“Homonyms:One million dollars”

in BDCommunity2 years ago

যদি দশ কোটি টাকা পেতাম

আমি ছোট থেকে অর্থের কাছ থেকে একটু দূরে থাকতাম।বাচ্চারা যখন স্কুলে ভর্তি হয় এর পর থেকে তাদের হাতে টাকা দিতে হয় টিফিন টাইমে কিছু খাওয়ার জন্য।অবশ্য অনেক মা-বাবা এর আগেই, তিন-চার বছরের বাচ্চাদের হাতে টাকা দেয় দোকান থেকে কিছু কিনে খাওয়ার জন্য।মা-বাবা কি আর এতো ছোট বাচ্চার হাতে টাকা দিতে চান!না চাইলেও বাধ্য হয়ে দিতে হয়,কারণ স্বাভাবিকভাবে বাচ্চারা এই "মজা" খাওয়ার জন্য টাকা দিতে আবদার করে।আর না দিলে কান্নাকাটি করে।কিন্তু আমার ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটতো সবসময়,হয়তো স্কুলে যাওয়ার সময় টিফিনে কিছু কিনে খাওয়ার জন্য আম্মা টাকা দিতে চাইতো কিন্তু আমি নিতাম না,আর যদি জোর করেও দিতো দেখা গিয়েছে টাকাটা খরচ না করে,সেটা বাসায় নিয়ে চলে আসতাম।

আমার বয়স যখন এক বছর তখন আব্বা দেশের বাহিরে চলে যান।তাই খুব ছোট থেকে আমাকে বাজার-সদাই করতে হয়।চার-পাঁচ বছর থেকেই বাজার করতাম।আম্মা সবসময় বলতো বাজার করে যে টাকা থাকবে সেটা দিয়ে কিছু খেয়ে আসবা।আমি কখনওই খেতাম না সেটা ফেরত নিয়ে এসে আম্মাকে দিতাম।আম্মা যখন পাশের বাড়ির অন্যান্য মায়েদের এসব বলতেন,তখন তারা বলতো, আমাদের সন্তানেরা টাকা না দিলে কান্নাকাটি করে,আর শাওনরে টাকা দিলেও নিতে চায় না, কি আজিব ছেলে!

একবার বাজার করতে যাওয়ার সময় দশ টাকার একটি নোট হারিয়ে ফেলেছিলাম।যখন বুঝতে পারি নোটটা আমার কাছে নেই,তখন কয়েক ঘন্টা যাবৎ সারা রাস্তা কয়েকবার খুঁজি,কিন্তু তাও না পাওয়াতে বাড়িতে এসে খুব কান্নাকাটি করি,কারণ আম্মার দেওয়া টাকা দিয়ে আমি বাজার নিয়ে আসতে পারিনি এই দুঃখে।দশ টাকা এখন হয়তোবা কিছু না,কিন্তু এই ঘটনাটা মনে পড়লে এখনও কষ্ট পাই।

লেখাপড়া করার ক্ষেত্রেও আমি সবসময় চেষ্টা করতাম কিভাবে বাড়ি থেকে টাকা নিতে না হয়।হয়তো খাতা শেষ,এখন বাড়িতে এসে আম্মার কাছে টাকা চাইতে হবে এর থেকে বড় মুসিবত আর ছিলো না।অবশ্য আমার শিক্ষার উপকরণের কখনও অভাব হতো না।আমার বোনেরা আমার দিকে খুব বেশি নজর রাখতো,আর সব সমস্যার সমাধান করে দিতো।

টাকার প্রতি আমার এই অনীহা বা আকর্ষণ না থাকার কারণ আম্মা আর আমার বোনেরা আমাকে ছোট থেকে শিখিয়েছেন কিভাবে সহজ-সরল জীবনযাপন করতে হয়।দুনিয়াবি আকর্ষণ মুক্ত জীবন যাপনের শিক্ষা আমাকে দেওয়া হতো যখন থেকে আমি অ,আ শিখা শুরু করেছি তখন থেকে।অবশ্য পরবর্তীতে আমি তাদের শিক্ষার উর্ধ্বে চলে গিয়েছি।তখন তারাই আমাকে টাকা খরচ করার কথা বলতো কিন্তু আমারতো এসবের প্রতি আকর্ষণ উবে গেছে ততদিনে।

