নিজেকে নিজের কাছে হাস্যকর লাগা

in BDCommunity2 years ago

সময়ের ব্যবধানে মানুষের পরিবর্তন ঘটে।পরিবর্তন বলতে বেশিরভাগ মানুষের মানোন্নয়ন ঘটে।কারণ সব মানুষই জীবনে যাই করুক না কেনো,একটা বিষয় সব সময় খেয়াল রাখে কিভাবে নিজের উন্নতি করা যায়।উন্নতি বা উন্নয়ন বলতে শুধু এটা বুঝায় না যে আর্থিক উন্নতি করা বা প্রচুর টাকা-পয়সা অর্জন করে ধনী হয়ে যাওয়া।মানুষের জ্ঞানের পরিধির উন্নয়ন হতে পারে,হতে পারে মানুষের আচার-আচরণের উন্নয়ন।একটা সময় হয়তো কারো অনেক খারাপ স্বভাব ছিলো,সেই খারাপ স্বভাব পরিবর্তিত হতে পারে ভালো স্বভাবের মাধ্যমে।তো এই বেপারটাও একটা উন্নয়ন।তার নৈতিকতার উন্নয়ন।

তো যখন সে তার আচার-ব্যবহারে উন্নতি নিয়ে আসে,তখন তার আগের করা বিভিন্ন আচারণ যখন মনে পড়ে তখন নিজের কাছেই নিজেকে হাস্যকর লাগে।

স্বাভাবিকভাবে আমাদের সামনে কেউ যদি এমন কোনো আচরণ করে যা আমরা যে সমাজে আছি যে অবস্থানে আছি তার সাথে মানানসই না হয়,তাহলে ঐ আচরন দেখলে আমাদের হাসি পায়, এটাই স্বাভাবিক।যেমন,শহরের কোনো একটা বড় রেস্টুরেন্টে গ্রামের কেউ তার শহুরে আত্মীয়ের সাথে খেতে গেলো।খেতে গেলো সে গ্রামের পোশাক লুঙ্গি,গামছা পড়ে।তারপর হাত দিয়ে সবকিছু এমনভাবে গাপুসগুপুস করে খেলো যে আশপাশের শহুরে যারা ছিলো তাদের কাছে বেপারটা হাস্যকর মনে হবে,তারা হাসবে।যদিও এই পোশাকই গ্রামের ঐতিহ্য বা এই পদ্ধতিতে খাওয়াই গ্রামের মানুষের স্বভাব,তারপরও এইরকম দৃশ্য দেখে শহরের মানুষেরা হাসবে এটাই স্বাভাবিক।ঐ লোকটা যদি কিছুদিন শহরে থাকে এবং শহরের আদবকায়দা শিখে যায়,তখন তার সামনে কোনো গ্রামের লোক একি আচরণ করলে সেটাও তার কাছে হাস্যকর মনে হবে,এমনকি নিজের পূর্বের আচার-ব্যবহারের কথা মনে পড়লে তার হাসি পাবে।না এখানে গ্রামের মানুষকে ছোট করা হচ্ছে না,এমনটাই আসলে ঘটে থাকে।

আমারও এমন অনেক আচরণ আছে,যা আগে করেছি, সেটার কথা মনে পড়লে এখন হাসি পায়।এককালে মানুষ খুব আবেগি থাকে।আমিও এককালে খুব আবেগি ছিলাম।আমার ছোট থেকে একটা বন্ধু ছিলো যে কিনা আমার মামাতো ভাই,নাম তার পান্থ।আমিতো শহরে থাকি,আর ও তখন গ্রামে থাকতো।আমার স্কুল-কলেজ দীর্ঘ ছুটি না থাকলে তো আর গ্রামের বাড়িতে যেতে পারতাম না।তাই তার সাথে খুব একটা দেখা হতো না।
তো একটা সময় আসলো, যখন নতুন ফেইসবুক একাউন্ট খুলি এবং আমার সেই মামাতো ভাই এর সাথে কথা বলতাম মেসেঞ্জারে, চ্যাটিং যাকে বলে।দুইজন ছেলে বা দুইজন বন্ধু যখন কথা বলে বেপারটাকে বলে আড্ডা দেওয়া।আমরা আড্ডা দিতাম দীর্ঘ সময়।তো দেখা যেতো এমনও হতো যখন স্কুল-কলেজ ছুটি থাকতো,পরীক্ষা থাকতো না, তখন সারারাত আড্ডা দিতাম,বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতাম।দীর্ঘক্ষণ আড্ডাতেতো আর সব দরকারি কথা থাকতো না,অদরকারি কথা বা বিভিন্ন মজাও থাকতো এসব কথার মাঝে।তো মূল বিষয় হচ্ছে তার সাথে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হতো।দেখা যেতো বিভিন্ন ছোট খাটো বিষয় নিয়ে মন খারাপ হতো একেকজনের।স্বাভাবিকভাবে ডিজিটাল যুগের ছেলে-মেয়েরা গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডদের সাথে যেমন অভিমান করে।যেমন,রাতে আড্ডা দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু পান্থ ঘুমিয়ে গেলো এতে আমি পরেরদিন রাগ করতাম।
আমার যখনি এই কথা মনে পড়ে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে,কিভাবে সম্ভব,আমি এমন করতাম!এখনতো এমনও যদি হয়,আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ,একদিন না একশোদিনও যদি কথা না বলে বা অবহেলা করে,আমি হেসে বলবো,"সবি,ঠিক আছে,ইটস অলরাইট"।এতে আমার মনের মধ্যে বিন্দুমাত্র দাগও পড়বে না।
তো এটা একটা ছোট উদাহরণ এমন অনেক আচরণ আছে,যা আমি আগে করতাম,আর এখন মনে পড়লে, খুব বেশি হাসি পায়।

এমন আরও বিভিন্ন আচরণ যেমন,হয়তো কোনো একটা শব্দ কেউ বললো,আমি বুঝতে না পেরে এমন একটা উত্তর দিয়েছিলাম যেটা হাস্যকর ছিলো।ঐ ঘটনা এখন মনে পড়লে নিজের উপর হাসি পায়।

অবশ্য নিজের অতীতের বিভিন্ন কাজের উপর নিজের হাসি পাওয়া বা নিজেকে নিজের কাছে হাস্যকর মনে হওয়া একটা পজিটিভ দিক রয়েছে।নিজের উপর নিজে হাসি পাচ্ছে মানে হচ্ছে, আমি এখন বুঝতে শিখেছি যে আমার ঐ কাজগুলো ঠিক ছিলো না বা এখন আমি সেই হাস্যকর কাজকর্ম থেকে বিরত রয়েছি।পূর্বের এইসব কাজের জন্য নিজেকে নিজের কাছে হাস্যকর মনে হওয়া নিজের মানোন্নয়নের একটি লক্ষণ।তবে শেষ কথা হচ্ছে,আমরা কেউই পরিপূর্ণ না,আমাদের অনেক ভুল ত্রুটি থাকে, সেই ভুল ত্রুটি শুধরে, যেখান থেকে হোক পজেটিভ জ্ঞান অর্জন করে জীবনে এগিয়ে যাওয়া ই হচ্ছে মূলকথা।

rire.gif

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL