রাজিব মামার চায়ের দোকান

in BDCommunity3 years ago
আজ থেকে বহু বছর পূর্বের কথা, যখন যানবাহন এত সহজলভ্য ছিল না। মানুষ মাইলের পর মেইল হেঁটে হেঁটে যাতায়াত করত। যানবান ছিল, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গরীব হওয়ার কারনে যানবানে চড়তে পারত না। ঠিক সে সময় মলজিশপুর নামক একটি গ্রামে তিন বন্ধু থাকত, একজনের নাম রিফাত, একজনের নাম হাসান আরেক জনের নাম শিমুল। তাদের পরিবার এত বেশি সচ্ছল ছিল না। তাদের প্রত্যেকের বাবাই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

IMG_20210614_043207.jpg

অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাদের বন্ধুত্বের অধ্যায়টির সূচনা ঘটে। তাদের বাড়ি একে আপরের বাড়ি থেকে বেশি একটা দূরে ছিল না। কিন্তু তারা তিনজন যে গ্রামে থাকত সে গ্রাম থেকে তারা যে স্কুলে পড়ত সে স্কুলের দূরুত্ব প্রায় তিন মাইল হবে। বাড়ি থেকে দুই টাকা গাড়ি ভাড়া নিত ঠিকই, কিন্তু তারা কেউই গাড়ি দিয়ে স্কুলে যেত না। কারন ঐ সময় দুই টাকা দিয়ে এক কাপ-চা আর বন-রুটি পাওয়া যেত। তারা তিন বন্ধু মিলে হাটতে হাটতে স্কুলে চলে যেত এবং টিফিন টাইম হলেই তাদের স্কুলের পাশে রাজিব মামার একটি চায়ের দোকান ছিল। সেখানে দুই টাকা দিয়ে তারা চা আর বন-রুটি খেত। শুধু যে চা আর বন-রুটি খেয়ে চলে আসত এমন নয়। তারা তাদের টিফিন পিরিয়ডের পুরোটা সময় রাজিম মামার চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিত। প্রতিদিন টিফিন পিরিয়ডে রাজিব মামার দোকানে য়াওয়ার কারনে রাজিব মামারও তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।

যখনই তারা তিন বন্ধু মিলে রাজিব মামার দোকানে যেত তখন রাজিব মামাও তাদের সাথে মিলে আড্ডা দিত। রাজিব মামা তার জীবনের বিভিন্ন সুখ-দুঃখের কথা তাদের সাথে শেয়ার করত। ধীরে ধীরে রাজিব মামার কাছে তারা তিন বন্ধু একটা পরিবারের মতো হয়ে গেল। এমনও অনেক সময় গেছে রাজিব মামা তাদের থেকে টাকা নিতে চাইতেন না। তারা রাজিব মামাকে টাকা দিতে গেল রাজিব মামা তাদেরকে বলত, " তরা বড় হয়ে, চাকরি করে তখন টাকা দিস, তখন তদের থেকে নিব নে! "

এভাবে প্রায় চার বছর চলে যায়, স্কুল শেষ হয়ে কলেজে ভর্তি হয় তারা তিন বন্ধু। কলেজ শেষে তারা তিন বন্ধু ঠিকই রাজিব মামার দোকানে আড্ডা দেওয়ার কথা কখনো ভুলে না। এরই মধ্যে তারা তিন বন্ধু একসাথে মিলে আমেরিকার জন্য ডিভি কাটে। যদি লাগে লাগল এই আশায় আরকি! এরই মধ্যে একদিন খবর আসে, তাদের তিন বন্ধুর মধ্যে, সিফাতের আমেরিকার ডিভি কনফার্ম হয়ে গেছে। এখবর পাওয়ার পর ত রিফাত আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। সে এই খবর রাজিব মামাকে শুনাতে গেলে, রাজিব মামাও অনেক খুশি হয় কিন্তু রিফাত চলে যাবে বলে, রিফাতের জন্য তার অনেক কষ্ট লাগতেছিল।

প্রায় চার-পাঁচ মাসের মধ্যে ভিসা, প্লেনের টিকিট সব কনফার্ম হয়ে গেছে। রিফাত তার বন্ধু হাসান, শিমুল ও রাজিব মামার থেকে বিদায় নিয়ে আমেরিকায় চলে গেল। সেখানে গিয়ে সে ভার্সিটিতে ভর্তি হয় এবং নতুন বন্ধু বান্ধব আর পার্ট টাইম জব নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে সে তার গ্রামের বন্ধুদের ভুলে যায়।

এদিকে সাত বছর অতিক্রম হয়ে গেল, রিফাতের দেশে আসার কোনো খবরই নেই। হাসান আর শিমুলে বাংলাদেশেই ভালো একটা চাকরি পেয়ে যায়। তারা প্রায় সময়ই ছুটি পেলে রাজিব মামার সাথে দেখা করতে গ্রামে যায়। দেখা করতে গ্রামে গেলে রাজিম মামা তাদের দুইজনকে জিজ্ঞাসা করে," রিফাতের কোনো খবর আছে?"

তারা বলে," না, মামা ওর ত কোনো খবর নেই।"
রাজিব মামা বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ তাই প্রায় তারা রাজিব মামাকে দেখতে যেত। এর এক বছর পর রিফাত দেশে আসে এবং হাসান ও শিমুলের সাথে তার দেখা হয়। দেয়া হওয়ার পর রিফাত, রাজিব মামার কথা জিজ্ঞাসা করলে, তারা উত্তরে বলল, " তুই আসতে একটু দেরি করে ফেললি, রাজিব মামা পনের দিন আগে মারা গেছে! তর কথা অনেকবার আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করছে, কিন্তু আমরা তর কোনো কিছুই বলতে পারি নাই।"

এইকথা শোনার পর, রিফাত কান্নায় ভেঙে পড়ল এবং সে রাজিব মামার কবরের সামনে গিয়ে রাজিব মামার জন্য দোয়া করল।

Sort:  

Congratulations @riazud! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You received more than 3500 upvotes.
Your next target is to reach 3750 upvotes.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP