কষ্ট,বুকে ব্যাথা এবং অনুবর্তন তত্ত্ব

in BDCommunity2 years ago

যেদিন আমি আমার বোনের কাছে ফোন দিয়ে কান্না করেছিলাম।এটাই আমার প্রথম কান্না ছিলো।আমার জীবনে এমন কিছু ঘটেছিলো যা কয়েকদিন আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিলো।খুব বেশি না এক সপ্তাহের মতো।
সেই বোনের কাছ থেকে ফোন রাখার পর থেকে ঐ এক সপ্তাহ শুধু একটি গান শুনতাম।ঐটা ইসলামি একটি গান ছিলো।যে বিষয়টা আমার এই অতি কষ্টের কারণ ছিলো ঐটা নিয়ে যখন ঘাটাঘাটি করতাম তখন এই গানটা আমার ফোনে বাজতো।সারাক্ষণ বাজিয়ে রাখতাম যাতে গানটার দিকে মনোযোগ দেওয়ার কারণে কষ্ট একটু কম লাগে।

কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে এই গানটা এখন আমি 'প্লে' করতে পারি না,'প্লে' করলে অটোমেটিক আমার বুক ধড়ফড় করে।আমি কিছুই ভাবি না,তাও শুধু বুক ধড়ফড় করে,আর কাঁপতে থাকে।আমি যে বিষয়টা নিয়ে কষ্ট পেয়েছিলাম সেটাও ভাবি না বা কিছুই না শুধু গানটা চালু করলাম,আর বুকটাও কাঁপতে শুরু করলো।
এই গান পুরোটা এখন শুনে শেষ করতেই পারি না।

এই জিনিসটা নিয়ে ভেবে আমি একটা মেডিকেল সাইন্স পেয়েছি এর মধ্যে। প্যাভলভ নামক একজন বিজ্ঞানীর একবার একটি পরীক্ষা করেছিলেন যেটি কিনা প্যাভলভের অনুবর্তন প্রতিক্রিয়া নামে পরিচিত।
প্যাভলভ এই পরীক্ষাটি একটি কুকুরের উপর চালিয়েছিলেন,তিনি একটি কুকুরকে একটি কক্ষে নিয়ে তার গলা,কোমড়, পা একটি বেল্টের মাধ্যমে বেঁধে দেন যাতে কুকুরটি নাড়াচাড়া করতে না পারে,অতঃপর তিনি কুকুরের মুখ থেকে লালা নিঃসরণ হচ্ছে কিনা সেটা পরীক্ষা করার একটি যন্ত্র মুখে বসিয়ে দেন।আর লালা পরিমাপের জন্যও একটি যন্ত্র বসান।তারপর কুকুরের সামনে কিছু খাবার রাখেন,খাবার দেখে কুকুরের অবশ্যই লালা নিঃসরণ হয়েছে,সেটা পরিমাপ করেন।

এরপর কিছুদিন কুকুরের সামনে খাবার দেওয়ার আগে একটি ঘন্টা বাজাতেন প্যাভলভ।এভাবে কিছুদিন প্রতিবার খাবার দেওয়ার আগেই ঘন্টা বাজাতেন।তারপর কিছুদিন পর তিনি দেখলেন যে, যখনি ঘন্টা বাজানো হচ্ছে তখনি কুকুরের মুখ থেকে লালা ঝরছে যদিও তিনি তখনও খাবার দেননি।

এখন ঐ পরীক্ষার মতো আমার ক্ষেত্রেও এমন হচ্ছে, আমার কানে ঐ গানটা গেলেই আমার বুক কাঁপতে থাকে,বুকে কষ্ট অনুভূত হয়,যদিও এখন আমার কোনো কষ্ট নেই।

আচ্ছা কষ্টতো নিয়ন্ত্রণ করে ব্রেইন বা মস্তিষ্ক।কষ্ট মস্তিষ্কে পাবার কথা,সেটা বুকে অনূভুত হয় বলছি কেনো!
এর কারণ হচ্ছে আমরা যখন কষ্ট পাই,তখন আমাদের মস্তিষ্কের একটি অংশ যা এই কষ্ট নিয়ন্ত্রণ করে, সেখান থেকে এক প্রকার হরমোন নিঃসৃত হয়,যার নাম স্ট্রেস হরমোন।ঐ স্ট্রেস হরমোনগুলোর অতিরিক্ত ক্ষরণ ঘটার কারণে সেখান থেকে অ্যামাইনো এসিড এবং পেপটাইড নামক যৌগ ক্ষরিত হয়।এইগুলো এক প্রকার প্রোটিন।এই প্রোটিনগুলো তখন সরাসরি দেহের হৃদপিণ্ডে যায় যা দেহকে দুর্বল করে ফেলে।
এছাড়া কষ্ট পেলে মানুষের ভেগাস স্নায়ু উদ্দীপিত হয় যা মানুষের বুক ও উদরের মাঝে অবস্থিত।যার কারণে কষ্ট পেলে বুকে ব্যাথা অনুভব করি আমরা।

যাইহোক সেই এক সপ্তাহ যখন আমি কষ্ট পেতাম ঐ সময়টাই কষ্ট পাওয়ার ফলে শারীরিক যে "ম্যাকানিজম" সেগুলো ঘটতো।আর তখন কানে ভেসে আসতো ঐ গান।আর মস্তিষ্ক এটা এইভেবে ধরে নিতো যে এই গান শুনছি মানে আমি কষ্টে আছি।ঠিক প্যাভলভের সেই অনুবর্তন তত্ত্বের পরীক্ষার মতো।

আর এখন যখন ঐ গানের টিউনটা আমি শুনি তখনি আমার মস্তিষ্ক ভেবে নেয় আমি হয়তো কষ্টে আছি,সে কারণেই কষ্ট পাওয়ার পরবর্তী শারীরিক যে কার্যক্রম সেটা শুরু করে দেয়,ঐ যে হরমোন নিঃসরণ,ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপন,আর এর ফল স্বরুপ বুকে ব্যাথা,বুকে কষ্ট আর বুক ধড়ফড়।

বিঃদ্রঃ বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো এবং প্যাভলভের পরীক্ষা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞানের বইগুলো থেকে নেওয়া,এগুলো আমার কোনো কথা নয়।

213120684_229777018819446_2577786114073460151_n.jpg

Screenshot_2022_0810_021125.png

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL