বোবা ধরা!

in #esteem6 years ago

image
আপনি একা ঘুমিয়ে আছেন । আপনি ঘুমের মধ্যে দেখছেন- একটা লোক আপনাকে খুন করতে আসতেছে। হাতে বিশাল এক অস্ত্র । সেই মুহুর্তে আপনি খুব জোরে দৌড় দিতে চাচ্ছেন । কিন্তু নড়তে পারছেন না। কেমন যেন একটা অসাড়তা অনুভব করছেন দুই পায়ে। অনেকে ভয়ে চিৎকার করতে চাচ্ছেন, কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ আসছে না । ঘুমের মধ্যে একটা কেমন যেন একটা সাউন্ড করলেন , তারপর ঘুম ভেঙ্গে গেলো আপনার।

এই দৃশ্য সবার জীবনেই কখনো না কখনো ঘটেছে । একে “বোবা ধরা” বা ঘুম বেরাম বলে। এটা হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়া বা ঘুম থেকে জেগে উঠার সময়ে শরীরের কোন অংগ-প্রত্যংগ নাড়াতে না পারার একটি অভিজ্ঞতার নাম । অন্যভাবে, যখন কাউকে বোবায় ধরে, তখন সে তার শরীরের কোন অংগ-প্রত্যংগ নাড়াতে পারে না । যাকে মেডিকেলের ভাষায় বলে ক্যাটাপ্লেক্সি । অনেকের SLEEP PARALYSIS ও হতে পারে । অনেকের গোঙানির শব্দ করতে পারেন , কিন্তু ঠিক মত কথা উচ্চারন হয় না।

বোবায় ধরা ব্যক্তিটি প্রায়ই একটি ভয়ের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যায়, ভয়ের কোন দৃশ্য দেখতে পারে (যেমন, ঘরের ভেতরে কারো অনাকাংখিত উপস্থিতি) ।
এই রোগের শারীরিক কারণটা খুব সিম্পল। আপনি যখন ঘুমিয়ে পড়েন আপনার মস্তিষ্ক আপনার মাস্‌লে সিগন্যাল পাসিং বন্ধ করে দেয় যাতে আপনি স্বপ্ন দেখে শারীরিক ভাবে সেটা অ্যাক্ট করা শুরু না করে দেন। এতে আপনি আহত হতে পারেন। অনেকে যে স্বপ্নে দেখে হাটাহাটি করে, তাদের শুধু স্লিপ প্যারালাইসিস হয় না ।

কারো কারো ক্ষেত্রে ঘুম ভাঙার পরও মস্তিষ্ক সাথে সাথে মাস্‌লে সিগন্যাল পাসিং শুরু করে না। ফলে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পরও আপনি সাথে সাথে মাস্‌ল মুভ করাতে পারেন না। সাধারণত ঘুমের রুটিন অনিয়মিত হলে এটি হতে পারে।

বলা হয়ে থাকে যারা দিনে বেশি ঘুমায় , মোটা মানুষ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের বোবায় বেশী ধরে । অনেকের ধারনা – বোবায় ধরা মানুষকে ছোঁয়া দিলেই বোবার জিন চলে যায় । ধারনা ভুল , এটাই থাকেই সামান্য কয়েক সেকেন্ড , তাই নিজে নিজে চলে যায় ।

ধরে নেওয়া হয় REM sleep এ বিঘ্ন ঘটার কারণে বোবায় ধরা ব্যপারটি ঘটে। বোবায় ধরার সাথে কিছু মানসিক রোগ যেমন narcolepsy, migraines, anxiety disorders, and obstructive sleep apnea এর যোগসুত্র আছে বলে ধরা হয়। তবে, এসব মানসিক রোগ না থাকলেও একজন ব্যক্তি বোবায় ধরা এ আক্রান্ত হতে পারে। যখন অন্য কোন রোগের সাথে মানসিক রোগের যোগসূত্র থাকে, তখন সেই মানসিক রোগের চিকিৎসা করলেই বোবা ধরা অটো ঠিক হয়ে যায় ।