নিষিদ্ধ কাজের অনুভূতি

in BDCommunity2 years ago

রাস্তার পাশে এক জায়গায় লিখা "এখানে ময়লা ফেলবেন না,ময়লা ফেললে পাঁচশো টাকা জরিমানা"।দেখতে পেলাম,ঐ জায়গাই একজন ময়লা ফেলছে।আর ঐখানে ময়লা স্তূপ হয়ে আছে,মানে আরও অনেকে ময়লা ফেলেছে।হয়তো আগে মানুষ এখানে ময়লা ফেলতো,তাই জায়গার মালিক এই সাইনবোর্ড টানিয়েছে,কিন্তু মানুষ এখন আরও বেশি করে ময়লা ফেলে এখানে।রাস্তার পাশে এমন অনেক জায়গায় লিখা থাকে যে "এখানে প্রস্রাব করবেন না"। আমি প্রায়ই দেখি এসব জায়গায়ই মানুষ প্রস্রাব বেশি করে।এর কারণ কি?এর কারণ হচ্ছে,এটা করতে নিষেধ করেছে,আর যেই কাজটা করা নিষেধ সেটা করলে মনে একটা ভালো লাগা কাজ করে।এটা হচ্ছে মনের ভিতর থাকা শয়তানের আনন্দ।মানুষের মনের দুইটি দিক থাকে,একটাতো বিবেক আরেকটা হচ্ছে নফস।নফস সবসময় মানুষকে খারাপ কাজ করতে উদ্বোধ করে।

বিভিন্ন মুভিতে বা কার্টুনে এমন দৃশ্য দেখা যায় যে,কোনো একজন মানুষ একটা কাজ করতে যাচ্ছে,তখন ই তার মতো দেখতে দুটি পাখাওয়ালা লোক আসলো, একজনের সাদা পোশাক আরেকজনের ভালো পোশাক।একজন ভালো কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছে, আরেকজন খারাপকাজ।ভালো কাজ করার পরামর্শ যে দিচ্ছে সেটা হচ্ছে বিবেক, আর খারাপ কাজের পরামর্শ যে দিচ্ছে সেটা হলো নফস।

খারাপ কাজ করলে, কোনো নিয়ম ভাঙলে মনের মধ্যে যে আনন্দ হয়,সেটা ঐ নফসের আনন্দ।তার কথা শুনার জন্য সে আনন্দিত হয়ে পড়ে।

ঐদিন আমি আর আমার সহপাঠী শরীফ বিকালবেলা ঘুরতে বের হয়েছিলাম,ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হলো।তো একটা পার্কের ভিতর দিয়ে আমরা আসছিলাম,এমন সময় অসামাজিক কর্মকাণ্ডেরত দুইজন তরুণ-তরুণীকে দেখে শরীফ আমাকে বললো," এরা এখানে এমন করছে কেনো।সামাজিকভাবে বিয়ে করে সভ্য মানুষের মতো নিজের বাসায় করলেই পারে।"

তখন আমরা এটা নিয়ে অল্পক্ষণ আলোচনা করলাম।পাবলিক প্লেসে এধরনের ব্যক্তিগত কাজকর্ম করার কারণ হয়তো অনেক আছে,তবে এর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে,নিষিদ্ধ কাজের অনুভূতি সবসময় খুব আনন্দের হয়।এই দুইজন তরুণ-তরুণীই যখন সামাজিকভাবে বিয়ে করে, ঘরে তাদের এই ব্যক্তিগত কাজ করবে সেটাতে যে আনন্দ,এই জায়গায় আনন্দ বেশি।অনেকে বলে এই জায়গায় আবেগ বেশি, তাই আনন্দ বেশি।আসলে বেপারটা এটা না,আসল কথা হচ্ছে,পার্কে যখন তারা এমন করছে,পার্কে অবশ্যই এসব নিষিদ্ধ, তাই নিষিদ্ধ কাজের আনন্দ বেশি।আবার যখন ঘরে সামাজিকভাবে সম্মতি নিয়ে করবে,তখন এটা কোনো নিষিদ্ধ কাজ নয় তাই সেটার আনন্দও কম।