যতই অর্থের আকর্ষণ না থাকুক তারপরও বেঁচে থাকতে হলে অর্থ প্রয়োজন হবেই।না খেয়েতো আর বাঁচা যায় না,আর খেতে হলে টাকার প্রয়োজন।এইযে ডাক্তারি পড়ছি এতেও টাকার প্রয়োজন,যদিও সরকার খরচ বহন করে,তারপরও কম হলেও বই-খাতা কিনার জন্য টাকাতো লাগেই।তার উপর আমি মানেতো শুধু আমি না,আমার পরিবারে আম্মা আছেন,বোনেদের যদিও বিয়ে হয়ে গিয়েছে তারপরও আছেন।আমার আব্বা বেঁচে নেই তাই কিছু না কিছু দায়িত্বতো আমার উপরও বর্তায় যে ভবিষ্যতে তাদের দেখাশোনা করার।

এখন কেমন হতো যদি আমাকে এক মিলিয়ন ডলার বা দশ কোটি টাকা দেওয়া হতো,তাহলে সেই টাকা দিয়ে আমি কিইবা করতাম,কিভাবে খরচ করতাম!
প্রথমেই বলেছি আমার নিজস্ব তেমন কোনো চাহিদা নেই,তারপরও সমাজে চলতে গেলে কিছু চাহিদা জোর করে বানিয়ে নিতে হয়,যেমন জোর করে আম্মা স্কুলে যাওয়ার সময় টাকা দিয়ে দিতেন।তবে কোনো কিছু খাওয়া-দাওয়া করে টাকা খরচ করার মতো আমার চাহিদা সত্যিই নেই এটা আমাকে দেখলেই বুঝা যায়।পোশাক পরিচ্ছদেও আমি তেমন টাকা খরচ করতে রাজি নই।বিলাসদ্রব্যতে তো আমি টাকা খরচই করবো না,এটাতো আমার কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয়।তাহলে এতো এতো টাকা কি করবো?

আরে এতো চিন্তার কিছু নেই,টাকা তো!এ ঠিকই খরচ হয়ে যাবে।
আমার দাদার তিন-চার বিঘা ফসলি জমি ছিলো,পরবর্তীতে আমার কাকা এগুলো বিক্রি করে দেন।তো টাকা পেলে আমি প্রথমেই ঐ জমিগুলো আবার আমাদের করে নিবো,এখানে হয়তো পঞ্চাশ লাখের মতো খরচ হবে।আম্মার বয়স হয়েছে,এখনও গ্রামের বাড়িতে খুব কাজ করেন তিনি,বড় বাড়ি গাছগাছালি আছে,হাঁস মুরগি,ছাগল এসবের দেখাশোনা।কিন্তু আমার খুব শখ,আম্মা বসে বসে শুধু এখন সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করবেন।তার জন্য একটা দালান ঘর করবো,আর আমাদের জায়গার সীমানা বরাবর "বাউন্ডারি" করে ফেলবো,সাথে আব্বার কবরের চারপাশে "বাউন্ডারি" করবো।দালান ঘর দরকার কারণ,আম্মা এমনিতে ঘরে বসে থাকতে চান না,শুধু কাজ করেন,অবশ্য আমাদের সীমানার বাহিরে যান না,কিন্তু তার দালান ঘরের খুব শখ,দালান ঘর হলে হইতোবা তিনি ঘরে বসে বেশি বেশি ইবাদত করবেন।এখানে খরচ হয়ে যাবে পঁচিশ লাখ টাকা।

আমার তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট যে,সে মালয়েশিয়ায় থাকে,রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে তার।করোনার কারণে ব্যবসায় ক্ষতি হয় এবং বিরাট আকারের ঋণ নিতে হয় তা সামাল দিতে।তার ঋন পরিশোধ আর ব্যবসাটা ভালোভাবে দাঁড় করানোর জন্য তাকে পঞ্চাশ লাখ টাকা দিবো যদি দশ কোটি টাকা পাই।

আমার বোনদের মধ্যে মেজু যে,সে ঢাকায় থাকে।স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য শহরবাসীর মতো বাসা ভাড়া করে থাকে স্বামী সন্তান সহ।তার কাছে যখন যাই,সে প্রায়ই বলে তার শখ ঢাকা শহরে ছোটখাটো একটা বাড়ি করা।ভাড়াবাসায় থাকতে সে পছন্দ করে না।সে খিলক্ষেত এলাকায় থাকে ঐখানে একটা জায়গাসহ বাড়ি করতে এক কোটি টাকার মতোতো লাগবেই।

