মেঘালয় কাহিনী (পর্ব ৩)

in BDCommunity10 months ago (edited)

আমাদের ট্যুরে সেকেন্ড দিনের প্ল্যান ছিল চেরাপুঞ্জি ঘুরে দেখা। সকালে উঠেই রেডি হয়ে বসে আছি। কিন্তু একদম ভোর বেলা থেকেই ভয়ংকর বৃষ্টি। বের হওয়ার কথা ছিল ৭ টায় বাট ট্যুর গাইড ভাইয়া বলছিল একটু অপেক্ষা করে দেখা যাক, যদি বৃষ্টি কিছুটা কমে। কিন্তু কোথায় কি! উলটা বেড়েই চলছে। শেষমেস ৯ টার দিকে হোটেল চেকআউট করে বেরিয়ে পড়লাম।

আমাদের ফার্স্ট ডেস্টিনেশন ছিল Mawsmai cave. আমাকে যদি জিজ্ঞেসা করা হয় এই ট্রিপে সবচেয়ে এক্সাইটিং কি ছিল, আমি মাওসমাই কেভ এক্সপ্লোর করার কথা বলবো। ভয়ংকর সুন্দরের সংজ্ঞা দিতে গেলে এর নাম সবার আগে আসবে!

বৃষ্টির জন্য আমার প্রথম দিনের নেয়া পিংকু স্নিকার্সের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। আজকে রাবারের একটা পামশু নিয়ে বের হয়েছি। বৃষ্টি এত ছিল যে শুধু ছাতায় কভার হচ্ছিল না, দুই বোন তাই ওয়ান টাইম রেইনকোট কিনে নিলাম (রেইনকোটের বর্ণনা আর না দেই, ছবি দেখে বান্ধুবি বলেছিল, "ব্রো, তুই সার্জিকাল পলিথিন পাইলি কই")।

IMG_20230729_235440.jpg

তো মাওসমাই কেভে ঢোকার সময় আমার ফ্যামিলি মেম্বার কেউ যেতে চায়নি, আমার সাহস দেখেও বার বার বারণ করছিল, কিন্তু আমি যেই নাছরবান্দা, ট্যুর পারপাসে দেয়া প্রতিটা রুপি উসুল করে যাবো এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি! আর থামায় কে। তাছাড়া দেশের আলুটিলা গুহা টুহা কোনোটাই কখনো দেখার সুযোগ পাই নাই (ট্যুরের কথা উঠলেই আম্মা বলতো, বিয়ের পর জামাইয়ের সাথে যেয়ো), তাই এত বড় সু্যোগ পেয়েও হাতছাড়া করতে চাই নাই। কেভ দেখে যারা ফিরে আসছিল সবাই বলতেসিল এটা কিন্তু বেশ রিস্কি আর স্লিপারি, গুহার ভেতরে অনেক পানি, সাবধানে যেয়েন। তো এসব শুনে কিছুটা ভয় পেলেও ছোটবোনের থেকে দোয়া আর আশির্বাদ নিয়ে টিকিট কাউন্টারে ঢুকে পরলাম!

টিকিট চেকিং এর সময় দেখছিলাম সবাই দলবেঁধে বা কাপল হয়ে ঢুকছে, আমার মতন একলা অনাথ বান্দা কেউ নাই। জিনিসটা বুড়া টিটিও খেয়াল করলো। আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলে,

  • you alone?
  • seems like, yeah!
  • no boyfriend to go with?
  • hehe (awkward smile), guess not!

এত এক্সাইটিং একটা মোমেন্টে বেটা এক কথায় আমার মিডলাইফ ক্রাইসিস টেনে নিয়ে আসছিল, কি একটা অবস্থা!

তো কেভের দিকে যত আগাচ্ছিলাম, আস্তে আস্তে ভয়টাও বাড়ছিল। গুহার সামনে এসে দাঁড়ায় আমার চোখ ছানাবড়া। এত বিশাল! এত অদ্ভুত সুন্দর ভাবে ফসিলাইজড পাথর, একেকটা পার্টের সেইপ এত চমৎকার যার কোনটাই আমি কল্পনা করে যাই নাই। এন্ট্রেন্সটা বিশাল বড় হলেও ঢুকার শুরুর রাস্তাটাই ভয়ংকর চিকন। এত চিকন যে আমার মতন মানুষকেও বেন্ড করে ঢুকতে হবে। এটাও অতটা প্যারার ছিল না বাট আমি ভয় পাচ্ছিলাম পানি নিয়ে। আমার প্রায় হাটু সমান পানি। জুতা পড়ে ঢোকার তো প্রশ্নই আসে না, খালি পায়ে গেলেও জায়গাটা বেশ রিস্কি। আমি ওখানেই ইনডিসিশনে মিনিট পাচেক ধরে দাঁড়ায় আছি, এত বড় রিস্ক নিবো কিনা। একহাতে ছাতা জুতা, আরেক পাশে সোল্ডার ব্যাগ। এরপর নিজেকে বুঝ দিলাম, you go girl! যা আছে কপালে, বের হতে পারবো ইনশাআল্লাহ!

