কোন একটা কাজ করবো বলে ফেলে রাখা খুবি একটা বাজে স্বভাব।আর বেশিরভাগ মানুষরা এটাই করে থাকি।একটা নতুন কিছু শুরু করার কথা আসলে ই আমরা বলি,আচ্ছা আগামীকাল থেকে শুরু করবো।এই আগামীকাল আর আসে না।আগামীকাল কথাটাই ফাঁকি।তাই বড় বড় মনিষীরা বলে গেছেন ভবিষ্যৎ আর অতীত বলতে কিছু নেই।যা আছে সব বর্তমান।আর যে ভবিষ্যতে করবে বলে কাজ ফেলে রাখে তার সেই কাজ করাই হয় না।
যারা শিক্ষার্থী তাদের ক্ষেত্রে পড়াশোনার বেপারটাতে এমন হয়।একটা পড়া পড়বে বলে যদি ফেলে রাখে তখন আর পড়াই হয় না।হয়তো পরীক্ষা ছয় মাস পর,ছয়টা অধ্যায় রয়েছে প্রতিমাসে একটা পড়লেই হয়ে যেতো।আরে প্রতিমাসে মাত্র একটা অধ্যায়,এটাতো খুবি সহজ,শেষ হয়ে যাবে।তারপর দেখা যায়,প্রথম মাসে যে অধ্যায় পড়ার কথা ছিলো সেটা পড়া হয় না,দ্বিতীয় মাসেরটাও হয় না,এভাবে পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে মনে হয়,আয়হায় ছয়টা অধ্যায়ই বাকি রয়ে গিয়েছে।তখন ধুমছে পড়তে হয়,কিন্তু এই এক সপ্তাহে কি আর ছয় মাসের পড়া,পড়া যায়।এভাবেই পরীক্ষাও খারাপ হয়ে যায়।
কিন্তু যদি প্রতিমাসেরটা প্রতি মাসে শেষ করা যেতো তাহলেতো খুব সহজেই সবগুলো অধ্যায় পড়া শেষ হয়ে যেতো এবং পরীক্ষাও ভালো হতো।
গত রমজান মাসে আমাদের মেডিকেলের এক ধর্ম বিষয়ক সংগঠন কর্তৃক একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করার কথা ছিলো।রমজান মাসে প্রতিদিন একটি করে আরবি দোয়া মুখস্ত করতে হবে এবং কোরআন শরীফের নয়টি সূরা অর্থ সহ মূখস্ত করতে হবে,তার উপর পরীক্ষা হবে।যেহেতু রমজান মাস ত্রিশ দিন ছিলো,ত্রিশ দিনে ত্রিশটা দোয়া মুখস্থ করলেই হয়ে যেতো।তারপর ভাবলাম আরে এই ত্রিশটা দোয়া প্রতিযোগিতার এক সপ্তাহ আগে পড়লেই পারবো।এরপর এমন হলো,পড়বো পড়বো করে রমজান শেষ হয়ে গেলো,ঈদ এর পর প্রতিযোগিতা দিন চলে আসলো।তখন দেখি আমার কোনো কিছুই পড়া হয়নি।তাড়াহুড়ো করে পড়তে যাবো,এমন সময় শুনি প্রতিযোগিতা পেছানোর জন্য সবাই আবেদন করা শুরু করেছে,কারণ সবারই প্রফ(প্রফেশনাল এমবিবিএস পরীক্ষা) চলছে তখন।এটা শুনে আবার পড়া বন্ধ করে দিলাম,প্রফের পড়েই পড়বো এটা ভেবে।
এরমধ্যে রমজানের পর,শাওয়াল,জিলক্বদ,জিলহজ্জ তিনটা মাস চলে গেলো,এখন মহররম মাস
,দোয়াগুলো আর মুখস্থ করে হওয়া উঠে নি।সূরাগুলো আগে থেকে মুখস্থ ছিলো,আর অর্থগুলো শুধু এই তিনমাসে পড়ে শেষ করেছি।অবশেষে প্রতিযোগিতা আজকে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে জানতে পেরেছি।এক সপ্তাহ আগে জানার পরও দোয়াগুলো মুখস্থ করা শুরু করিনি।গতকালকে ভেবেছিলাম শুরু করবো ,তবুও করা হলো না আলসেমি করে।টনক নড়লো আজকে দুপুরের পর,আরে আর কয়েকঘন্টা পরই পরীক্ষা।
পড়াশুরু করলাম নাকে মুখে।খাওয়া-দাওয়া,ওয়াশরুম সব বাদ।প্রতিযোগিতার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সন্ধ্যা সাতটা পনের মিনিট।তখন বিকাল বাজে পাঁচটা।যে প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে তার কাছে গিয়ে আমি বললাম,ভাই আমার পড়াটা শেষ হতে রাত আটটা বাজবে,প্রতিযোগিতার সময়টা কি আর এক ঘন্টা পিছানো যাবে।
ভাই বললো,পড়ার জন্য সময় দিলাম চার মাস, পড়া শেষ হলো না,এখন এই এক ঘন্টা তোমার বেশি লাগবে পড়ার জন্য।যাও গিয়ে পড়তে থাকো।
তখন গিয়ে নাকে মুখে পড়তে থাকলাম।যখন সাতটা বাজলো তখন আমার দোয়া মুখস্থ হলো ত্রিশটার মধ্যে চব্বিশটা।তাও ছয়টা বাকি রয়ে গেলো।
অবশ্য প্রতিযোগিতায় আমি অর্থসহ সূরার পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছি।আরেকটি বিভাগে তৃতীয় হয়েছি।কিন্তু দোয়ার বিভাগে কিছুই হতে পারি নি।এই ত্রিশটা দোয়া চারমাসে মুখস্থ করতে পারিনি।কিন্তু তিনঘন্টায় চব্বিশটা মুখস্থ করে ফেলি,কিন্তু কাজে দেয়নি।
আগে থেকে যদি শুরু করতাম,তাহলে কতো সহজেই শেষ করতে পারতাম।
এভাবেই,আমরা কাজকে অবহেলা করে ফেলে রাখি।কিন্তু পরবর্তীতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন আমরা পুরোদমে চেষ্টা শুরু করি,কিন্তু তখন আর করেও শেষ করতে পারি না।ঐ ঈশপের গল্পের খরগোশ আর কচ্ছপের মতো।যারা খরগোশ এর মতো হবে তাদের জীবনেই সফলতা আসতে সমস্যা হবে।