মার্ক জুকারবার্গ ( যার জন্মই সাফল্য)

in #busy6 years ago

মার্ক জুকারবার্গ পৃথিবীর সব থেকে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮৪ সালের ১৪ মে নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন এলাকাতে মা সাইকোলজিস্ট ক্যারেন ও বাবা ডেন্টিস্ট এডওয়ার্ড জুকারবার্গের ঘরে জন্ম নেন মার্ক জুকারবার্গ। জুকারবার্গ চার ভাই বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তার ছোট তিন বোন হচ্ছে র্যা ন্ডি, ডোনা এবং এরিএল। জুকারবার্গের সম্পূর্ণ নাম মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ।

FB_IMG_1524600896188.jpg
source

শৈশবে মার্ক জুকারবার্গ:

মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ শৈশবেই আর্ডসেলি হাই স্কুলে গ্রীক এবং ল্যাটিন ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি ফিলিপস এক্সটার একাডেমীতে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তিনি বিজ্ঞান এবং ক্লাসিক্যাল শিক্ষায় পুরস্কৃত হন। তিনি অসি ক্রীড়া তারকা ছিলেন এবং অসিক্রীড়া দলের অধিনায়ক ছিলেন। কলেজে তিনি মহাকাব্যিক কবিতার লাইন থেকে আবৃত্তি করার জন্যও পরিচিত ছিলেন। জুকারবার্গের শৈশব বয়স থেকেই কম্পিউটারের প্রতি ছিল প্রচণ্ড আগ্রহ। তাই মাধ্যমিক শ্রেণীতে অধ্যায়ের সময় থেকে শখে সফটওয়্যার লেখা শুরু করেন জুকারবার্গ।

সফটওয়্যার বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান:

মার্ক জুকারবার্গের বয়স যখন বারো তখন তিনি আটারি বেসিক ব্যবহার করে “Zucknet” নামে একটি বার্তা প্রোগ্রাম তৈরি করেন। তাঁর পিতা অফিসে প্রোগ্রামটি ব্যবহৃত করত, যাতে রিসেপশনিস্ট নতুন রোগীর বিষয়ে তাকে সহজেই জানতে পারে। পরিবারের সবাই “Zucknet” গৃহের মধ্যে যোগাযোগ করতে ব্যবহৃত করতো। মার্ক এর কম্পিউটারের দ্রুত বেড়ে উঠা দেখে তার বাবা ডেভিড নিউম্যানকে কম্পিউটারের গৃহশিক্ষক রাখেন। যখন তিনি হাই স্কুলে তখন, তিনি একটি সঙ্গীত সফটওয়্যার Pandora তৈরি করেন, যা Synapse প্রথম সংস্করণ। AOL এবং মাইক্রোসফটসফ্ট ছড়াও আরো অনেক প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যারটি কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে কিন্তু তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০০ পর্যন্ত উচ্চমাধমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। এরপর ২০০০ সালে তিনি পিল্লিপ্স এক্সেটার একাডেমী পড়াশুনা করেন।

হার্ভার্ডে জুকারবার্গ:

২০০২ সালে জুকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করার জন্য জুকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে “go-to campus software” ডেভেলপার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে নিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি একটি CourseMatch নামক প্রোগ্রাম বানান, যার সাহায্যে ছাত্রছাত্রীরা তাদের কোর্সের ভিত্তিতে ক্লাস নির্বাচন করতে পারত।

হার্ভার্ড কলেজের ডাটাবেজ হ্যাক:

হার্ভার্ডে থাকা অবস্থায় ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ ‘ফেসম্যাশ ডট কম’ নামে একটি সাইট প্রতিষ্ঠা করে। এই ফেসম্যাশ সাইটের কাজ খুব একটা ভালো কিছু ছিলোনা। এই সাইটে দুইটা ছবি পাশাপাশি রাখা হত। এই দুই ছবি থেকে ভিজিটররা কে “হট” আর কে “হট না/নট” তা তুলনা করতো। হার্ভার্ড কলেজের ডাটাবেজ হ্যাক করে স্টুডেন্টদের ছবি নিয়ে তা ফেসম্যাশে ব্যবহার করে ভিজিটরদের “হট” অথবা “নট” বের করার সুযোগ দেন। প্রথমদিকে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ৪৫০ ভিজিটর ২২০০০ ছবিতে অন লাইন এর মাধ্যমে ভোট দেন। পরে কলেজের স্টুডেন্টরা এই সাইট বন্ধ করতে তাকে বাধ্য করে।

ফেসবুক প্রতিষ্ঠা:

২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হার্ভার্ডে পড়ার সময় বন্ধুদের সাথে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট “দি ফেসবুক ডট কম” যা ‘ফেসম্যাশ ডট কম’ এর পরিবর্তিত রূপ। ব্যবহারকারীরা নতুন নতুন বন্ধু অ্যাড করা, বার্তা প্রেরণ করা এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী আপডেট করা ও তথ্য আদান প্রদান করতে পারত প্রথম দিকে। সেই সাথে একজন ব্যবহারকারী শহর, কর্মস্থল, বিদ্যালয় এবং অঞ্চল-ভিক্তিক নেটওয়ার্কেও যুক্ত হতে পারত। মার্ক জাকারবার্গ হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তার রুমমেট এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র এডওয়ার্ডো সেভারিন, ডাস্টিন মস্কোভিত্‌স এবং ক্রিস হিউজেসের যৌথ প্রচেষ্টায় ফেসবুক নির্মাণ করেন। ওয়েবসাইটটির সদস্য প্রাথমিকভাবে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু পরে সেটা বোস্টন শহরের অন্যান্য কলেজ, আইভি লীগ এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আরো পরে এটা সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, হাই স্কুল এবং ১৩ বছর বা ততোধিক বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

ফেসবুক নিয়ে বিতর্কে জুকারবার্গ:

“দি ফেসবুক” যাত্রা শুরু করার ঠিক ছয়দিনের মাথায় জুকারবার্গের সেই সহযোগী বন্ধুরা তার বিরুদ্ধে আইডিয়া চুরির অভিযোগ এনেছিল। সেসময় এ নিয়ে তেমন আর কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হলেও ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এসে জুকারবার্গের সেই তিন বন্ধু ক্যামেরুন, টেলর ও ডিভিয়া মামলা করে বসে দি ফেসবুকের নামে।

ইয়াহু এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান:

২০০৫ সালে ফেসবুকে যখন ৫.৫ মিলিয়ন ব্যবহারকারী যুক্ত হয় তখন বিভিন্ন অ্যাডভেরটাইজমেন্ট ফার্ম ফেসবুকে অ্যাড দিতে শুরু করে। ফেসবুকের জনপ্রিয়তা দেখে একই সময় ইয়াহু এবং এমটিভি নেটওয়ার্ক কোম্পানি ফেসবুক কিনতে চেয়েছিল এক বিলিয়ন ডলারে কিন্তু মার্ক জুকারবার্গ সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলো।

হার্ভার্ড ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় জুকারবার্গ:

হার্ভার্ডে ফেসবুকের সাফল্য জুকারবার্গের এবং তার বন্ধুদের অনুপ্রেরণা আরও বাড়িয়ে দেয়। তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে অফিস নেয়ার। কারণ সিলিকন ভ্যালি হলো বিখ্যাত আইটি কোম্পানিগুলোর মধ্যমণি। শুধু মাইক্রোসফট এবং আমাজন ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন- গুগল, ইন্টেল, এইচপি, ওরাকলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধান কার্যালয়। তাই জুকারবার্গ এবং তার বন্ধুরা চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরের সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে সেখানে পাড়ি জমাতে। কোম্পানির দ্রুত বিকাশেও স্থানটি অনেক বেশি সহায়ক। কারণ বিশ্বখ্যাত সব প্রযুক্তিবিদদের সহয়তা তখন তাদের প্রয়োজন ছিল।

জুকারবার্গ তার মনোরোগ চিকিৎসক মা মিসেস ক্যারেল কে ফেসবুক সম্পর্কে সব খুলে বলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করার কথাটিও জানিয়ে দেন। যদিও জুকারবার্গ কখনই ভাবেনি সে আর হার্ভার্ডে আর ফিরে আসা হবে না। মিসেস ক্যারেন জুকারবার্গের এই সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানায় এবং দ্রুত তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া পাড়ি দিতে বলে। ক্যালিফোর্নিয়ায় জুকারবার্গের কাজের চাপ আর ব্যবহারকারীদের চাহিদা মেটাতে তাকে প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা অফিস করতে হতো।

