বিড়াল কেন সেরা?

in BDCommunity3 months ago

আমরা প্রায় সবাই বিড়ালদের প্রতি দুর্বল। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, আমরা না চাইলেও নিউজ ফিডে, শর্টস কিংবা রিলসে ক্যাট ভিডিও আসবেই! কারণ Internet loves cat!

সেই সাথে আমরাও। বিড়াল না ভালবাসলেও ওদের ভিডিও দেখতে যে পছন্দ করি এটা তো সিওর। প্রায় ১ যুগ ধরে ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় মার্কেট ধরে রেখেছে এই পেট ইন্ডাস্ট্রি।

stress relief বা procrastination যেটাই করতে চাই না কেনো ক্যাট ভিডিও ছাড়া সেরা কিছু হয় না। আর ইন্টারনেটে কিউট ভিডিওর খোঁজ করলে পুরো জায়গা জুড়ে থাকবে বিড়ালেরই রাজত্ব। অদ্ভুত কায়দায় বিড়ালের নানা রকমের খেলা, তাদের হাটা চলা, খাওয়া, লাফানো, এমনকি ঘুমানোর ভিডিও পর্যন্ত আমাদের দেখতে ভালো লাগে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একটাই, কেন ক্যাটস ভিডিও আমাদের এত বেশি টানে? এটা কি আদোও কোন রোগ? এই ভাললাগাকে পুঁজি করে ইন্টারনেট কি ধরণের স্ট্রাটেজি ফলো করছে? বিজনেস ইন্ডাস্ট্রিতেও কি বিড়াল কোনো ভাবে হেল্প করতে পারবে?


why we are obsessed with cats

IMG_20210302_081801.jpg

বিড়াল পছন্দ করার একটা বড় রিজন হল ওদের infant features. একটা ৮ পাউন্ড ওজনের সদ্য হওয়া বাচ্চা তার বড় বড় চোখ, গোলগাল মাথা, গল্টুস গাল দিয়ে যেমন সবার নজর কাড়ে, তেমনি এ সবগুলো বৈশিষ্ট্যই পাওয়া যায় একটা বিড়ালের মধ্যে। যা দিয়ে তারা খুব সহজেই আমাদের আটকে ফেলতে পারে। এমনকি ওদের কান্নাও অনেকটা ছোটবাচ্চার wailing কে resemble করে।

তবে কাহিনী কিন্তু এখানে শেষ না। এক ধরণের কোনো রোগ আছে যেটা আমাদের বাধ্য করে বিড়ালদের ভালবাসতে।

রোগটার নাম হলো Toxoplasmosis (টক্সোপ্লাসমোসিস)। এটা এমন একটা রোগ যেটার জন্য দায়ী করা হয় Toxoplasma Gondii নামে একটা প্যারাসাইটকে। অন্যসব প্যারাসাইটের মতনই এটা হোস্টের শরীরে বংশবিস্তার করে। বাট কাজটা করে বেশ অদ্ভুত উপায়ে। বলা হয়ে থাকে সারা বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষই এই toxoplasma দ্বারা আক্রান্ত। এর symptom হিসেবে ধরা হয় হালকা flu। অবাক করার মতন বিষয় এই প্যারাসাইট extreme লেভেলের কিছু রোগবালাই যেমন schizophrenia, bipolar disorder, এবং OCD এর মতন জিনিসও ট্রিগার করতে পারে।

তবে ফিজিক্যাল সিমটম বাদ দিয়ে যদি হিউম্যান বডির ভেতরকার কারবারে ফোকাস করি তাহলে দেখা যাবে Toxoplasma খুব সুন্দর করে আমাদের ব্রেইনে বাসা বাঁধে। যেটা আমাদের বিহেভিয়ারে প্রভাব ফেলে। সাইন্টিস্টরা বলে এই টক্সো শরীরে ডোপামিন বাড়িয়ে দেয়, সেই সাথে কন্ট্রোল করে আমাদের ইমোশনও। যার রেজাল্ট হিসেবে ধরা হয় fatal attraction.

