"কুধারণার কুফল"

in BDCommunity2 years ago

কারো সম্পর্কে সুধারণা পোষণের চর্চা আমাদের সমাজ থেকে এখন প্রায় উঠেই যাচ্ছে।খারাপ চরিত্রের অধিকারী কারো সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করাতো দূরের বেপার,ভালো চরিত্রের কারো সম্পর্কেও লোকে এখন সুধারণা পোষণ করতে পারে না।একটা উদাহরণ যা একজন ইসলামি বক্তার কাছ থেকে শুনেছি,ওনি বলছিলেন,
রাত্রিবেলা পুকুরঘাটে কেউ হাত-মুখ ধুচ্ছে,এটা দেখে এমন ভাবা যাবে না যে লোকটা হয়তো রাতে কোনো খারাপ কাজ করে এসে পরিষ্কার হচ্ছে বা চুরি করে এসে নিজেকে পরিষ্কার করছে,বরং এটা ভাবতে হবে যে লোকটা হয়তো তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য ওজু করছে।কিন্তু আজকাল মানুষ,কেউ যদি সত্যিই তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য ওজু করে,তাকেও ভেবে নেয়,বেটা নিশ্চয়ই চুরি করে এসেছে।

দুই বন্ধু একসাথে সিড়ি দিয়ে নামছে।সিড়ির শেষ মাথায় "সন্ধানী"র অফিস যেটা কিনা একটা রক্ত দানের প্রতিষ্ঠান।তো তারা দেখতে পেলো সন্ধানীর অফিসের ভিতর একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ঢুকলো এবং তারপর দরজা বন্ধ করে দিলো,অফিসে আর কেউ ছিলো না।এক বন্ধু বলে উঠলো,দেখ দেখ,এরা নিশ্চয়ই অসামাজিক কিছু করবে বলেই একা একা এখন এই রুমে ঢুকেছে।তো আরেক বন্ধু বললো,আরে না,মেয়েটা হয়তো রক্ত দিবে,শান্তিতে নিরিবিলিতে এখন রক্ত দেওয়ার জন্যই তারা রুমে গেলো।
এইযে দ্বিতীয় বন্ধুটা যে ধারণা করলো সেটা ঠিক হোক বা না হোক,এমন সুধারণা পোষণ করাই উচিত।এতে নিজের মনে একটা আলাদা শান্তি অনুভব হবে।

যারা মানুষের বেপারে নিজের মনে কুধারণা পোষণ করে রাখে,তাদের মনে কখনও শান্তি থাকে না।তাদের মনে চলতে থাকে,কে কোথায় কি খারাপ কাজ করছে,কে কোথায় কি গোপন পাপ করছে।অন্যের গোপন পাপের কথা চিন্তা করে করে মানুষ আজ ক্লান্ত।নিজে কোথায় কি অন্যায় করছে সেটা সে ভুলে যাচ্ছে।

একটা ঘটনা হয়তো কোনো একজন এমনঅবস্থায় দেখেলো,যেটাতে পরবর্তী ধাপে খারাপ কিছু ঘটার সম্ভবনা রয়েছে বা ভালো কিছুও ঘটতে পারে।এখন যদি সে চিন্তা করে খারাপ কিছু ঘটবে,তখন সারাক্ষণ তার মনে ঐটা নিয়ে চিন্তা চলতে থাকবে।কারণ খারাপ বেপার নিয়ে মন বেশি চিন্তা করতে পছন্দ করে।দেখা যাবে ঐদিনের কোনো কাজে মন বসছে না,এটা ভেবে যে ওরা না জানি ঐখানে খারাপ কি কি করছে,আমি এটা কার কাছে বিচার দিবো,আমি যদি কাউকে বলে দেই তবে কেমন হবে,কার কাছে বলবো,এসব হাজারো চিন্তা তার মাথায় ঘুরা ফিরা করতে থাকবে।তবে সে যদি দেখার সাথে সাথে ভালো কোনো ধারণা করতো।তাহলে এই বিষয় সেখানেই শেষ হয়ে যেতো,এটা নিয়ে আর মাথায় কোনো চিন্তা আসতো না।

দেখা গেলো,একটা মানুষ যার সাথে আমি কথা বলছি মহব্বতের সহিত,কিন্তু তার বেপারে আমার মনে কুধারণা রয়েছে।তখন ভিতরে এক, আর বাহিরে আরেক আচরণ করার জন্য,স্বাভাবিকভাবেই আমার মন দ্বিধাদ্বন্দের সমুক্ষীণ হবে,আর দ্বিধা মনের অশান্তির প্রধান কারণ।

কোনো একজন হয়তো গরিব ছিলো,হঠাৎ কিছুদিনের ব্যবধানে সে ধনী হয়ে গেলো।এখন বেশিরভাগ মানুষ চিন্তা করে যে সে নিশ্চয়ই কোনো অসৎ উপায়ে এ সম্পদের মালিক হয়েছে।তখন মনে হবে,আহারে সে এইভাবে দুইনাম্বারি করে এতো সম্পদের মালিক হয়ে গেলো,কিন্তু আমি হতে পারলাম না।এই যে এ থেকে সৃষ্টি হয়ে গেলো হিংসা।আর হিংসা তার হৃদয়কে জ্বালিয়ে দিবে।কিন্তু কেউ যদি এটা চিন্তা করে যে, সে হয়তো সৃষ্টিকর্তার প্রিয় সৃষ্টি তাই তাকে সৃষ্টিকর্তা দান করেছেন।তাহলে কিন্তু আর মনে কোনো খারাপ চিন্তা আসে না এবং নিজের মনও শান্ত থাকে।

কোনো ঘটনা সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করলে বা কারো সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করলেতো, ঐ যার সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করা হচ্ছে, তার কিছু যায় আসে না,তার কোনো ক্ষতিও হচ্ছে না, কিন্তু নিজের মনের শান্তিতেই ব্যাঘাত ঘটছে।আবার যদি এই কুধারণার কথা অন্য কাউকে বলে দেওয়া হয়,তখন সেটা আবার আরও বড় সমস্যায় পরিণত হবে।ঘটনা বা কথাটা যদি সত্য না হয়,তাহলেতো ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে অপবাদ দেওয়া হয়ে গেলো।আর অন্যের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়াতো অনেকবড় অন্যায়।তাই আমাদের অবশ্যই কুধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

IMG_20220731_021558.jpg

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL