কিছু মানুষ দেখা যায় যাদের স্বাস্থ্যের খুব খারাপ অবস্থা।একদম শরীরে মাংস নেই।সেই মানুষগুলোর বেশিরভাগের সমস্যা হচ্ছে খাওয়া-দাওয়াতে মন নেই,খাওয়া-দাওয়াতে অনিয়ম করে প্রচুর।আমিও সেইসব মানুষদের মধ্যে একজন।খাবার খাওয়ার বেপারে মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ম করি।স্বাভাবিকভাবে মানুষ প্রতিদিন তিন বেলা খাবার খায়।সকালে নাস্তা,দুপুরের খাবার আর রাতের খাবার।সকালের নাস্তা আটটা-নয়টার মধ্যে,দুপুরের খাবার দুপুর একটা-দুইটার মধ্যে, আর রাতের খাবার রাত নয়টা কিংবা দশটার মধ্যে।আমিও সবার মতো তিনবেলা খাবার খাই।কিন্তু আমার খাবার খাওয়ার যে রুটিন তা একদম ভিন্ন।সকালের হালকা নাস্তা আমি করি দুপুর দুইটার দিকে,দুপুরের খাবার খাই বিকাল পাঁচটাই আর রাতের খাবার খাই রাত একটার দিকে।আমার এই রুটিন আমি আবার প্রতিদিন অনুসরণ করি।এমন হয়না যে, আমি একদিন সকালের নাস্তা খুব তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলেছি।অর্থাৎ আমি নিয়মিত এইভাবেই খাবার খাই।
কিন্তু আমার খাবার খাওয়ার এই যে রুটিন এটা নিঃসন্দেহে একটা অনিয়ম।কারণ রাত একটাই খাওয়ার পর আবার পরের দিন দুপুর দুইটাই নাস্তা করলে পুরো তেরো ঘন্টার বিরতি চলে আসে খাবার খাওয়ার মধ্যে।অথচ আমাদের পাকস্থলীতে খাদ্য তিন-চার ঘন্টার বেশি থাকে না,হজম হয়ে যায়,যত বেশিই খাওয়া হোক না কেনো।সুতরাং এর পর থেকেই পাকস্থলীতে খাবার সরবরাহ করার প্রয়োজন পড়ে।আর তখন যদি খাবার দেওয়া না হয়,সেটা নিশ্চিতভাবে শরীরের জন্য খারাপ।সুতরাং খাবার খাওয়াতে এতো দীর্ঘ বিরতি দেওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।আর যেটা ক্ষতিকর সেটা কখনই নিয়ম হতে পারে না,এটা অবশ্যই অনিয়ম।তাই বলা যায়,খাবার খাওয়াতে আমি অনিয়ম করি।কিন্তু এই অনিয়মটা আমি নিয়মিত করি বিধায় আমি সবসময় এটাকে বলি "নিয়মিত অনিয়ম"।আমার খাবার খাওয়ায় এই নিয়মিত অনিয়ম করার মতোই আমাদের সমাজ ব্যবস্থা,দেশের অনেক " সিস্টেমে" চলছে নিয়মিত অনিয়ম।
এই চাকরির ক্ষেত্রেই ধরা যাক,সরকারি চাকরি পেতে হলে টেবিলের নিচ দিয়ে টাকা দিতে হবে এটা সাধারণ কথা,হোক সেটা যত ছোট পদেরই।আমাদের নানুবাড়ির সাথেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।তার দপ্তরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।এই দপ্তরির সাথে কথা বলে জেনেছিলাম সে আট লাখ টাকা দিয়ে এই চাকরিটা নিয়েছে,অথচ তার মাসিক বেতন মাত্র আট হাজার টাকা।অথচ এই চাকরির জন্য যেই যোগ্যতার দরকার সেটা থাকাই এই চাকরি পাওয়ার শর্ত হওয়া উচিত ছিলো মাঝখান থেকে মোটা অংকের টাকাটা কোথা থেকে চলে আসলো!এটা অবশ্যই দুর্নীতি বা অনিয়ম।এই অনিয়ম টা এখন অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।তাই এটা এখন নিয়মিত অনিয়ম।
তারপর গ্রামের দিকে মেয়ে বিয়ে দিতে হলে জামাইকে "কিছু" দিতে হবে এটাই এখন স্বাভাবিক বেপার।কিছু না দিলে বিয়ে আর হয় না।যদিও এটাকে দেশীয় আইনে অপরাধ হিসাবে ধরা হয়।কিন্তু প্রতিনিয়ত হচ্ছে।এটাও একটা নিয়মিত অনিয়ম।
তারপর বাংলাদেশের যেকোনো সরকারি অফিসে কোনো কাজের জন্য যাওয়া হলে সেটা বাড়তি টাকা ছাড়া করানো যাবে আজকাল মানুষ এটা নিজের কল্পনাতেও রাখে না।হয়তো কেউ পাসপোর্ট করতে পাসপোর্ট অফিসে যাচ্ছে,একটা পাসপোর্ট করার সরকারি ফি যে কতো সেটার হিসাব সাধারণ মানুষ জানেই না,জানার প্রয়োজনবোধই করে না।কারণ সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে কাজ করানো গেলেতো মানুষ সেটা জানার চেষ্টা করতো,কিন্তু তারাতো কাজ করাতে বাধ্য হয় দালালদের মাধ্যমে।আর দালালরা কতো টাকা নিবে তাই শুধু জনসাধারণ জানে।ঠিক তেমনি সরকারি বিভিন্ন অফিস বা বড় কোনো কাজ বা এসব ক্ষেত্রে কাজ হাসিল করাতে হলে বাড়তি টাকা দিতে হবে এটা মানুষ খুবি সহজভাবে মেনে নিয়েছে।সেই একি কথা নিয়মিত অনিয়ম।
এইরকম দেশের কিংবা সমাজ ব্যবস্থার হাজারও বিষয় রয়েছে যেটা এখন "নিয়মিত অনিয়ম" এ পরিণত হয়েছে।মানুষ এখন আসল নিয়ম কোনটা ছিলো সেটাই ভুলে যাচ্ছে,অনিয়মটাকেই এখন নিয়ম বলে ধরে নিচ্ছে।আর যে সত্যিকারের নিয়ম পালন করতে যাচ্ছে,তাকে নিয়ম ভঙ্গকারীর তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।আমি চেষ্টা করি আমার খাওয়া দাওয়ার বেপারে অনিয়মটাকে অনিয়মিত করতে।কিন্তু তা নিয়মিতই থেকে যাচ্ছে যেমনটা আমাদের দেশীয় সিস্টেমের অনিয়মটা নিয়মিত হচ্ছে।
একজন ভবিষ্যৎ ডাক্তারের খাবার রুটিন যদি এমন হয়। দেশের কথা তো বাদই দিলাম। 😁😄🤣
কি আর বলবো,ডাক্তারি পড়তে এসে দেখি সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যেসব নিয়ম আছে,ঐসব ক্ষেত্রে ডাক্তাররাই সবচেয়ে বেশি অনিয়ম করে।এদের রুটিনের কোনো ঠিক নেই।🤭
Hi @shaonashraf, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON