খাওয়ার বেলাতে আমি খুব যে বেশি খুঁত-খুঁতে তা নয় ,কিন্তু অত্যাধুনিক ফাস্ট ফুডের দোকানের চেয়ে কোন সবুজ গ্রামের সরলা গৃহিণীর হাতে রান্না করা আঞ্চলিক খাবারই আমাকে টানে সব সময় ।অঞ্চল ভিত্তিক খাবার গুলো কেন জানি না সেই এলাকাতে বসে খেতেই ভাল লাগে ।তাই বার বার ছুটে গিয়েছি নানা জায়গায় নানা খাবারের লোভে ।
কিছু আঞ্চলিক খাবারের নাম আগে বলে নেই ,খাবার বলতে সেখানে যে শুধু ভাত ,মাছ ,মাংস থাকবে আমার কাছে ব্যাপারটা সেরকম নয় ।সেখানে পানিয়ও স্থান পায় অনায়াশেই ।অঞ্চলিক খাবার গুলো সবসময় সে অঞ্চলের পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুযায়ী যে সব উপাদান পাওয়া যায় তার উপর ভিত্তি করেই বিকাশ লাভ করে ।যেমন কোন এলাকা নদীর কিনারায় ,সেখানে মাছ বেশি পাওয়া যাবে আর সেখানকার খাবারও হবে মাছ ভিত্তিক ,এটাই স্বাভাবিক ।
আবার যে অঞ্চলে সব সময় পানি থাকে না সেখানে মানুষ সারা বছর মাছ পাবে না ,আর না পাওয়ার দরুন তারা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করে ব্যবহার করবে, না হলে অন্য কোন সংরক্ষণ এর পন্থা বের করবে।যাক বিশ্লেষণে না যাই ।খুলনায় চিংড়ির মালাইকারী বা কেওড়া ফলের টক , চাঁপাই-নবাব-গঞ্জ এলাকার কালাইয়ের রুটি সাথে রাজ হাঁসের মাংস ,ময়মনসিংহের চ্যাপা শুঁটকি ভর্তা ,সিরাজগঞ্জ এর গরুর দুধের পায়েস ,মধুপুরের কাঁচা আনারস ভাঁজি ,হাওড়ের পাবদা মাছের ঝোল ,আদিবাসী দের বিভিন্ন উৎসবের বিশেষ পানিয় আরো অনেক কিছুই আছে ।সত্যি কথা বলতে আমাদের দেশ অঞ্চলিক খাবারে স্বয়ংসম্পূর্ন ।
এখন মূল কথায় আসি ,যে খাবার নিয়ে বলার জন্য এত কথা বললাম সেটি অতি সাধারণ কিন্তু খেতে অনন্য এক খবার নাম যার সিধল ।বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল কুড়িগ্রাম যার জন্মস্থান ও আবাস ভূমি ।আমি প্রথম “সিধল” এর সাথে পরিচিত হই আমার বড় ভাইয়ের বিয়েতে গিয়ে ।দুই বছর আগে খেয়েছি স্বাদ মুখে লেগে আছে আজো ।অনেক ভাল ভাল দামি দামি খাবারের স্বাদ “সিধল” এর স্বাদের কাছে মলিন ।
এত সিধল সিধল করছি আসলে “সিধল” বস্তুটি কি ??
সহজ বাংলায় “এক প্রকার শুঁটকী ,না ভুল শুনেননি এক ধরণের শুঁটকী ।”
অঞ্জন-নচিকেতা-সুমন এর যৌথ গাওয়া গান ,”খাওয়ার গান” এ একটা লাইন আছে ,”চুইনগাম এর বুদবুদ টা তৈরি করা শক্ত খুব” তেমনি সিধল বানানোও কম শক্ত নয় ,আর ঝামেলার জন্যই অধুনিক গৃহ বঁধুরা এখন সিধল তৈরি করেন না বললেই চলে ।এত কথা না বলে প্রস্তুত প্রণালী দিকেই হাটি ।
সাধারণত গ্রামে মাছ সংরক্ষণ করার একটা ভাল পদ্ধতি হল এই সিধল।বর্ষা মৌসুমে প্রচুর মাছ ধরা হয় গ্রাম গুলিতে।রেফ্রিজারেটর না থাকায় তিন পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণ করে গ্রামের গৃহ বধূরা।
লেখার প্রথমেই বলেছি এলাকা ভিত্তিতে আঞ্চলিক খাবার বিভিন্ন রকম হয় ।যেহুতু উত্তরাঞ্চল একসময় পিছিয়ে ছিল, ছিল না নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ (এখন অবশ্য অন্য রকম চিত্র)। ফ্রিজার ছিল না সবার ঘরে আবার বর্ষায় পাওয়া যেত প্রচুর মাছ তাই সেখানে এই পদ্ধতিতেই মাছ সংরক্ষণ করা হত ।তাই সেখানে যে মাছ সংরক্ষণ করা হবে সে মাছকে সেদ্ধ করে শীল পাটায় বেটে ভর্তা বানানো হয় তারপর এর সাথে কচুর কাণ্ড সিদ্ধ করে তারও পেস্ট বানানো হয় ,এক্ষেত্রে কালো কচুকেই প্রাধান্য দেয়া হয় । এরপর এই দুই পেস্টকে একত্রে মিশিয়ে ছোট ছোট আকারের পাতলা গোল গোল পিঠার মত বানিয়ে রোদে শুকানো হয়।খুব ভাল করে শুকিয়ে গেলে,এই গোলগোল পিঠে আকৃতির সিধল গুলিকে তুষের ছাই এর মধ্যে দুই থেকে তিন মাস রেখে আবার রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হয়। এর পর এই গোল গোল সিধল গুলির ওপর ছাইয়ের কালো এক আস্তরণ পরে ।পরে এর গা থেকে কালো আস্তরণ তুলে ফেলে বা চেঁচে ফেলে এগুলিকে কাঁচেরবয়ামে বায়ু রোধক করে সংরক্ষণ করা হয়।
এই গুলি কে খেতে হলে সুন্দর করে রান্না করে আপনার প্রয়োজন মত সবজি, যা মাছের সংগে যায়,তা দিয়ে বা ভর্তা করে ।ভর্তা করতে গেলে আবার খাবার সোডা ব্যবহার করতে হয় ।আর দক্ষ হাতে রান্না হলে স্বাদ ও গন্ধ হবে অতুলনীয়।জল আসার মতই,তবে তৈরি প্রক্রিয়া তা একটু কঠিন এই যা। তবে এখন অনেকে সহজ প্রক্রিয়ায় এটি তৈরি করা যায়।তবে একটি কথা আছে তো পুরান চাল ভাতে বাড়ে ,তাই বলছি আধি পদ্ধতিতে তৈরি করা সিধল সব সময়ই স্বাদে অনন্য ।
এরপর কুড়িগ্রাম গেলে খেতে ভুলবেন না অনন্য স্বাদের “সিধল” ।।
What an appetizing dish!
It made my tongue watery. I like those foods that are prepared by maintaining the old system. I'm waiting for that very day when you're gonna treat me with this food.
ভাই- চাইলে আপনিইতো জিনিসটা বানিয়ে খাওয়াতে পারেন....আমি না হয় হেল্প করবো.... রোজা-রমজানের দিন...জিহ্ববায় পানি এসে অন্তত তৃষ্ণাটা মিটে গেল..... রোজা কি হালকা হয়ে গেল?
আপনিতো মনে হয় ০.০২ ডলার কামিয়েই ফেললেন....
হ্যা তাই তো দেখছি ।ধন্যবাদ ।
✅ @mehedi1994, I gave you an upvote on your first post! Please give me a follow and I will give you a follow in return!
Please also take a moment to read this post regarding bad behavior on Steemit.
your dish looks fantastic
Thank you sir .This is Bangladeshi local food .In future you will get many other post with photo about Bangladeshi local and street foods .
Again ,Thank you for your comment .