ঘাস ফড়িং এর গল্প।

in BDCommunity3 years ago

image

pexels-photo-462030.jpeg

পর্ব -2: ঘাস ফড়িং এর গল্প।

তিথির কলেজের প্রথম দিন। তিথি প্রথম থেকে একটু ভয় পাচ্ছিল। কারণ তিথি আগে থেকেই শুনেছে এখানে নাকি প্রতিটি ক্লাসে ছেলের তুলনায় মেয়ের সংখ্যা খুবই কম। খুব বেশি হলে একটি ক্লাসে মেয়ে থাকে চার থেকে পাঁচজন । তিথি ছোটবেলা থেকেই গার্লস ইস্কুলে পড়াশোনা করেছে একদম এসএসসি পর্যন্ত। যার কারণেই তিথির মনের মধ্যে একটু বেশি ভয় ছিল যে কিভাবে সে সবার সাথে মানিয়ে চলবে। যার কারণে তিথির যখন প্রথম সেমিস্টার শুরু হয় তখন তিথির মা তাকে নিয়ে যেত আবার ক্লাস শেষ হলে নিয়ে আসত। কিন্তু তিথির বাসা থেকে তিথির কলেজ টা একটু দূরেই ছিল। তাই এভাবে তিথি মা প্রতিদিন যাওয়া আশাটা একটু কষ্টকর হয়। তাই তিথি চেষ্টা করল একাই চলাফেরা করার। তিথির প্রথম সেমিস্টারের তেমন বন্ধু কেউ হয়না। কারণ তিথি ছিল খুব ভীতু প্রকৃতির।

সবার সাথে একটু সময় নিয়ে মেলামেশা করতো। কলেজে গিয়ে মেয়েদের সাথে চুপচাপ বসে থাকতো এবং ক্লাসের সময় শুধু ক্লাস করে আবার বাড়ি ফিরে আসতো। কিন্তু একজনের সাথে তার ভালই বন্ধুত্ব হয়ে। মেয়েটির নাম ছিল স্বপ্না। তিথির সাথে সপ্নারি প্রথম বন্ধুত্ব হয়। খুব সাধারণভাবে তিথির কলেজের এক বছর পার হয়ে যায়। এক বছর শেষ হওয়ার পরেই তিথি যে গ্রুপে ছিল সেটার বদল ঘটে। হঠাৎ করেই শোনা যায় যে তিথির গ্রুপ পরিবর্তন হয়। পুরনো গ্রুপটি রেখে আবার নতুন গ্রুপে গিয়ে নতুন ভাবে সবার সাথে মিশতে হবে।

তখন তিথির একটু বিরক্তি অনুভব হয় কিন্তু যখন সে জানতে পারে তার প্রিয় বান্ধুবিও সেই একই গ্রুপে পড়েছে যার কারণে তখনই তিথি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন মানুষের সাথে নতুন সেমিস্টার শুরু হয়ে যায়। তিথি দেখতে পারলো যে এই সেমিষ্টারে যারা রয়েছে তারা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও বিশ্বাসে। তিথি কথা বলতে না চাইলেও অনেকেই এসে তার সাথে কথা বলতে চাই তো। এবং সেই ক্লাসের সব থেকে বেশি দুষ্টুমি করত একটি ছেলে। সেই ছেলের মাধ্যমে পুরো ক্লাসে আনন্দ থাকতো। ছেলেটি সবার সাথে এত ভালো বন্ধুত্ব ছিল কিন্তু তিথি কখন গিয়ে তার সাথে কথা বলেনি।

হঠাৎই একদিন সেই ছেলেটি তিথির সামনে বসল। কোন কথা ছাড়াই ডিরেক্ট তুই করে বলল। বলল কিরে তুই কার সাথে কথা বলিস না কেন আমাদের কি ভালো লাগেনা। আমরা কিন্তু বন্ধু হিসেবে বেশ ভালো। তোর নামটাই তো জানা হলো না এতদিনে। এত চুপচাপ থাক আর তো কিছু নেই আমরা সবাই এখানে বন্ধু। একবার আমাদের সাথে বন্ধুত্ব কর দেখবি তোর ভাল লাগবে। তিথি খুব স্বাধারণ ভাবেই তার কথার জবাব দিল। সেদিন তিথি ছেলেটির নাম জানতে পারলো। ছেলেটির নাম ছিল সিয়াম। সেদিন থেকে তিথি সিয়ামের সব কিছু লক্ষ্য করতো। তিথি দেখতো কি আমার সাথে যেমন ছেলেদের খুব ভালো বন্ধুত্ব তেমনি মেয়েদের ও। তিথি মনে মনে ভাবতো এমন বন্ধু পাওয়া আসলে হয়তো ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ তিথির অভাবে কখনোই কোন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল না।

