এত সব না পাওয়ার ভীরে লাইফে হুট করে অদ্ভুত এক চমক পেলাম। প্যারেন্স ছাড়া ইন্ডিয়া ট্যুর দেয়ার সুযোগ!
পরিচিত যারাই শুনেছে শুধু আমি আর আমার ছোট বোন ইন্ডিয়া ট্যুরে যাচ্ছি তারা শুরুতেই একটা ঝাটকা খেয়েছে। ঢাকা যেতে গেলেই যেখানে বাবার থেকে কয়েকবার পারমিশন নিতে হয় সেখানে ইন্ডিয়া ট্যুরের জন্য কেম্নে ম্যানেজ করলাম এটা আসলেই বিশাল লম্বা কাহিনী! শুধুমাত্র খালা খালু ছিল বলেই পারমিশনটা পেয়েছিলাম, আর আমাদের দুই বোনের এত হ্যাসেল নেয়ার জন্য খালাখালুর প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞ থাকবো!
আচ্ছা এখন ট্যুরের কেচ্ছায় আসি। আমরা একটা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে গিয়েছিলাম। ইমিগ্রেশন, হোটেল, খাওয়া সবকিছুর ঝামেলাই এজেন্সি নিয়েছিল। সো জার্নি অনেকটাই পিসফুল ছিল। এটা ছিল ৩ দিন ২ রাতের প্যাকেজ। ঢাকা থেকে শুরু করেছিলাম "লন্ডন এক্সপ্রেস" নামের এসি বাস দিয়ে। বাসের নাম শুনে মোটেও অবাক হই নাই কারণ সিলেটের বাস থেকে আর কি এক্সপেক্ট করা যায়! :3
জার্নিতে আমার যেহেতু ঘুম হয় না তাই অডিওবুক সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। নাম,"আমার দেখা নয়া চীন"। নতুন কোন দেশে ঘুরতে গেলে জায়গাটা যে কত ভাবে অবজার্ভ করা যায় সেটার অসাধারণ একটা উদাহরণ হলো এই বই। আমার ট্যুরটা আরও মিনিংফুল করার জন্য এ জিনিস বেশ হেল্প করেছে।
তো যাই হোক, ভোরে সিলেট শহরে পৌছে তামাবিল পর্যন্ত গেলাম লেগুনাতে। ১ ঘন্টার পুরো জার্নিতে ঝুম বৃষ্টি। মেঘালয়ে যাওয়ার আগেই গেলাম হাফ ভিজে। সিলেটের তামাবিল থেকে ইমিগ্রেশন পার হয়ে ইন্ডিয়ার ডাউকি। বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় লাগেজ টানতে গিয়ে বেশ প্যারা খেয়েছি, মাথায় ছাতা ধরলে লাগেজ ভিজে, লাগেজে ধরলে আমি! কোন মতে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর দেখি আমাদের জন্য ৩ দিনের একটা মিনি বাস রিজার্ভ করা আছে। আমাদের প্রায় ২৫ জনের গ্রুপ ছিল তাই এজেন্সি জিপ গাড়ি না হয়ে বাস ভাড়া করেছিল।
ইন্ডিয়া ঢুকার সময় শুরু থেকেই আমরা ছোট খাটো ঝর্ণা দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম। যেমন এই ঝর্ণাটা কিন্তু সিলেটের৷ কি পিসফুল দেখতে!
এমন ছোট ঝিরিধারার ওয়াটার ফলস পুরো ডাউকি যাওয়ার রাস্তা জুড়েই ছিল। এত সুন্দর ঠান্ডা পানি! তবে মজার ব্যাপার হলো প্রতিটি ফলস এ গিয়েই সবাই ইচ্ছামতন সারাদিন ধরে ভিজেছে। আর এই ভিজা অবস্থাতেই পুরো সময় ছিল। আর অদ্ভুত ব্যাপার হলো কারোরই এত ভেজার পর তেমন ঠান্ডা লাগে নাই। এই জিনিস বাংলাদেশে করলে নিশ্চিত নিউমোনিয়ায় সবগুলা মরতো!
তো প্রথম স্পট ছিল Umkrem Falls. আমার আগে কখনও ঝর্ণা দেখার সৌভাগ্য হয় নাই। বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে যাই নাই। ইউনানের ওয়াটার ফলস দেখেছিলাম বাট খুবই ছোটখাটো শান্ত প্রকৃতির। এবার তাই দেখার জন্য শুরু থেকেই আলাদা একটা ফ্যাসিনেশন কাজ করছিল। তবে আমি ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করতে পারি নাই ঝর্ণা যে এত সুন্দর হয়!
এই ভয়ংকর বৃষ্টির মধ্যে ট্যুর প্ল্যান করাই হয়েছিল এই ভেবে যাতে এই ওয়াটার ফলসগুলা ভাল মতন এঞ্জয় করা যায়। কারণ এই সিজনেই পানি সব থেকে সুন্দর হয়। আর সত্যিই, এত ভয়ংকর সুন্দর ভাষায় প্রকাশ করার মতন না! Umkrem এর মতন পানির গর্জন পরের আর কোনো ঝর্ণায় পাই নাই। মনে হচ্ছিল সারাদিন চেয়ে থাকলেও মনের স্বাদ মিটবে না! এত পানি, এত বিশালতা, এত স্রোত সব মিলায় এক surreal vibe। এত কাছ থেকে সবকিছু এঞ্জয় করতে পেরে খালি মনে হচ্ছিল লাইফে নায়াগ্রাতে না যেতে পারলেও আর আফসোস থাকবে না :3
তবে ঝর্ণা দেখে সবাই যখন খালি ছবিই তুলে যাচ্ছিল আমার খুব করে বলতে ইচ্ছা করছিল,
আগে একটু মন ভরে চোখের দেখাটা দেখে নেন! ছবি দুইটা কম থাকলেও বা কি আসে যায়! 💙
সিলেট গেলেই মনে হয় নিজ দেশে দাড়িয়ে অন্য দেশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসছি।
হেহে, একদম! আর ডাউকি দিয়ে যাওয়ার সময় সিলেট দেখতে এত সুন্দর লাগতেসিলো!! আসলে নদীর ওইপাশ অলওয়েজই সুন্দর :3
ওইপাশে গিয়েই তাহলে সহমত টা জানাতে হবে।
ওয়াহহহ মেঘালয় ঘুরে আসছো 😁 নাইস নাইস।
হ্যাঁ আপু!!! খুব কম বাজেটে হেভেন দেখে আসলাম 💙