বর্তমান সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু হচ্ছে মোবাইল ফোন।আমরা যারা শহরে বাস করি তাদের অনেকেই টয়লেটে গেলেও এই বস্তুটা কে বহন করি। মোবাইল ফোন কি? সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর। এটি একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা যা শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে। এটি আমরা কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করি? এবারের উত্তর টা এতো সহজ নয়।যদি ও এটি একটি যোগাযোগ মাধ্যম তারপরও এর ব্যবহার নানাবিধ।ঘড়ি,টেলিভিশন, রেডিও, নিউজ পেপার,বই,কলম,খাতা,ডাক বক্স,ক্লাসরুম,রান্না ঘর,ট্রেনিং সেন্টার সবি মোবাইল ফোনে। আপনি চাইলে আপনার কর্মস্থলও হতে পারে মোবাইল ফোন।সমাজ ব্যবস্থার সর্ব নিম্নস্তরের পেশাজীবি মেথর থেকে সর্বোচ্চ স্তরের পেশাজীবি সচিব পর্যন্ত সবার হাতে বর্তমানে থাকে স্মার্টফোন। দামে ভিন্নতা থাকলেও নাম কিন্তু একি।
আবার এই স্মার্টফোনের কল্যাণে বাদাম ওয়ালা থেকে আইসক্রীম ওয়ালা সবাই সেলিব্রিটি।এই মোবাইল ফোনে এমন কিছু সহজলভ্য মাধ্যম আছে যে মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে তারা সহজেই অনেক মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে রাতারাতি বনে যায় তারকা।
দিন দিন হয়তো নতুন অনেক কিছুই আবিষ্কার হচ্ছে যেগুলো দেখে আমরা রীতিমতো হতবাক হয়ে পরি,আরে এটা কিভাবে সম্ভব!কিন্তু তারপরও মোবাইল ফোনকে বা দূরালাপনি যন্ত্রটিকে আমার এখনও অতিআশ্চর্যের বলে মনে হয়।আমি এখান থেকে কথা বলছি,আর আমার বোন যে কিনা সেই প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দূরে মালয়েশিয়ায় বসবাস করে সে আমার কথা কিভাবে শুনতে পায়!বেপারটা ভাবলে আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগে সেই ছোট থেকে।এখন হয়তো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানি,শব্দ তরঙ্গ এই সেই,কিন্তু তবু এসব ব্যাখ্যা মনের সেই আশ্চর্য হওয়ার বেপারটাকে তেমন দমন করতে পারে না।
এখনতো ভিডিও কলে সরাসরি দেখা যায়,পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে বসে থাকা একজনকে মনে হয় এই যে আমার সামনে বসে আছে।বিজ্ঞান,মোবাইল ফোন,ইন্টারনেট এতোটা আশ্চর্যজনক কাজ করে যাচ্ছে।
তবে বেপারটা এটা নয় যে শুধুমাত্র একটি মোবাইল ফোন মানুষকে এতো কিছু দিচ্ছে!ঐ ফোনে যদি ইন্টারনেট কানেকশন না থাকে তাহলে সেই ফোনে করার তেমন কিছু থাকবে না।আবার যদি সিম কার্ড না থাকে তাহলেতো সেটা একদম একটা অকেজো মেশিন।তবে ইন্টারনেট কানেকশন আর মোবাইল ফোন মিলে যে সমাহার সৃষ্টি হয় সেটাতে বর্তমানে পুরো পৃথিবীটাকে বন্দি করে রাখা যাবে।এই ফোনে সবকিছু করা যায় সব।
মানুষ এখন আর টিভি দেখে না,কারণ টিভির বিকল্পরূপে এখন তারা মোবাইল ফোন কে ব্যবহার করে।মোবাইল ফোনেই এখন মানুষ নাটক,সিনেমা,গান,খেলাধুলা,খবর সব কিছু দেখে।হয়তো সে রাস্তায় বাসে ভ্রমণ করছে,এমন সময় তারে মনে স্বাদ জাগলো একটা সিনেমা দেখবে।আগে একটা সময় ছিলো যখন তাকে সেই সিনেমা দেখার জন্য সিনেমা হলে যেতে হতো,তারপর যখন টেলিভিশন আসলো তখন ঘরে বসে সে সিনেমা টা দেখার সুযোগ পেলো।আর এখন তার বাসে বসে মন চেয়েছে সিনেমা দেখতে তখনই মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে ডাটা কানেকশন চালু করেই দেখা শুরু করে দিতে পারবে।
আগে লেখকরা খাতা কলম নিয়ে দিনরাত টেবিলে পড়ে থাকতো আর লিখালিখি করতো।এখন আর কেউ কাগজ কলমে লিখে না,হয় কম্পিউটারে টাইপ করে আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুব সহজেই মোবাইলেই লিখে ফেলতে পারে বিরাট বিরাট গল্প,উপন্যাস,সাহিত্য।
এইযে এতোবড় একটা মহামারি গেলো বা যাচ্ছে, এই সময়টাই যখন মানুষ একদম ঘরবন্দী হয়ে পড়েছিলো, তখন মানুষের একমাত্র ভরসা ছিলো এই মোবাইল ফোন তথা স্মার্টফোন।সময় কাটানো তো পরের কথা,মানুষের সব কাজকর্ম হতো তখন এই মোবাইল ফোন দিয়ে।একেকটা স্মার্টফোন হয়ে উঠেছিলো একেকটা ক্লাসরুম,একেকটা অফিস।এই স্মার্টফোন থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা তবু পড়ালেখার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছিলো।যাদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ বেশি তাদের ক্ষেত্রে স্মার্টফোনে ক্লাস করা স্বশরীরে ক্লাস করার চাইতে উত্তম,সুবিধাজনক।
এসব স্মার্টফোনের পরিচিত সুবিধা,সবাই এগুলো জানে।তবে কিছুক্ষেত্রে এই স্মার্টফোন আমাদের চরম ক্ষতি করছে।
আজকাল মানুষের মধ্যে আন্তরিকতার যে সম্পর্ক সেটা কমে গিয়েছে,আর এই কমে যাওয়ার জন্য একটা প্রধাণ কারণ হচ্ছে এই স্মার্টফোন।আগে পরিবারের মানুষের মধ্যে যে আলাপআলোচনা হতো,সবাই সবার সাথে গল্প করতো,বিভিন্ন জিনিস নিয়ে হাসি তামাশা করতো,এসব কিছুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করতো।কিন্তু ইদানীং পরিবারের সদস্যরা যখনই একসাথে হয় তখনও সবাই সবার স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত।নিজের স্মার্টফোনের 'স্ক্রিন স্ক্রোল' করাতে ব্যস্ত।কারো সাথে কারো কোনো কথা নেই।
বন্ধু বান্ধবদের ক্ষেত্রেও একি বেপার,হয়তো চার পাঁচজন বন্ধু মিলে আড্ডা দিতে গেলো,আড্ডা শুরুর করার দুই এক মিনিটের মধ্যেই একজনের ফোনে মেসেজ এসে গেলো,একজনের কল আসলো,এভাবে সবাই নিজের স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,আর আড্ডা দেওয়া হলো না।
এইযে আমি যখন এই লিখাটা লিখছি তখন আমার রুমে তিনজন অবস্থান করছে।একতো আমি ফোনে বসে বসে এই লিখা লিখছি,দ্বিতীয় জন ফোনে কথা বলছে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ, আর তৃতীয় জন কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে হইতো কোনো ভিডিও দেখছে।ঘরে যদিও তিনজন ব্যক্তি, কিন্তু তিনজনই তাদের আলাদা আলাদা জগৎ এ রয়েছে।
তাছাড়া বাচ্চাদের হাতে স্মার্টফোন চলে যাওয়াতে আরও অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে জাতি।বাচ্চারা এখন ফোন না দেখে খেতে চায় না,আগে যেমন আমরা রূপকথার গল্প না শুনালে খেতে চাইতাম না।ফোনের প্রতি এতো ছোট থেকে আসক্ত হয়ে পড়ে যে তাদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ উঠে যায়।তাছাড়া স্বাস্থ্যগত ক্ষতীর কথাতো বাদই দিলাম।
তারপরও স্মার্টফোন আমাদের জীবনকে যতটুকু সহজ করে তুলেছে বিজ্ঞানের অন্য কোনো যন্ত্র আজ পর্যন্ত সর্বদিক দিয়ে আমাদের জীবনে এতোটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।
Congratulations @shaonashraf! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!