এ প্যারাসাইট আমাদের শরীরে আসতে পারে কয়েকটি উপায়ে, যেমন contaminated পানি, আধোয়া ফলমূল, বালির ভেতর খেলাধুলা বা বিড়ালের লিটার বক্স ক্লিনিং প্রসিডিউর থেকে। এজন্য ডাক্তাররা অনেক সময়ই রেকমেন্ড করে গর্ভবতী মায়েরা যাতে বিড়ালের লিটার বক্স ক্লিন না করে। কারণ Toxo, serious birth defects এর মতন জিনিসেরও কারণ হতে পারে।

এজন্যই বলা হয় বিড়ালদের বডি ফিচার আর বিহেভিয়র ছাড়াও আমাদের ক্যাট অবসেশন বাড়ার জন্য দায়ী এই Toxoplasmosis। আর এই ইফেক্ট থেকেই ক্যাটস পুরো ইন্টারনেট জুড়ে রাজত্ব কায়েম করতে পারছে। তবে ইন্টারনেট কাজটা কিভাবে করছে তা নিয়ে একটু ডিটেইলসে জানা যাক।


cats and internet

IMG_20220107_120122.jpg

ধরা হয়ে থাকে ইন্টারনেট ট্রাফিকের শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ দখল করে আছে ক্যাট ভিডিও। প্রতিদিন প্রায় মিলিয়নের মতন মানুষ ইন্টারনেটে ক্যাট ভিডিওর জন্য সার্চ দিয়ে থাকে। যদি ইউটিউবে গিয়ে ক্যাট ভিডিও লিখে খোঁজ করা হয় তাহলে ২.৫ কোটিরও বেশি রেজাল্ট সামনে আসবে।

বিড়ালের ভিডিওর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে সর্বপ্রথম ইউটিউবে ক্যাট ভিডিও আপলোড করা হয়েছিল ২০০৫ সালে, যেটা পাবলিশ করেছিলেন ইউটিউবেরই কো ফাউন্ডার Steve Chen. তার নিজের বিড়ালকে নিয়ে বানানো এই ভিডিওর টাইটেল দিয়েছিল “Pajamas and Nick Drake”.

আর এখন ইন্টারনেটে মোটমাট কত ক্যাট ভিডিও আছে তা যদি লিস্ট হয় তাহলে সেই নাম্বারটা হবে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটির মতন!

বিড়ালদের মিস্টেরিয়াস বিহেভিয়র, মানুষদের পাত্তা না দেয়া, অদ্ভুদ সব পাগলামি এমন নানা রকমের সিলি কাজ কারবারের জন্য ক্যাট আমাদের অলটাইম ফেভারেট। তবে এগুলো ছাড়াও বিড়াল ভালোলাগার পেছনে বিশাল সাইকোলজিক্যাল রিজন আছে।

ক্যাট ভিডিও হিট হওয়ার মধ্যে একটা কারণ হলো বিড়ালদের আসলে কিছু যায় ই আসে না আপনারা তার ছবি তুলছেন নাকি ভিডিও করছেন। আর এটাই অন্য কোন যেকোনো পেট বা বাচ্চাদের ভিডিও থেকে ক্যাট কন্টেন্টকে আলাদা করে রাখে।

নিউজিল্যান্ডের একটি স্টাডির মতে, বিড়ালরা ক্যামেরা একনলেজ করে না বলেই তারা অডিয়েন্সের পছন্দের তালিকায় সবার উপরে থাকে। এই স্টাডি থেকে আরও জানা যায়, ক্যাট ভিডিওর মূলত দুইটা key pleasure রয়েছে। প্রথমত ভিউয়ারসরা বিড়ালদের মাধ্যমে এমন একটা ওয়ার্ল্ড ইমাজিন করতে পারছে যেখানে কন্সটান্ট সারভেলেন্স চলে না। আর দ্বিতীয়ত আমরা এমন একটা প্রাণীর সব কাজ কারবার দেখতে পারছি যাকে শুট করতে গিয়ে তাদের কোনভাবে বিরক্ত বা ক্ষতি করা হয়না। তাদের প্রতিটা মুভমেন্ট এবং কাজকর্মই স্পনটেনাস।

তবে এত সবকিছু বাদ দিলে যদি কাউকে এমনিই জিজ্ঞেসা করা হয় তাদের ক্যাট ভিডিও কেনো ভালো লাগে প্রায় সবাই সিমপ্লি বলবে “cat video makes us happy”। আর এই হ্যাপিনেস থেকে চলে আসে নানা ধরণের হেলথ বেনেফিটস। প্রায় ৭০০০ ক্যাট ভিডিও ভিউয়ারসদের উপর করা এক সার্ভের মতে, পার্টিসিপেন্টরা ভিডিও দেখে একটা পিয়র হ্যাপিনেসের স্বাদ পায় যা তাদের নেগেটিভ ইমোশন, স্যাডনেস, অ্যাংজাইটি এবং গিল্ট কমতে বেশ হেল্প করে।

মোদ্দা কথা এনার্জি লেভেল বুস্টিং, পজিটিভ ইমোশন বাড়ানো আর নেগেটিভ ফিলিং কমানোতে খুব চমৎকার কাজ করে এই ক্যাট ভিডিও। সব মিলায় এভাবেই বিড়ালের ভিডিও হয়ে উঠছে একটা ডিজিটাল থেরাপির অংশ। আমরা যারা বিড়াল পালি আমাদের ফোনের স্টোরেজের ১/২ জিবি যে বিড়ালের ছবি দিয়ে ভরা ছিল এটা হলফ করে বলা যায়।

আচ্ছা এবার একটু সিরিয়াস কথায় আসা যাক। বিড়াল নিয়ে যে রীতিমতন এজেন্সি খুলে বিশাল ইন্ডাস্ট্রি চলছে তা নিয়ে একটু বলি।


catvertising

নতুন বিজনেস টুল হিসেবে ক্যাট ভিডিও ভয়ংকর লেভেলের কাজের। এই আইডিয়াকে মাথায় রেখেই প্রায় ১ যুগ আগে একটি এজেন্সি তৈরি হয়েছিল যার নাম kittywood studio. ইন্টারনেটে একদম শুরু থেকে যেসব ফেমাস ক্যাট ভিডিও আছে সেগুলোর মধ্যে বড় একটা রোল প্লে করে আসছে কিটিউড স্টুডিও।

এদের একেকটা ভিডিও করার পিছনে বিশাল লেভেলের প্লানিং থাকে। যেমন শুরুতে রাইটার টিম থেকে স্টোরি আর প্লট নিয়ে স্ক্রিপ্ট চলে আসে প্রি প্রডাকশন টিমের হাতে। যারা কাজ করে storyboard আর animatic পার্ট নিয়ে। এরপর visual effect ডিপার্টমেন্ট হেল্প করে ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড, CGI, লাইটিং এন্ড ফাইনাল টাচআপে। এভাবেই নানা কাঠ খড় পুড়িয়ে তৈরি হয় একেকটা ভিডিওর ফাইনাল প্রডাকশন।

কিটিউডের মতনই ২০১২ সালে John Street নামে একটা লিডিং ইন্ড্রাস্টি অদ্ভুত এক মার্কেটিং স্ট্রেটেজি হাতে নেয়। তারা ওয়ার্ল্ডের প্রথম catvertising agency launch করে। minimal cost এ এত huge return অন্যকোনো বিজনেসে আগে কখনও সম্ভব হয়নি। এরাও ক্যাট ভিডিও প্রডাকশন করা শুরু করে নিজেদের স্টুডিওর তৈরি করার মাধ্যমে। এই John Street এজেন্সি প্রথম ভিডিও আনে ২০০৮ সালে। প্রোপার প্ল্যানিং এর ফলে নিঞ্জা কিটি নামে এক ভিডিও প্রথম শটেই ভিউস নিয়ে আসে প্রায় আড়াই কোটি, তখনকার সময়ে যেটা হিউজ!

বর্তমানে গুগলে খোঁজ করলে নানা ক্যাট বিজনেস এজেন্সির দেখা মিলবে। পেট ইন্ডাস্ট্রির এই হেভি বিজনেসে কম্পিটিশন করে সবাই বেশ ভালোই আগাচ্ছে।

তবে এজেন্সি থেকে বিজনেসের দুনিয়ায় কেনো বিড়াল আসলো?


why does your business need cats?

emiliano-vittoriosi-xittCp5XnK8-unsplash.jpg

বিজনেসের গ্রোথ বাড়াতে বিড়াল ব্যবহার করা হচ্ছে এমন উদাহারণ ভুরি ভুরি। ডিজিটাল মার্কেটিং এর মতন অফলাইনেও আছে এদের নানা কদর। একটু ডিপ ডাইভ করলে বের হয়ে আসবে কয়েকটা রিজন।

যদি অফলাইনের হিসাবে আসি তাহলে প্রথম যেই পয়েন্টটা আসবে তা হলো customer attraction. অনেক বিজনেস ওউনাররা এটাও বলে থাকে যে কাস্টমাররা মালিকদের থেকে তাদের দোকানের বিড়ালদের নাম বেশি মনে রাখে। এই পলিসি কাজে লাগিয়ে আগাচ্ছে আমাদের পশ ক্রাফট ষ্টোর যাত্রা। এমনও অনেককে দেখা যায় যে তারা স্টোর ভিজিট করতে আসে শুধুমাত্র বিড়ালদের আদর করার লোভে।

340840257_241717731607475_3750647807682292274_n.jpg

দ্বিতীয়ত বিড়াল তৈরি করতে পারে public relation opportunity. ইমোশনাল ফ্যান্ডরাইজিং ক্যাম্পেইন যেমন charitable donation, business money rising এসবে ক্যাট হতে পারে একটি আনঅফিসিয়াল মাসকট।

এছাড়া হেলথ বেনেফিটসের কথা ভাবলে ওয়ার্কপ্লেসে কো ওয়ার্কারদের স্ট্রেস রিলিভার হিসেবেও বিড়াল কাজ করতে পারে। কারণ বিড়ালদের পেট করার মাধ্যমে আমাদের হার্টরেট স্লো হয়ে আসে। এর ফলে আমাদের বডিতে oxytocin release হয়, যেটা স্ট্রেস হরমোন cortisol কে কমিয়ে আনে। তাই হাই স্ট্রেস ওয়ার্কিং এনভারমেন্টে এমপ্লইদের প্রডাক্টিভিটি লেভেল বাড়াতে, এবং ওয়ার্ক স্ট্রেস কমাতে বিড়াল দারুণ ভাবে সাহায্য করবে।

এখন অফলাইন বাদ দিয়ে দেখা যাক অনলাইন ইন্ডারস্ট্রিতে বিড়ালের রাজত্ব আসলে কত বড়! অনলাইন বিজনেসে বিড়াল আনলে আপনার ব্রান্ড ভিজিবিলিটি যে কি পরিমাণ বাড়বে সেটা অনেকে আইডিয়াও করতে পারে না।

প্রথমত বিড়াল হেল্প করে আপনার কোম্পানির visibility আর engagement বুস্ট করতে। sortlist এর মতে, সোশ্যাল মিডিয়ার এভারেজ অ্যাডের সাথে যদি কম্পেয়ার করা হয় তাহলে দেখা যায় পেট থাকলে emgagement rate বাড়তে পারে ৬৩% পর্যন্ত।

এছাড়া ইউটিউবেও যেসব অ্যাডে ক্যাট থাকে সেসবে এভারেজে প্রায় ৪ মিলিয়ন পর্যন্ত ভিউস আসে। আর ডগ অ্যাডে আসে ২ মিলিয়ন।

মজার ব্যাপার হলো এসবের ভেতরে প্রায় ৩২% ক্যাট কমার্শিয়ালই ব্রিটিশ ব্রান্ডের আন্ডারে। ইউকের O2, Cravendale (ক্রেভেন্ডেল), Sainsbury (সেইন্সবুরি) এর মতন নামিদামি সব ব্রান্ড বিড়ালকে পুঁজি করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রমরমা বিজনেস। এ কারণে ব্রিটেনকে cat nation এর তকমা দেয়া হয়ে গেছে অনেক আগেই।

কমার্শিয়াল ক্যাম্পাইন ছাড়াও যদি অরগানিক পোস্ট নিয়ে ঘাটা হয় তাহলে দেখা যায় পেট ফিচার থাকলে সেই পোস্ট randomly ই সিলেক্ট করে প্রায় ৬২% মানুষ।

এছাড়া সবকিছু বাদ দিয়ে শুধুমাত্র বিড়ালকে নিয়েই কিন্তু করতে পারেন আপনার নেক্সট বিজনেস। ঢাকার কয়েকটা জায়গাতে গড়ে উঠেছে নতুন কিছু ক্যাট ক্যাফে। ইন্সপাইরেশন হিসেবে নিতে পারেন capawcino cat cafe, এবং Pat a pet cafe কে। এছাড়া ক্যাট বোর্ডিং হাউজের বিজনেসও খুব জমজমাট। ইউএসের ভার্জেনিয়ার বিখ্যাত Happy Cat Hotel and Spa এর ব্যবসা এতই ভালো চলছে যে ২০২১ এ এই হোটেল ওপেন হওয়ার পর থেকে তা একদিনের জন্যেও তা ফাঁকা পরে থাকেনি।

So একটা কথা এতক্ষণে ক্লিয়ার। Cat can stand you out from the crowd.

শেষ করবো বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক Terry Pratchett এর একটা মজার কোট দিয়ে,
“In ancient times cats were worshipped as gods; they have not forgotten this.”

কথাটা আসলেও সত্যি, বিড়ালভক্তি থেকে মানুষ এখনও বের হতে পারেনি, সামনে যে পারবে তাও মনে হয় না। এই cat craze কে কাজে লাগিয়ে নতুন আরও কতকিছু আসতে যাচ্ছে সেটা দেখার অপেক্ষাতেই পুরো বিশ্ব।

Sort:  

Is this lovely cat is yours apu?

ইয়েসসস!!! ওর নাম দস্যু।

দেইখা তো দস্যুর মতো লাগেনা:-)