IMG_20230729_235156.jpg

যেহেতু একা ছিলাম তাই সামনে একটা গ্রুপকে ফলো করে তাদের পিছে পিছে থাকলাম, উল্টায় পড়লে অন্তত তাদের ডাকতে পারবো। ঢোকার শুরুতে একটু ভিডিও করলেও পরে আর ফোন বের করার সাহস হয় নাই। জায়গাটা এত থ্রিলিং, খালি আফসোস হচ্ছিল একটা গোপ্রো থাকলে সেই একটা ভিডিও হতো (একটু আইডিয়া নেয়ার জন্য আমি শেষে দুইটা ভিডিও দিয়ে দিলাম, তবে ভিডিওতে যেই পানি ছিল তার থেকে ৩/৪ গুন বেশি পানি পারায় আমাকে আসতে হয়েছিল)।

IMG_20230729_235123.jpg

যত আগাচ্ছিলাম মনে হচ্ছিল এক অশরীরী আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। হাজার বছরে ফরমেশন হওয়া পিলার আর ফসিলগুলা এত মসৃণ আর ঠান্ডা ছিল যে কিছুক্ষণ পর পর goosebumps হচ্ছিল। প্রায় মাঝামাঝি পর্যায়ে আসার পর ২/১ টা জায়গায় আমার সামনের ট্যুরিস্ট গ্রুপটার হেল্প নিতে হয়েছিল। দুই হাতে জিনিসপাতি নিয়ে আগানো পসিবল হচ্ছিল না। গুহার ভেতর সানলাইট আসার তেমন কোন স্কোপ না থাকলেও প্রতিটা জায়গায় স্পট লাইটের ব্যবস্থা করা ছিল। যার জন্য হেডলাইটের আর প্রয়োজন হয় নাই। প্রায় বিশ মিনিট যাওয়ার পর যখন দিনের আলো দেখলাম তখন মনে হচ্ছিল, at last, I've made it!

বের হয়ে দেখি ছোটটা দাঁড়ানো, আমার দেরি হচ্ছিল দেখে টেনশনে খালু খোঁজাখুজি শুরু করে দিয়েছিল। ও যখন জিজ্ঞেসা করলো কেমন ছিল আমি এক্সাইটমেন্টের ঠেলায় কি বলেছিলাম মনেও নাই! বডিতে adrenaline cortisol দুইটাই বেড়ে এমন পর্যায়ে ছিল যে ঠিক কেমন ফিলিং হচ্ছিল এটা এক্সপ্লেইন করতে পারছিলাম না৷ বাট এতটুকু বলতে পারি, এটা ছিল once in a lifetime experience!
গাড়িতে গিয়ে দেখি শুধু আমার জন্য বাস দাঁড় করানো। গুহায় ঢোকায় মুখে ওই ইনডিসিশনে পরে টাইমটা কিল না করলে হয়তো বকাটা আর খেতে হতো না! :P

আমার শুরুর দিকে করা ছোট্ট একটা ভিডিও

অন্যদের ভ্লগ 1

অন্যদের ভ্লগ 2

Sort:  

যত আগাচ্ছিলাম মনে হচ্ছিল এক অশরীরী আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।

এই লাইনটা পড়ার পরে মনে হচ্ছিল থ্রিলার স্টোরি নিয়ে বসেছি। আপনি এই থ্রিল টা ধরে রেখে সবটা বর্ণনা করতে পারতেন। 🫠

no boyfriend to go with?
hehe (awkward smile), guess not!

আহারে! 🥹

যাইহোক, মানুষের এমন এমন ট্যুর পোস্ট দেখে নিজের মনে অনেক আনচান আনচান শুরু হয়ে গেল। 😑

এই লাইনটা পড়ার পরে মনে হচ্ছিল থ্রিলার স্টোরি নিয়ে বসেছি। আপনি এই থ্রিল টা ধরে রেখে সবটা বর্ণনা করতে পারতেন।

হাহা! ভাল বলসিস! এটা দিয়ে থ্রিলার স্টোরি বানানো যাবে!! :3

যাইহোক, মানুষের এমন এমন ট্যুর পোস্ট দেখে নিজের মনে অনেক আনচান আনচান শুরু হয়ে গেল।

টাকা কিন্তু বেশি না ১২ হাজার দিয়েই হয়ে যাবে। ওই এজেন্সি এই মাসেই আবার মেঘালয় ট্যুরের প্যান করতেসে। তোকে ইনবক্সে ডিটেইলস দিয়ে দিচ্ছি।

Congratulations @rafa-noor! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)

You received more than 8000 upvotes.
Your next target is to reach 9000 upvotes.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Check out our last posts:

Women's World Cup Contest - Recap of day 10
Women's World Cup Contest - Recap of day 9
Hive Power Up Day - August 1st 2023

আমার গুহার থেকেও বড় কৌতুহল রেইনকোটে। এইটার রিভিউ দাও খুঁটিনাটি 😂

আর বইলো না। ওই কেভের পাশেই কিছু গিফট শপ ছিল। সেখান থেকেই ৫০ রুপি দিয়ে এই ওয়ান টাইম রেইনকোট কিনেছিলাম। হোটেলে আসার পর দেখি এই রেইনকোট থেকে কালার উঠে আমার সোয়েটারে লেগে গেছে -_- কি বিচ্ছিরি অবস্থা!