্থাপন করে তারা প্রথম স্থান অধিকার করে। এভাবে ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা বাড়তে থাকে।

রোজার ঈদের ছুটিতে স্কুল বন্ধ দিয়েছে, এরই মধ্যে তার বাবা একদিন অফিস থেকে বাসায় এসে হঠাৎ বলে উঠল,"আমাকে ঢাকা পোস্টিং করা হয়েছে, কালই আমাদেরকে এখান থেকে চলে যেতে হবে।" এত অল্প সময়ের মধ্যে গোছ-গাছ করতে হবে তাই সবাই ব্যস্ত হয়ে পরল। পরের দিন সকালে তাদের ঘরের সামনে গাড়ি এসে হাজির। গাড়িতে উঠে যখন সে এ শহর ছাড়তে লাগল,তখন তার অনেক খারাপ লাগতে শুরু করল। বিভিন্ন সময় তার বাবার পোস্টিং এর কারনে তাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হত, কিন্তু কখন তার এত খারাপ লাগে নি। সে তার বন্ধুদেরকে কিছু না বলে চলে যাচ্ছে এজন্য তার আরও বেশি খারাপ লাগতে শুরু করল।