দি ফেসবুক ডটকম নাম পাল্টে ফেসবুক ডটকম:

২০০৫ সালে মার্কিন কলেজ এবং স্কুলগুলোতে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। আগস্টে জুকারবার্গ “দি ফেসবুক ডটকম” নাম পাল্টে শুধু “ফেসবুক ডটকম” রাখেন। বছর শেষে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫ লাখে। ২০০৬ সালের প্রথম দিকে মার্কিন অফিস এবং পরবর্তীতে সর্বসাধারণের জন্য ফেসবুক উন্মুক্ত করা হয়। কৌশলগত কারণে মাইক্রোসফট তখন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। বছর শেষে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক কোটি ২০ লাখ। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোন দেশে ফেসবুক তখনও একটি অপরিচিত নাম। ২০০৭ সালে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। সেই বছর ফেব্রুয়ারীতে ভার্চুয়াল গিফট চালু করেন জুকারবার্গ।

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সর্ব প্রথম ফেসবুক ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমে কানাডা ও ব্রিটেন এবং পরবর্তীতে ফ্রান্স ও স্পেন। এপ্রিলে ফেসবুক চ্যাট চালু হয়। বছরের মাঝামাঝিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ২০০৯ সাল থেকে জুকারবার্গের ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা শুধু বাড়তেই থাকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ধীরে ধীরে কার্যক্রম শুরু হয় এ সাইটের। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ কোটি থেকে বেড়ে ৩৫ কোটিতে। ২০১০ সাল ফেসবুকের জন্য অত্যন্ত গুরম্নত্বপূর্ণ। ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০কোটি!

হার্ভার্ডের ড্রপ-আউট মার্ক জুকারবার্গ আবার হার্ভার্ডে:

২০০৪ সালে হার্ভার্ড ছেড়ে যাবার পর তিনি আবার হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন, তবে ছাত্র হিসেবে নয়। ফিরে আসেন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে ভাষণ দিতে। এই উদ্যোক্তাকে স্বাগত জানাতে পূর্ব নির্ধারিত ২০০ জন ছাত্রছাত্রী, ৫০ জন সাংবাদিক আর ২০টি ক্যামেরা দাড়িয়ে ছিল হার্ভার্ডের উঠোনে। লটারীর মাধ্যমে এই ২০০ জন ছাত্রছাত্রীকে নির্বাচন করা হয়েছিল। মার্ক জুকারবার্গ তার কোম্পানীতে বুদ্ধিদৃপ্ত ছেলেমেয়েকে চাকরী দেয়ার জন্য যে ক্যাম্পেইনে নেমেছিলেন তারই অংশ হিসেবে তিনি হার্ভার্ডে আসেন।

মাইক্রোসফটে কাজ করতেন মার্ক জুকারবার্গ!:

ফেসবুক জনপ্রিয় না হলে মাইক্রোসফট এ কাজ করতেন মার্ক জুকারবার্গ! ২০০৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক তৈরি করেন মার্ক জুকারবার্গ। কিন্তু এই ফেসবুক যদি না থাকত বা জনপ্রিয় না হত তাহলে তিনি কি করতেন? স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক সম্মেলন চলাকালীন সময়ে নেয়া এক সাক্ষাতকারে এই প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। তিনি বলেন- "সম্ভবত পেশা হিসেবে প্রকৌশলকে বেছে নিতাম। মাইক্রোসফটের ব্যাপারে আমার প্রচণ্ড শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। হার্ভার্ড থেকে অনেকেই মাইক্রোসফটে কাজ নিয়েছে।"

অবশ্য ফেসবুক প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই মাইক্রোসফটের নজরে ছিলেন জুকারবার্গ। ২০০২ সালে জুকারবার্গের লেখা 'সিনাপস' নামক একটি প্রোগ্রাম ক্রয় করার চেষ্টা করে মাইক্রোসফট। এই সফটওয়্যার ব্যবহারকারীর শোনার অভ্যাস লক্ষ্য করে এবং আগে থেকে কি শুনতে চায় তা অনুধাবন করার চেষ্টা করে। এই সময় মার্ককে মাইক্রোসফটের সাথে যোগ দেবার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু জুকারবার্গ এ সময় হার্ভার্ড এ পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন। মাইক্রোসফটের সাথে যোগ না দিয়ে হার্ভার্ড এ পড়াশোনা করার সিদ্ধান্তটা জুকারবার্গ এর জন্য যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আর তাই ২০০৭ সালে মাইক্রোসফট ২৪০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ফেসবুক এর ১.৬ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।

তরুণ জুকারবার্গ বিলিয়নার:

ফেসবুকের কল্যাণে ২০০৯ সালের বিলিয়নার বনে যান মার্ক জুকারবার্গ। পরবর্তী বছর ফোর্বস ম্যাগাজিনে জুকারবার্গের সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬.৯ বিলিয়ন ডলারে। আর ফেসবুকের বাজার মূল্য দাঁড়ায় ২৩ বিলিয়ন ডলারে। এর পরে বিখ্যাত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের বিনিয়োগের ফলে কোম্পানির বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৫০ বিলিয়ন ডলারে।

সম্মাননা :

২০১০ সালে ফেসবুকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মার্ক জুকারবার্গ বিশ্বের অন্যতম সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক তাদের প্রচ্ছদে ঠাঁই করে নেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টাইম ম্যাগাজিন ওই বছরেই তাকে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে মনোনীত করে।

দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক:

মার্ক জুকারবার্গের বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তী জীবন অবলম্বনে নির্মিত হয় ছায়াছবি 'দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক'। ছবিটি ২০১০ সালের ১ অক্টোবরে মুক্তি পায়। ছবি মুক্তির পর মার্ক তার সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে একটি প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া করে ছবিটি দেখতে যান। তবে ছবিটি দেখা শেষে সাংবাদিকদের নিজের হতাশার কথা জানান তরুণ এই প্রতিভা। এই ছবির পুরো কাহিনীই কাল্পনিক। কারণ ছবিতে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তৈরির পেছনে যে উৎসাহ এবং প্রেষণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। ছবিতে মার্ক জুকারবার্গকে দেখানো হয়েছে একজন অসামাজিক তরুণ হিসেবে। যিনি তার অভিলাষ করার লক্ষ্যে এই সাইট তৈরি করেন এবং তার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নারীসঙ্গ এবং আমোদ-ফুর্তিতে মেতে থাকতেন। এছাড়া এই ছবিতে আরও দেখানো হয়েছে মার্কের প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে যায় এবং সেই হতাশা থেকেই জন্ম নেয় ফেসবুক। তবে বাস্তব কাহিনী সম্পূর্ণ ভিন্ন। মার্ক জুকারবার্গ সত্যিকার অর্থে একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। ভ্রাতৃত্বসুলভ এই তরম্নণ প্রতিভাবানের পোশাকও বেশ সাদাসিধে। তার দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা প্রিসিলা চ্যানের সঙ্গেই বসবাস করছেন গত বছরের টাইমস কতৃক সেরা এই ব্যক্তি।

চ্যানের গ্র্যাজুয়েশন উদযাপনে মার্ক জুকারবার্গের বিয়ে:

মার্ক জুকারবার্গ প্রিসিলা চ্যান কে বিয়ে করেন ১৯ মে ২০১২ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের পালো আলতোয় জুকারবার্গের নিজ বাসভবনে বিয়ের অনুষ্ঠাটি হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমন্ত্রিতরা বিয়ের কথা জানতেন না। তারা ভেবেছিলেন চ্যানের গ্র্যাজুয়েশন উদযাপনের জন্যই এই অনুষ্ঠান। কিন্তু এই অনুষ্ঠানেই নিজের নকশা করা রুবি পাথরের একটি আংটি কনে চ্যানকে পড়িয়ে দেন জুকারবার্গ।

বিয়ের ৯ বছর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় চ্যানের সঙ্গে পরিচয় হয় জুকারবার্গের। পরিচয়টাও ছিল মজার। মার্ক জুকারবার্গের সাথে প্রিসিলা চ্যান এর প্রথম দেখা হয়েছিলো ২০০৩ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটা টয়লেটের লাইনে। এই পরিচয় থেকেই প্রণয়। এই দীর্ঘ নয় বছরের প্রণয়ে সব সময়ই একসঙ্গে থেকেছেন তাঁরা। এর আগে এই জুটির ব্যক্তিগত সম্পর্কের তথ্য ফাঁস করেছিলেন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। ২০১১ সালের জুন মাসে প্রিসিলা চ্যান ও মার্ক জুকারবার্গ এনগেইজড এবং আগামী বছর তাঁরা বিয়ে করবেন বলে জানিয়েছিলেন বিল গেটস। জুকারবার্গ ও তাঁর বান্ধবী প্রিসিলা চ্যান বিয়ের আগে থেকেই এক বাড়িতে থাকতেন। তাঁদের ফেসবুক রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে লেখা ছিল ‘ইন অ্যা রিলেশনশিপ’। বিয়ের পরে তা পাল্টে লেখা হয় ‘ম্যারেড’।

যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় শীর্ষ দাতা জুকারবার্গ:

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের পত্নী প্রিসিলা চ্যান ২০১২ সালে দাতব্য কাজে ব্যয় করা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। ২০১২ সালে প্রায় ৫০ কোটি ডলার দাতব্য কাজে ব্যয় করেছেন জুকারবার্গ ও তাঁর পত্নী প্রিসিলা চ্যান।

মার্ক জুকারবার্গ পৃথিবীর সেরা সিইও:

তারুণ্যের জয় আটকিয়ে রাখা যায় না। বাঁধ ভাঙ্গা তীব্র জোয়ারে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে তারুণ্যের এই তরী পৌঁছাবেই। আর সেই প্রমাণ আবারও বিশ্ববাসীর সামনে হাজির করলেন তরুণ উদ্যোক্তা ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী পরিচালক (সিইও) মার্ক জুকারবার্গ। অসংখ্য অর্জনের এই নাবিক ২০১৩ সালে পৃথিবীর সেরা সিইও নির্বাচিত হয়েছেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্ল্যাসডোরের এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পুরো ১২ মাসের সব ধরনের কর্মকাণ্ডকে বিবেচনায় নিয়ে কর্মীদের গোপন জরিপ নেওয়া হয়। বিশ্বের অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে আর্থিকভাবে সফল করা অনেকাংশেই সিইও পদের ওপর নির্ভর করে। যোগ্য নেতৃত্বের বিচারে এবং কর্মীদের কাছে অত্যান্ত জনপ্রিয়তার কারণেই বিশ্বের সেরা সিইও নির্বাচিত হয়েছেন মার্ক জুকারবার্গ। নিজের অফিসের কর্মীদের ৯৯ ভাগ জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে জুকারবার্গ এ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন।

বাৎসরিক “১ ডলার” বেতন ক্লাবে নাম লেখালেন মার্ক জুকারবার্গ!

বাৎসরিক ১ ডলার বেতন প্রথায় এবার নাম লেখালেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জুকারবার্গ। তবে তিনি এখান থেকে আর কিছু পাবেন না এমন কিন্তু নয়। ২০১২ সালে ফেসবুক পাবলিক করপোরেশনে পরিণত হওয়ার পর তার ব্যক্তিগত শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটিতে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৩০ কোটি ডলার। এক ডলার পারিশ্রমিক নেওয়াটা এখন সাংকেতিক একটি পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। নিয়মানুযায়ী কোম্পানি পারিশ্রমিক দেয় তার প্রত্যেকটি কর্মচারীকে। আর তাই হয়তো সিইওদের নামমাত্র পারিশ্রমিক নেওয়ার একটি প্রথা তৈরি হয়েছে। ১৯৯৮ সালে প্রযুক্তি দিকপালদের মধ্যে স্টিভ জবস অ্যাপলের সিইও পদে ফেরার পর ১ ডলার বেতনে কাজ শুরু করেছিলেন। তারপর থেকে অনেকেই তার দেখানো পথে হাটতে শুরু করেছে।

ফেসবুককে নিয়ে মার্ক জুকারবার্গের নতুন পরিকল্পনা:

সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ১০০কোটি। নতুন পরিকল্পনা গ্রহন করে ৫০০ কোটিতে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন এর সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুকারবার্গ এজন্য ফেসবুককে আরো আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০০ কোটিতে নিয়ে যেতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

Sort:  

You got a 3.63% upvote from @minnowvotes courtesy of @rudrokingkhan!

You have been defended with a 7.69% upvote!
I was summoned by @rudrokingkhan.