প্রকারন্তর!

in BDCommunity2 years ago

আমাদের জীবনের মধ্যে সময়ের সাথে সাথে আসে নানাবিধ পরিবর্তন। কিছু প্রকারন্তর ঘটে খুবই হঠাৎ করে, খুবই অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু বুঝে উঠার আগে, আর কিছু কিছু পরিবর্তন প্রকারন্তর ঘটে খুবই ধীরে ধীরে বহু সময় নিয়ে যার ফলে পরিবর্তনের সীমা বিশাল হলে আমরা তা তেমন একটা বুঝে উঠতে অয়ারি না বা সে পরিবর্তন তেমন একটা টের পাই না। কিন্তু কেউ যদি নিভৃত পরিবেশে একাকী বসে তার অতীতের সময়টার দিকে ক্ষণিকের জন্য অবলোকন করে, তাহলে সে নিঃসন্দেহে তার জীবনের মধ্যে এক বিশাল পরিবর্তনের ছাপ লক্ষ্য করবে। দেখবে সে আগের সে আর বর্তমানের সে মোটেও কোনোভাবে এক নয়।

IMG_20220718_182628.jpg

জীবনের এ সমীকরণ সময় যত সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে ঠিক ততই তা সহজতর এবং বোধগম্য হয়ে আমাদের মস্তিষ্কে এসে ধরা দেয়। ক্ষণিকের জন্য আপনার অতীতে ফিরে যান তো, সে অতীত যখন আপনি ছিলেন একজন প্রাণোচ্ছল বালক। যখন ছিলো আপনার তেমন কোনো চিন্তার পাহাড় আপনার মনে, বিশাল কিছু পাওয়ার লালসা কি তা তখন আপনি বুঝতেন না। এখন যা আপনার কাছে অল্প বা তুচ্ছতম বস্তু মনে হয়, ঠিক তখন সেই একই বস্তুটি আপনার খুশির সবচেয়ে বড় কারন ছিল।

ছোটছোট জিনিসের মধ্যে পাওয়া যেতো অকৃত্রিম আনন্দ। তাই নয় কি? হ্যাঁ, আমার ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই। শৈশবে বাবা যখন বাজারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতো তখন আমি বাবার সাথে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে বসে থাকতাম। মাঝে মাঝে বাবা নিয়ে যেতো, মাঝে মাঝে লুকিয়ে আমি যেনো উনাকে না দেখতে পাই এভাবে চলে যেতো। এখন ভাবি বাজারে যাওয়ার মধ্যে এতো আনন্দ কিসের? নিজেকে প্রশ্ন করি প্রায়ই। এইতো এখন যদি মা কোনো কারনে বাজার থেকে গিয়ে কিছু আনার কথা বলে কিছুটা বিরক্তকর ভাব সৃষ্টি হয় বাজারে যাওয়া নিয়ে।

তখন সময়টা ছিলো অন্যরকম, বাজারে গেলে বাবার সাথে হরেক রকমের মানুষ বিভিন্ন আয়োজন এর পসরা সাজিয়ে বসে থাকতে দেখতাম, যা অনেকটা দুষ্কর দৃশ্য ছিল আমার জন্য তখন। বাবাকে তখন যা বলতাম আমার কথা মতো উনি তাই নিতেন। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে এসব সবার মতো আমারও বিশাল পরিবর্তন হয়েছে বা দিনকে দিন হচ্ছে। একই জিনিস যা আমার কাছে সহজলভ্য একটু হাত বাড়ালে বা যা প্রতিনিয়ত দেখে অভ্যস্ত তাতে ঠিক আগের মতো অনুভূতি কাজ করে না।

সে অনুভূতি দিন কে দিন ক্ষীণ হতে থাকে। প্রকারন্তরের ফলে আমাদের মনে মধ্যে, আমাদের অজান্তেই নতুন কোনো একটা জিনিস আমাদের ভালো লাগা শুরু করে, যা তেমন একটা সহজলভ্য নয় এবং যা বর্তমানে আপনার আয়ত্ত্বে আনা ভীষণ কঠিন। কিন্তু সে জিনিসটা যদি আপনি পেয়ে তার রেশ কাটতে না কাটিতেই নতুন আরেকটি বাসনা মনের মধ্যে জাগা শুরু করবে আর এটাই স্বাভাবিক।

কৈশোরে পদার্পণ করা ছেলে সিফাত, তার মায়ের সাথে ভালোই সময় কাটছিলো। এ ধরণীতে তার মা ছাড়া আপন বলতে আর কেউই ছিল না। হঠাৎ মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কারনে মানে ব্রেন স্ট্রোকজনিত কারনে তার মা তাকে একা রেখে পরপারে চলে গিয়েছিল এবং এরপর থেকে সে আরও একটা হয়ে যায়। জীবন হঠাৎ তার স্থবির হয়ে যায়। প্রিয় মানুষটির জন্য বহু রাত-দিন চোখের জল ফালায়। কিন্তু তার মা ত আর ফিরে আসবে না, যা অসম্ভব।

সে ছেলে কি তার শৈশবে কখনো ভেবেছিলো, তার একমাত্র আপনজন তাকে ছেড়ে এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবে? তাকে একা রেখে চলে যাবে? অবশ্যই না, কারন শৈশবে সে তার মায়ের সাথে বেড়ে উঠার কারনে কখনো যে তার মাকে ছাড়া একদিন থাকতে হবে তা একবারের জন্যও ভাবে নি। জীবনের প্রকারন্তরে অনেক কিছুর প্রকারন্তর ঘটে। আর তা মেনে নিয়ে আমাদের জীবন চলতে হয় বা তা মেনে নিয়েই আমাদের জীবন চলতে হবে। এ বিনশ্বর সত্য যত তাড়াতাড়ি মানা সম্ভব, ততই উত্তম।