ট্রেইন টু নারায়ণগঞ্জ!

in #bangla2 years ago

img_0.2579249907098392.jpg

ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর কারণে আজকে সারা বাংলাদেশে দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘট চলছে। তবে তাদের ধর্মঘটের কারণ ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে নয়, বরং বাস ভাড়া বাড়ানোর জন্য চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে। যদিও তাদের এই ধর্মঘট যৌক্তিক হলেও তাদের দাবী পুরোপুরি অযৌক্তিক। তারা যে পরিমান ভাড়া বাড়ানোর দাবী করছে, তা বাস্তবায়ন করতে গেলে আমাদের দেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশের মানুষের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে যাবে।

যায় হোক, গতকাল রাতে গাজীপুর ছিলাম, আজ নারায়ণগঞ্জ থাকার কথা। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই নারায়ণগঞ্জ যাবার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছিলাম। তবে বাস্ট স্ট্যান্ড আসার পির দেখি বাসের চেয়ে রিকশা, সিএনজি আর বাইকের সংখ্যাই বেশি। প্রথমে মনেই ছিল না যে আজ ধর্মঘট চলছে। পরে মানুষের মুখে মুখে কথাবার্তা শোনার পর সেটা মনে পড়ে গেল।

প্রথমে অবশ্য আজকের নারায়ণগঞ্জের ট্রিপ ক্যান্সেল করে দেয়ার চিন্তা করেছিলাম। পরে ভাবলাম আজকে না গেলে আবার প্রোডাকশনের কোনো সমস্যা হয় কিনা! তাই আল্লাহর নাম নিয়ে একটা সিএনজিতে উঠে আব্দুল্লাহপুর চলে এলাম। এখানে আসার পর দেখি অবস্থা আরো খারাপ। চারপাশে মানুষ আর মানুষ, বাট বাস নেই।

img_0.33015684987798777.jpg

তবে একেবারেই যে বাস নেই, তা বললে ভুল হবে। কিছুক্ষণ পর পর বিআরটিসির দ্বিতল বাসগুলো একটা একটা করে আসতেছে আর কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই সেগুলো আবার পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে আব্দুল্লাহপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। এরকম একটা বাস পেয়ে কোনো ভাবে চাপাচাপি করে আমিও উঠে পড়েছিলাম।

এমনিতে নারায়ণগঞ্জে সবসময় বাসে গেলেও আজকে তো আর বাসে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই ট্রেইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাসে করে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত গিয়ে তারপর ট্রেইনে করে কমলাপুর পর্যন্ত খুব সহজেই চলে আসতে পেরেছিলাম। কিন্তু বিপত্তি বাধলো কমলাপুর আসার পর।

আমি যখন কমলাপুর পৌছি, ঘড়িতে তখন প্রায় ১০ টা ৩০ বাজে। কিন্তু এখানে এসে দেখি ১ টা ৪৫ এর আগে কোনো ট্রেইন নেই আপাতত নারায়ণগঞ্জগামী। ফলে কী আর করার! দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করে যখন টিকেট কাটার জন্য কাউন্টারের সামনে দাঁড়ালাম তখন শুনি যে ট্রেইনের শিডিউল নাকি পরিবর্তন করার হয়েছে। অর্থাৎ আরো দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। এইটা শুনে মন, মেজাজ দুইটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

img_0.7758566675266234.jpg

যায় হোক, এতক্ষণ ধরে যেহেতু অপেক্ষা করেই ফেলেছি, এখন তো আর কিছু করার নেই। কমলাপুর থেকে গাজীপুর যাওয়া তো উপায় নেই। আবার বিকল্প ওয়েতে নারায়ণগঞ্জ যেতে গেলেও বেশ ভোগান্তি পোহাতে হবে। তাই দাঁতে দাঁত চেপে আরো দেড় ঘন্টা টিকেট আছে বসে বসে ৩ টা বাজার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

img_0.7302751015945922.jpg

মাঝখানে অবশ্য হালকা পাতলা নাস্তাও করে নিয়েছিলাম। যদিও দুপুরে ভারী কিছু খাবার দরকার ছিল। কিন্তু প্লার্টফর্মের পাশে ছোট একটা দোকান পেলাম, যেখানে বার্গার, সিংগারা, রোল টাইপড খাবার বিক্রী করছিল। সিংগারাগুলো দেখে বেশ সুস্বাদু মনে হচ্ছিল, কিন্তু সে অনুসারে স্বাদ এত ভাল মনে হয় নি। তবে সবজির রোলটা সিংগারার চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো ছিল। এধরনের সিংগারার জন্যই মূলত দিন দিন সিংগারা আর ছমুচার উপর থেকে আমার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অথচ একটা সময় এমন ছিল যে প্রতিটা দিন আমার শুরুই হতো সিংগারা কিংবা ছমুচা দিয়ে।

তবে আজকের দিনটা মোটেও ভাল ছিল না। ৩ টার সময় ট্রেইন ছাড়ার কথা বললেও ট্রেইন ছাড়তে ছাড়তে প্রায় সাড়ে চারটা বেজে গিয়েছিল। তার উপর আজকে বাস বন্ধ থাকায় সমস্ত চাপ যেন ট্রেইনের উপর এসে পড়েছে। পুরো ট্রেইনে ভীড় এতই বেশি হয়েছিল যে একটু এদিক সেদিন নড়ার মতোও কোনো স্পেস ছিল না।

img_0.2774259433314165.jpg

এই অবস্থাতেই কোনো ভাবে ফতুল্লা স্টেশন পর্যন্ত আসতে পৌছাতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমার তো যেতে হবে চাষাড়া পর্যন্ত। ওদিক দিয়ে অন্য একটা ট্রেইন আসবে, তাই ফতুল্লা স্টেশনেই প্রায় আধা ঘন্টার মত ট্রেইনে বসে বসে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। পরে আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারি নি। ট্রেইন থেকে নেমে সোজা স্টেশনের বাইরে এসে রিকশা একটা নিয়ে চাষাড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে পড়েছিলাম।

আজকে ধর্মঘট থাকায় রাস্তায় তেমন জ্যাম ছিল না অবশ্য। খুব অল্প সময়ের মাঝেই গন্তব্যস্থলে পৌছুতে পেরেছিলাম আমি। তবে রিকশা করে আসার সময় রাস্তার দুই পাশে সারি সারি তেলের গাড়ি চোখে পড়ছিল। ধর্মঘটের কারণে এগুলো আজকে কোথাও মুভ করে নি।

নারায়ণগঞ্জের পাট খুব সম্ভবত চুকাতে হবে ২-১ দিনের মাঝেই। এরপর এখানকার সবকিছু ছেড়ে আবার গাজীপুর চলে যাবো। আমি আমার গত এক মাসের সবকিছু মিস করবো। এখানকার সবার সাথে খুব অল্প সময়েই মিশে যেতে পেরেছিলাম। কাজের চাপের কথা যদি বাদ দিই, তাহলে বলতে হয় খুব একটা খারাপও কাটে নি আমার এই নারায়ণগঞ্জে...