এসব কথার মাঝে শরীফ একটা কথা বললো,যে বাঙালিরাই নাকি নিষিদ্ধ কাজ করে মজা পায় বা ও বলতে চাচ্ছে যে,বাঙালিরা আইন ভেঙে মজা পায় বেশি,তাই বাঙালিরাই শুধু আইন ভাঙে।

কিন্তু কথাটা আসলে কতটুকু সত্য!একটা বাঙালি মেয়ে রাস্তাঘাটে ছোট পোশাক পড়ে বেরোল,কিন্তু এটা বাঙালি সংস্কৃতির সাথে যায় না।নিয়ম ভেঙে সে আনন্দ পেয়েছে,তাই এটা করেছে।অথবা ঐ যে উপরে বললাম,সেই পার্কের তরুণ তরুণীর করা কাজটা বাঙালির কাছে গর্হিত,তাই তারা বাঙালির নিয়ম ভেঙে আনন্দ পেয়েছে।কিন্তু এই একি বিষয় যেমন মেয়েদের ছোট পোশাক পড়া,পাবলিক প্লেইসে ছেলেমেয়েদের অবাধে মিলামিশা এগুলো কোনো পশ্চিমা দেশে স্বাভাবিক বেপার।তাদের ক্ষেত্রে এই বেপারে নিয়ম ভাঙার কোনো বিষয় নেই।সুতরাং দুটো দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।এই ভিন্ন প্রেক্ষাপটের উদাহরণ দিয়ে এটা বলা যাবে না যে শুধু বাঙালিই আইন ভেঙে মজা পায়।এটা আসলে সমগ্র মানবজাতির জন্য,সবার ভিতরেই নফস রয়েছে।আর নিষিদ্ধ কাজ করলে নফস আনন্দ পাবে এটাই স্বাভাবিক।তাইতো ভালো থাকা,ভালো কাজ করা কঠিন।

একদম ছোট থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু নিয়মকানুন শিখানো হয়,যেগুলো আসলে জীবনের জন্য কোনো উপকারি না বা স্বাস্থ্যগতও কোনো উপকারি না আবার কোনো অপকারও নেই।যেমন,স্কুলের একটা নির্দিষ্ট পোশাক থাকে,ঐ পোশাকই সকলকে পড়ে যেতে হবে,ছেলেদের ফরমাল শো পড়তে হবে,বেল্ট পড়ে ইন(Tuck in) করতে হবে,চুল ছোট রাখতে হবে।এই যে এসব নিয়ম এসবতো পরবর্তী জীবনে কোনো কাজে লাগবে না বা এসব না করলে স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যাও হবে না।তবুও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব নিয়ম কেনো থাকে?

এর কারণ হচ্ছে ছোট থেকেই ছেলেমেয়েদেরকে নিয়মের প্রতি আনুগত্যতা শিখানোর জন্য।তারা যাতে বুঝতে পারে নিয়ম পালন জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।জীবনে বড় হতে গেলে,ভালো মানুষ হতে গেলে নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।কারণ হয়তো নফসের প্ররোচনায় পড়ে মানুষ ভুল কাজ করে সাময়িক আনন্দ পায় কিন্তু পরবর্তী জীবনে সেটার বিরূপ প্রভাব পড়ে তার উপর।নিয়ম ভাঙা মানুষ কখনও সমাজের চোখে ভালো হতে পারে না,এমনকি নিজের জীবনেও সফল হতে পারে না।এসব কারণেই ছোট থেকে যে নিয়ম পালনে লাভ-ক্ষতি নেই,সেসব নিয়মও পালন করিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মানুবর্তী করে তুলতে চায়।

তাই,নফসের কথা শুনে খারাপ কাজ করে যতই আনন্দ পাওয়া যাক না কেনো,কিন্তু পরবর্তীতে যেহেতু তার ফল ভালো হয় না,তাই আমাদের নফসের কথা না শুনে বিবেকের কথা শুনা উচিত।

IMG_20220813_004553.jpg

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL