এমন কোনো মা-বাবা নেই যারা চান না তাদের সন্তান প্রতিষ্ঠিত হোক।মা-বাবা প্রথম যেটা চান সেটা হলো সন্তান যাতে শিক্ষিত হয়।নিজে হয়তো পড়ালেখা করতে পারেনি,যেকোনো পেশায় রয়েছেন,কিন্তু নিজের সন্তানকে ঠিকই পড়ালেখা শিখাতে চান।একজন রিক্সাওয়ালা কখনও চাবেন না,তার সন্তান তার মতো রিক্সা চালাক,তিনি চাবেন তার সন্তান পড়ালেখা করুক।যাতে বড় হয়ে তার মতো কষ্ট করতে না হয়।আসলে পড়ালেখা করুক এটা চাওয়ার কারণ হচ্ছে,পড়ালেখাই একমাত্র তুলনামূলক সাশ্রয়ী মাধ্যম যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি সমাজে ভালো অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।বেপারটা এমন নয় যে পড়ালেখা করতে অর্থের প্রয়োজন হয় না।কিন্তু এটাতে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অন্যান্য মাধ্যম,যেগুলোর মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় সেগুলো থেকে কম।
ধরা যাক কোনো এক গরিব পরিবারের ছেলে সন্তান,সে ইচ্ছে করলেই একটি সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে,প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করতে পারে।পরবর্তীতে হয়তো এই শিক্ষার মাধ্যমে সে সম্মানজনক কিছু একটা করে খেতে পারবে।কিন্তু সে যদি পড়ালেখা না করে,তাহলে তার জীবিকা নির্বাহের কোনো সম্মানজনক পেশা সে গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকবে না।স্বাভাবিকভাবে দিনমজুরি বা এই ধরনের কিছু একটা করে জীবিকানির্বাহ করতে হবে।কারণ তার বাবারতো টাকা নেই যে সেই টাকা দিয়ে সে ব্যবসা করবে বা জমিও নেই যে সে জমিতে সে চাষ করবে।তারমানে দেখা যাচ্ছে,সম্মানজনক জীবিকার একমাত্র পথ হচ্ছে শিক্ষা অর্জন করা।প্রাতিষ্ঠানিক হোক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতেই হবে।অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে ইদানীং সম্মানজনক জীবিকা অর্জন করা যাচ্ছে "অনলাইন" এ বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে।
যাইহোক এসব কারণে যেকোনো মা-বাবা চান তার সন্তান যাতে শিক্ষিত হয়।এই চাওয়াটা সন্তনের ভালোর জন্য,কিন্তু এই চাওয়াই তাদের জন্য একসময় কাল হয়ে দাঁড়ায়।
জীবনের দুটি সময় মানুষ অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়।একটাতো জন্মের পর,মায়ের উপর নির্ভরশীল থাকে বাচ্চা।দ্বিতীয় হচ্ছে বৃদ্ধ বয়সে,যখন মানুষ শারীরিক,মানসিক দুইভাবেই বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়।আর ঐ বয়সটাতে বিভিন্ন রোগ এসে শরীরে বাসা বাঁধে।এসব বিভিন্ন কারণে বৃদ্ধ বয়সের মানুষের সেবা করার জন্য কেউ থাকতে হয়।
কিন্তু মা-বাবাতো চেয়েছিলেন ছেলে-মেয়েরা লেখা পড়া করুক,প্রতিষ্ঠিত হোক।তাদের চাওয়া অনুযায়ী হইতো সন্তান লেখাপড়াও করেছে,প্রতিষ্ঠিতও হয়েছে।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারা একেকজন একেকজায়গায় চলে গিয়েছে নিজের সুবিধা অনুযায়ী,মা-বাবা হয়তো পড়ে রয়েছে তাদের পুরানো জায়গায়।দেখা যায়,অনেক ক্ষেত্রে সন্তানেরও দোষ থাকে না,তারা হয়তো যে উপার্জন করেন তাতে শুধু নিজে চলার মতো হয়,কিন্তু এর উপরে কাউকে চালানোর ক্ষমতা তার নেই।কিন্তু ছোটকালে মা তো ঠিকই নিজে না খেয়ে তার সন্তানকে খাইয়েছেন,এমন ঘটনা কোটি কোটি।কিন্তু সন্তান তা পারে না,আগে নিজে খেয়ে তার উপরে যদি কিছু থাকে তাহলে মা-বাবাকে দেখাশোনা করতে কোনো সমস্যা নেই।আবার,অনেকে আছেন যে হয়তো অর্থের অভাব নেই,মা-বাবাকেও অর্থ দিয়ে থাকেন।কিন্তু বৃদ্ধ মা-বাবারতো অর্থের থেকে বেশি প্রয়োজন তাদের সাথে সময় কাটানোর একজন মানুষ বা সেবা করার একজন মানুষ,সেটার চাহিদা এখন পূরণ কে করবে।অর্থ দিয়ে কাজের লোক রেখে দিবে?না আজকালতো তাও পাওয়া যায় না,আর পাওয়া গেলেও বিশ্বস্ত পাওয়া যাবে কোথায়?দেখা যায় তারা সেবা করার বদলে আরও অগোচরে অত্যাচার করে বেশি।আর বিশ্বস্ত পাওয়া গেলেও,নিজের সন্তান সামনে থাকলে যে সুখ,কাজের লোক সারাদিন সেবা করলেও তা কি আর পাওয়া যায়!
তার চেয়ে দেখা যায়,যেসব মা-বাবার সন্তান পড়ালেখা করতে পারেনি,তাদের অভাব অনটন থাকলেও তারা মা-বাবার কাছেই থাকে।মেয়েদের বিয়ে দিলেও, এলাকার বাহিরে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে না,যার কারণে মেয়েরা মা-বাবার বিপদে আপদে বাবার বাড়িতে চলে আসতে পারে যেকোনো সময়।যা কিনা শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত শহরবাসী বা প্রবাসী ছেলে-মেয়ের জন্য অসম্ভব।
না এর মানে এটা নয় যে,মানুষ তার সন্তানকে শিক্ষিত করবে না বা তাদের প্রতিষ্ঠিত করবে না।কিন্তু এটা বলার কারণ হচ্ছে, বর্তমান সমাজব্যবস্থার এটাই বাস্তবতা।আমাদের চারপাশে,আমাদের মাঝে এটাই ঘটছে,মা-বাবার প্রতি অবহেলা,হয়তো সুযোগের অভাবে, হয়তো বাধ্য হয়ে অবহেলা করতে হচ্ছে,তারপরও অবহেলাতো অবহেলাই।
Congratulations @shaonashraf! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 3500 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!