সময় যেতে যেতে পৃথিবীর সাথে সিয়ামের একটা সময় খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সিয়ামের থেকে তিথি অনেক কিছু শিখে। যে মেয়েটা কখনো ক্লাস শেষে এক মিনিট ও দাঁড়া তো না। সে এখন ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা খেতে পছন্দ করেন। ক্লাস শেষে চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়ে সব বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত। তিথি জীবনের সবথেকে সুন্দর মুহূর্ত গুলো তখন কাটানো শুরু করে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভাজাপোড়া খাবার সবকিছু এখন তিথির অভ্যাস হয়ে গেছে। তখনি ক্লাস শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য বাস পেত না তখন হাঁটার সঙ্গী হত তিথির সাথে সিয়াম। যত দেরি হোক সিয়াম তিথিকে বাসায় দিয়ে তারপরে নিজের বাসায় আসতো। সময়টা খুব দ্রুত চলে যায় বন্ধুত্বের। তিথির এখন অনেক বন্ধু যারা তাকে হাসায় এবং যেকোনো সমস্যায় সাহায্য করে। তিথির বন্ধু বললে ভুল হবে সিয়ামের বন্ধু গুলো এখন তিথির বন্ধু হয়ে গেছে।

বন্ধুত্বের আনন্দে আরও একটা সেমিস্টার চলে গেল। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া শেষ হলে পৃথিবীর সব বন্ধুরা মিলে ভাবে আজকে চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়ে আড্ডা দিব। সবাই একসাথে পরীক্ষা শেষ করে হেঁটেই রওনা দিলো চন্দ্রিমার দিকে। হঠাৎ করেই তিনি লক্ষ্য করলো সিয়াম তাদের সাথে নেই। বন্ধুদের মধ্যে একজন সে আমাকে ফোন করে বলল তুই কোথায় আমরা তো চলে এসেছি। সিয়াম বললো এইতো আসছি। যখন তিথিরা গিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানে বসলো। তিথি দূর থেকেই লক্ষ্য করলো সিয়ামের হাতে অনেকগুলো লাল গোলাপ। সিয়ামের এসেই সবার সামনে তিথিকে লাল গোলাপ দিয়ে তিথিকে ভালোবাসার কথা বলল। তিথির কাছে সব কিছুই যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছিল। কারণ এভাবে আজ পর্যন্ত তিথিকে কেউ ভালোবাসার কথা বলিনি। পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে আনন্দময় অনুভূতি অনুভব হচ্ছিল। কিন্তু তিথির একটু মন খারাপ হলো কারন সিয়াম তিথির খুব ভালো বন্ধু। সবার সামনে তিথি কিছু বলতে পারলো না। শুধু এটাই বলল আমাকে একটু ভাবতে সময় লাগবে। কারণ তিথির কাছে ভালবাসা থেকে বন্ধুত্ব টাই ভালো লাগে।

তিথি সেদিন বেশ খুশি ছিল। কারণ তিথি ও সিয়াম কে পছন্দ করত। কিন্তু তাও তিথির মনে কিছু সংকোচ ছিল। পরের দিন যখন তিথি কলেজে গেল তখন সিয়ামের বন্ধুরা এসে বলল তুই এত ভাবছিস কেন। তুই আর সিয়াম বেস্ট জড়ি হবি । আর সিয়াম তোকে অনেক ভালোবাসে সেটা আমরা আগে থেকেই জানি তুই না করিস না। সিয়ামের বন্ধুরা তার সম্পর্কে আরো অনেক কিছু বললো। তিথি কে বলল তোর হাতটা কখনো সিয়াম মাঝপথে ছেড়ে দিবে না। এভাবেই শুরু হয় তিথির ভালোবাসার গল্প। তিথির জীবনে নতুন এক অধ্যায়ঃ হয়ে দাঁড়ায় সিয়াম। তিথি এভাবেই সিয়ামের সাথে সুন্দর সময় গুলো পার করতে থাকে।

___TO BE CONTINUED

Sort:  

Hi @shahinaubl, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON