বর্ষামুখর একটি দিন ও তার অনুভুতি ।

in BDCommunity3 years ago (edited)

IMG_20210527_103500.jpg

বর্ষামুখর একটি দিন ও তার একগুচ্ছ অনুভুতি

আজকের এই বর্ষার দিনে শহরের বিল্ডিংবাড়ির বিছানায় শুয়ে আছি । কিন্তু গত বছর করোনার প্রকোপে সবার মতো আমরাও দেশে চলে গিয়েছিলাম। সেই দিনটি ছিল শ্রাবন মাসের ৫ তারিখ। হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। আমি একটু অবাক চোখে তাকিয়ে আম্মুকে বললাম "আমি কিছু বোঝতে পারছিনা"। তারপর আম্মু বলল একটু বাইরে গিয়ে দেখে আয়, বাইরে গিয়ে দেখি আকাশে সাদা মেঘের পরিবর্তে কালো মেঘ যেন দল বেঁধে খেলা করছে। তারপর বুঝতে পারলাম যে সকাল ৮ টাই বাজে কিন্তু মেঘের ছায়ার কারণে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। তারপর ঘরে এসে দেখলাম আজ শ্রাবন মাসের ৫ তারিখ। তখন বুঝতে পারলাম এটা বর্ষাকাল।

সেই দিন সকাল থেকে শুরু করে বিকাল পর্যন্ত সামান্য বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বিকালের দিকে এমন ভাবে বৃষ্টি শুরু হয় যেন আমাদের ঘরের চালের উপরে বৃষ্টির নৃত্য করছে নুপুর পায়ে। একটু পরই শিলার মতো করে অনেক জোরে বৃষ্টির পড়া শুরু হলো। তখন হঠাৎ করে বাসার কারেন্ট চলে গেল। তখন একটা নিস্তব্ধ পরিবেশের সৃষ্টি হলো। সেই পরিবেশটা এতটাই মনমুগ্ধকর ছিল যেন মনে হচ্ছিলো বৃষ্টির পরীরা আপন মনে নুপুর পায়ে নৃত্য করছে। তারপর আমি একটু জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম তারপর দেখলাম আমাদের বাড়ির পাশের রাস্তাটা জনমানবশুন্য।

তখন ঘড়িতে বাজে প্রায় ৬.৩০ মিনিট। আমি পড়তে বসেছি প্রায় আধাঘন্টা ধরে। কিন্তু তবুও আমি পড়তে পারছিনা। পড়ায় মন বসছেনা। আমি চিন্তা করলাম আমার জীবনকে আলোকিত করতে হলে পড়াশুনা অনেক জরুরি। আমাকে এখন পড়তে বসতে হবে। কিন্তু এইসব করে কিছুই হচ্ছে না। এই সব করতে করতে প্রায় ৮.৩০ বেজে গেল। তখন মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো। আম্মু পাশের ঘর থেকে ডাকদিল খেতে বসতে। শুধু মাত্র একটাই মোম রয়েছে। যদি এটা শেষ হয়ে যায় তাহলে অন্ধকারে থাকতে হবে। তারপর দেরি না করে বসে পড়লাম। খাওয়া শেষ ছোট মামত্ম বোন বলল মামাকে এটা ভূতের গল্প শোনাতে।

আমি বললাম হ্যা মামা অনেক মজা হবে। এইদিকে কারেন্টও নেই ,গল্প শুনতে অনেক মজা লাগবে। খাওয়া শেষে মামা বলল ওই রুমে আয়। আমরা সবাই ওই রুমে গিয়ে বসলাম। সেই রুমে আমাদের বিছানাও বিছানো হয়ে গিয়েছে। মামা গল্প বলা শুরু করলো, কখনো আস্তে আস্তে আবার কখনো মোটা কণ্ঠে আবার কখনো কখনো ফিস ফিস করে। আমার কাছে গল্পটা মজাই লাগছিলো কিন্তু এই পরিবেশে ঘুমকে বাদদিয়ে এইসব কিছু যেন বোকামি হয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় কারেন্ট চলে আসে। এবং মামা সেখানেই গল্প বলা শেষ করে দেয়। আমার মামত্ম বোন অনেক রেগে যায় গল্প বলা শেষ করে দেয়াতে। আমিতো মনে মনে খুশি হয়েগিয়েছিলাম। তাই আমি আর কোনো কথা বলিনি। এবং সেই সময়ই আমি বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যাই।

ঘুমে আমি যেন হারিয়ে যাই সেই বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দে। সেই ঘুমটা যেন অনেক মধুর ছিল। একঘুমে আমি রাতকাটিয়ে ফেলি। ঘুম থেকে উঠে দেখি আকাশে রঙ্গধণু উদিত হয়েছে। সেই সময় দৌড়ে আমি মাঠের দিকে যাই, গিয়ে দেখি ছেলেমেয়েরা সেই কাদার মধ্যেই দৌড়া দৌড়ি করছে। আকাশের নীল বর্ণের মধ্যে রংধনুর উদ্দ্যায়ন , যে কারো মন কেড়ে নিতে পারে।

আজ আমি শহরের একটি বিল্ডিং বাড়িতে। যদিও সেখানে মুশল ধরে বৃষ্টি হয়। কিন্তু না সেখানে কারেন্ট যায় ,না সেখানে গল্প বলার কেউ আছে। হয়তোবা করোনার কারণে এই দিনগুলোর সাথে পরিচিত হতে পেরেছিলাম। আর মনে হয়না কোনো সময় এইসব দিনগুলোকে আর খুঁজে পাবো। কিন্তু সেই দিন গুলো আমার জীবনের ডাইরিতে অমর হয়ে থাকবে ।

(Image . Source)

mXkfdToSwHy1F6xC7iNSf4gD4njuiH2TJnH2d9a7sjEgsxpt7CEU4CDLL7mP9zQRVVSzCik54u9BzkowKWMTJGsSmkpZb2759qFbBrSDc.png

coollogo_com-19946289.gif