"ঋণী থাকা উচিত নয়"

in BDCommunity2 years ago

অর্থের অভাবতো জীবনে চলার পথে মাঝেমধ্যে হয়েই থাকে।তখন মানুষ তার আশপাশের পরিচিতদের কাছে,তাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করার আবেদন জানায়।এটাকে "ঋণ", "কর্যা" ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে।তবে কারো কাছ থেকে ঋণ নেওয়া খুবি বিপদজনক একটি বিষয়।ঋণ সময়মতো পরিশোধ করে দিতে পারলেতো ভালো,কিন্তু না পরিশোধ করতে পারলেই বাঁধে বিপত্তি।ঋণদাতার সাথে ঋণগ্রহীতার যে সম্পর্কই থাকুক না কেনো,ভাই,বোন,চাচা,মামা কিংবা বন্ধু,ঋণ নেওয়ার পর সময় মতো ঋণ পরিশোধ না করার দরুণ ঐ সম্পর্কের মাঝে ধরে ফাটল।ঋণদাতা তার নিজের অর্জিত টাকাতো আর এভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেলে রাখবে না!তাই সে যখন চাপ দিতে থাকে তার টাকাটা ফেরত দেওয়ার জন্য,আর ঐদিকে ঋণগ্রহীতা হয়তো কিছুতেই টাকা যোগাড় করতে পারছে না,এই লেগে গেলো ঝামেলা।আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতারা টাকা নেওয়ার পর তাদের ভাবখানা এমন হয় যে ঐ টাকা বোধহয় আর ফেরত দিতে হবে না,এটাকে একবার নিজের করে পেয়েছিতো পেয়েছি আর ফেরত দিবো না।

এই ধরনের ফেরত না দেওয়ার মনমানসিকতা থাকলেতো আরও বড় ঝামেলা,ঐ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা আর ঋণদাতার সম্পর্ক তো ভাঙবে ভাঙবেই তাদের মাঝে এক বিরাট দাঙ্গা হাঙ্গামা বেধে যাবে।আবার অনেক ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা হয়তো টাকাটা ফেরত দিতে তীব্র ইচ্ছুক কিন্তু সময়ের গড়মিলের কারণে দিতে পারছে না,সেক্ষেত্রে হয়তোবা ঋণদাতা আরও একটু সময় বেশি দেয়।কিন্তু যতদিন পর্যন্ত সে তার টাকা ফেরত না পাবে,তার কাছে যে ঋণী, তাকে ভালো লাগবে না,তাকে দেখলেই মনে হবে ওর কাছেতো আমি টাকা পাই,কিন্তু দিচ্ছে না।তবে এক্ষেত্রে যদি আশা থাকে টাকাটা ফেরত পাওয়ার কিন্তু সময় বেশি লাগছে এই ক্ষেত্রে হয়তো ঋণগ্রহীতাকে এতো বিরক্ত লাগবে না।

কিন্তু যদি কোনো আশায় না থাকে টাকাটা ফেরত পাওয়ার, মানে টাকাটা আর দিবে না বলে ঘোষণা করে দিয়েছে,তাহলেতো ঐ ঋণগ্রহীতা ঋণদাতার কাছে চোখের বালি হয়ে যাবে।যদি কেউ দাবি ছেড়ে দেয় তাহলে ভিন্ন কথা,কিন্তু মনের মধ্যে এটা ঘুরাতে থাকলে ঋণগ্রহীতাকে যখনই সে দেখবে বা কোনো কারণে তার কথা মনে পড়বে তখনই রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।

এসব ক্ষেত্রে অর্থ আদান-প্রদান হলেও অনেক ক্ষেত্রে অর্থ মূল বিষয় থাকে না।কারণ ঋণদাতা যাকে ঋণ দিলো,তাকে বিশ্বাস করেই দিয়েছিলো যে টাকাটা ফেরত পাবে,কিন্তু যখন ফেরত পেলো না,তখন তার বিশ্বাসটা ভেঙে গেলো।বিশ্বাস ভাঙার কষ্ট জঘণ্য।

আমার বোনরা সবসময় টিউশনি করাতো।তো টিউশনি করালে এমন হয় যে,অনেক সময় অনেক অভিভাবকরা টাকা দেয় না,হয়তো শেষের কয়েক মাসের টাকা না দিয়েই চলে যেতো,আর আসতো না।টিউশনির টাকা শিক্ষকরা তেমন একটা চায় না,এটা নিজে সচেতন হয়ে দিয়ে দিতে হয়।এখন আমিতো দেখতাম,আমার বোনরা কতো কষ্ট করে শিক্ষার্থীদেরকে পড়াতো।আর মাস শেষে টাকাটা দরকার বলেই,তারা নিজেরা শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায়ও, নিচের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াতো,এখন যদি সেই টাকাটাই না পাওয়া যায়,তাহলেতো মনে কষ্ট লাগবেই।যদি এমন হয়,অনেকের টাকার সমস্যা থাকে,পারিবারিক টাকার সমস্যা, তারা যদি মাঝেমধ্যে কয়েকমাসের টাকা না দিয়ে চলে যায়,তাহলে হয়তো তেমন খারাপ লাগে না।কিন্তু যাদের টাকার সমস্যা থাকে না কিন্তু তার পরও শিক্ষকের টাকাটা না দিয়ে চলে যায় তাদের প্রতি একটু খারাপ লাগা কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক।

এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে,যারা ছোটোর বেতন দিতো না,মানে শেষ কয়েকমাসের টাকা জমাতো একসাথে দিবে বলে,পরে কয়েকমাস পর থেকে আর পড়তেও আসে টাকাও দিয়ে যায় না।মানে টাকাটা আর দিবে না এটাই তাদের নিয়তে ছিলো। কষ্ট করে টিউশনি করানোর পরও টাকা না পাওয়াতে আমার বোনেরতো নিশ্চয়ই কষ্ট লেগেছিলো।তো যাইহোক,আমিতো জানতাম কে কে টাকা না দিয়েই চলে গিয়েছিলো,তাদের দেখলেই আমার খারাপ লাগতো,তাদেরকে ধোঁকাবাজ মনে হতো।ছোটো যখন গ্রামে থাকতো তখন যে টিউশনি করতো,সেটা আজ থেকে তের-পনের বছর আগের কথা।তখন আমি অনেক ছোটো ছিলাম,কিন্তু আমি এখনও যখন গ্রামে যায়, তখন ঐ সব শিক্ষার্থী যারা ছোটোর টিউশনির বেতন দেয়নি, তাদের দেখলে এখনও আমার মনে হয় এরাতো তার শিক্ষকের সাথে ধোঁকাবাজি করেছে।এমনও দেখা যায়,এদের মধ্যে অনেকে এখন অনেক বড় ব্যবসায়ী,হয়তো কোটি কোটি টাকা,কিন্তু গ্রামের বাজারে তাদের যখন আমি দেখি,আমার কাছে তারা খুব ছোট,আমার বোনের "টাকা মেরে দিয়েছিলো" তারা।

এই ঘটনা থেকে আমি এটা বুঝি যে,কারো কাছে ঋণী থাকা একদম উচিত নয়।যত বড় পর্যায়েই আপনি উঠে যান,কিন্তু আপনি যার কাছে ঋণী থাকবেন তার কাছে আপনি খুবি ছোট থাকবেন,মানুষ হিসাবে ছোটো মানসিকতার।

2014-12-04-Tickets.jpg