আমরা বাড়িতে আসা যাওয়া স্বাভাবিকভাবে বাস দিয়েই করি।কিন্তু এইবার ঈদের পর গ্রাম থেকে শহরে আসি মাইক্রোবাস ভাড়া করে।তো মেজু আমাকে বলছিলো,শাওন দেখেছিস মাইক্রোবাসে কতো কম সময়ে বাড়ি থেকে আসা যায়,তুই ডাক্তার হওয়ার পর একটা গাড়ি কিনলে আমরা সহজে যাওয়া আসা করতে পারবো।তো মেজুকে একটা গাড়ি কিনে দিবো।এখানেও পঁচিশ লাখ টাকা খরচ হবে,মোট দুই কোটি টাকা খরচ হলো।

সবার বড় দিদি,দিদির হয়তো শহরে জায়গা,বাড়ি শীগ্রই হয়ে যাবে।কিন্তু দিদির ইচ্ছা একটু শহর থেকে বাহিরে একটা বাগান বাড়ি করার।দালান ঘর,ঘরের চারপাশে অনেক খোলা জায়গা,বাগান,গাছগাছালি,পুকুর।শহর থেকে বাহিরে শহরের আশপাশে এমন বাড়ি বানাতে হয়তো এক কোটি টাকা খরচ হবে।

আমি যেহেতু ডাক্তারি পড়ছি,পরবর্তীতে ডাক্তার হবো।তাই গ্রামে একটা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা এটা আমার জন্য জরুরি।গ্রামের মানুষকে যাতে চিকিৎসার জন্য শহরে আর যেতে না হয়,তারজন্য একটা ভালো মানের হাসপাতাল তৈরি করবো,যেখানে দরিদ্র মানুষরা বিনামুল্যে চিকিৎসা নিবে আর জরুরি অবস্থা ব্যতীত ধনীদের প্রবেশ নিষেধ থাকবে।তার সাথে হাসপাতালের প্রচার আর অনলাইনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভিডিও বানানোর ইচ্ছা আছে আমার।যাতে মানুষখুব সহজে আমার সেবার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।ভালো মানের হাসপাতাল করতে এবং চালাতে হয়তো তিন কোটি টাকা লাগবে।

আর মাত্র দেড় কোটি টাকা রয়েছে।আমার আবার ধর্মশিক্ষাতে ঝোঁক বেশি।আমার ধর্ম যেহেতু ইসলাম,আর সঠিক ইসলামের শিক্ষা পেতে পারে এমন প্রতিষ্ঠানের খুব অভাব,বিশেষ করে মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।তাই সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান বিতরণ করে এমন দুটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো,একটা ছেলেদের জন্য আরেকটা মেয়েদের জন্য।এখানে এক কোটি টাকা চলে যাবে।

আর যে পঞ্চাশ লাখ টাকা থাকবে, সেখান থেকে দশ লাখ করে,আম্মা,ছোটো,মেজু,দিদিকে দিয়ে দিবো তাদের ব্যক্তিগত খরচের জন্য।

আর মাত্র দশ লাখটাকা রয়েছে,এই দশলাখ টাকা রাখবো আমার জন্য।আমার অবশ্য তেমন খরচ নেই,মেডিকেলের মেসে থাকি টাকা দেওয়া লাগে না,মাস শেষে খাবার বাবধ কিছৃ খরচ হয়।মেডিকেলের বই এবং জিনিসপত্রের দাম অবশ্য বেশি,কিন্তু আমার এসব কিনতে হয়না,বড় ভাইরা ভালোবেসে নিজেরগুলো দিয়ে দেন,সেগুলো দিয়ে দিব্যি আমার পড়ালেখা চলে যাচ্ছে।এভাবেই আমি অনেক অনেক সুখে আছি।

তবে একটা বিয়ে করে বউটাকে গ্রামে আম্মার কাছে রাখার ইচ্ছা আছে,আম্মা একদম একা একা থাকেন,আর কেউ নেই।আজকাল বিয়ে-সাদির বেপার একটু টাকাতো খরচ হবেই,আমার বিয়েতে আমার বউ এর বাবার এক পয়সাও খরচ হবে না কিনা।তার উপর বউকে লালন-পালন করতেওতো কিছু টাকা লাগবে।তার পিছনে বাকি এই দশ লাখ টাকার নয় লাখ টাকা ব্যয় করবো।আর বাকি এক লাখ টাকা ডাক্তারি পাশ করার আগপর্যন্ত এই তিনবছরের খাবার খরচ,খাতা কলমের খরচ।
আয়হায় সবটাকাতো তাহলে খরচই হয়ে গেলো।বলেছিলাম না,টাকাটা ঠিকই খরচ হয়ে যাবে।যতই বলি টাকার প্রতি আকর্ষণ নাই,তবুও টাকাটা খরচ করে ফেললাম।

Picsart_22-07-23_02-46-16-460.jpg

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL