মেয়েদের মাসিকের A to Z-সব মেয়েদের জানা উচিত-information related to female period

in #girl6 years ago

পিরিয়ড বা মা‌সিক: মেয়েদের জন্য জরুরি কিছু তথ্য
মে‌য়ে‌দের বয়:স‌ন্ধিকা‌লে পদার্প‌ণের প্রথম বৈ‌শিষ্ট্যই ঋতুস্রাব বা পি‌রিয়ড (Period)। এ‌কে ‘মা‌সিক’-ও ব‌লা হ‌য়ে থা‌কে। প্র‌ত্যেক মে‌য়ে‌দের জন্য এটি এক‌টি শরীরবৃত্তীয় প্র‌ক্রিয়া। যে প্র‌ক্রিয়ার অংশ হি‌সে‌বে প্র‌তি মা‌সেই মে‌য়ে‌দের পি‌রিয়ড বা মা‌সিক হ‌য়ে থা‌কে।
leu-23.jpg
নারী‌দেহ‌কে সুস্থ্য ও গর্ভধারণে সক্ষম কর‌তে প্রতি মাসের নি‌র্দিষ্ট তা‌রিখ থে‌কে স্বাভা‌বিক নিয়‌মে ক‌য়েক‌দিন ব্যাপী পি‌রিয়ড হয়। এ সময় মেয়েদের জরায়ু থেকে কার্ভিক্স পার হয়ে জননেন্দ্রিয় দিয়ে রক্ত নির্গত হয়। এই অবস্থার অর্থ তাদের শরীর স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে; স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় হরমোন পাচ্ছে শরীর। তবে বি‌শেষ কিছু অ‌নিয়ম ও অব‌হেলার কার‌ণে মে‌য়ে‌দের মাসি‌কের সমস্যা দেখা দেয়। মা‌সি‌কের এসব সমস্যার ম‌ধ্যে অ‌নিয়‌মিত মা‌সিক, সাদা স্রাব, তল‌পে‌টে অস্বাভা‌বিক ব্যাথা ইত্যা‌দি অন্যতম।
মা‌সিক চলাকা‌লীন দৈ‌হিক প‌রিবর্তনঃ
নারীর পিরিয়ড তাকে প্রতি মাসে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। এই অবস্থা গড়ে ২৮ দিন পর্যন্ত থাকে। এ সময়ে শরীরে এস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ে। ব্রন দেখা দেয়া সহ নানা রকম বদল ঘটে। মা‌সিক চলার সময়ে মেয়েদের শরীরের ভিতরে এবং বাইরে কী কী পরিবর্তন হয়?

১) মা‌সি‌কের সময় মে‌য়ে‌দের স্বাভা‌বিক চিন্তা করার ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়। তখন সময়ে সময়ে পেট ব্যথা, পিঠ ব্যথা, বমি বমি ভাব, যৌন কামনা, এসবকিছু‌ মেয়েদের চিন্তাপ্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।

২০১৪ সালে পেইন জার্নালের গ‌বেষণা প্র‌তি‌বেদ‌নে বলা হয়েছে, পিরিয়ডের সময় মেয়েদের কিছু কিছু বিষয়ে মনোযোগ, মনোযোগের সময়কাল এবং দুটি কাজের মধ্যে মনোযোগ ভাগ হয়ে যাওয়া ও পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি বাধাগ্রস্ত হয়। সুতরাং বোঝা যাওয়ার কথা যে, পিরিয়ডের সময় মেয়েদের ব্যথা স্নায়ু ক্ষমতার বাইরে।

২) মা‌সি‌কের সময় মে‌য়ে‌দের গলার স্বর প‌রিবর্তন হতে পারে। স্বরতন্ত্র এবং নারীর জননেন্দ্রিয়ের কোষগুলি একই ধরনের এবং হরমোনের কারণে তারা একই রকম আচরণ করে।

২০১১ তে এথোলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি জ‌রি‌পে বলা হয়েছে, নারীর কণ্ঠ শুনে পুরুষেরা বুঝতে পারে ‌যে তার পিরিয়ড চলছে। পুরুষদের তিনটি গ্রুপকে নারীদের ভয়েসের রেকর্ডিং শোনানো হয়েছিল। এই রেকর্ডিংগুলিতে নারীরা মাসের বিভিন্ন সময়ে এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুণেছে। এই আওয়াজ থেকে পুরুষেরা শতকরা ৩৫ ভাগ সময় পিরিয়ড চলাকালীন আওয়াজ চিনতে পেরেছে।

৩) ‌নারীরা মা‌সি‌কের সময় সেক্স কর‌লেও গর্ভবতী

হতে পারে। কারণ, পিরিয়ডের সময় নারীদের শারীরিক সক্রিয়তা বেশি থাকে। মনে রাখা দরকার ‌যে, এ সময় ‌কোন নারী যদি যৌন মিল‌নে লিপ্ত হয়, তাহ‌লে সে গর্ভবতী হতে পারে। আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, যাদের পিরিয়ড ২৮ থেকে ৩০ দিন মেয়াদী, তাদের গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে যাদের পিরিয়ড ২১ থেকে ২৪ দিন মেয়াদী তাদের গর্ভবতী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪) ‌মে‌য়ে‌দের প্রতি মা‌সি‌কে গড়ে এক কাপেরও কম রক্ত নিঃসৃত হয়। মেয়েদের হয়ত মনে হতে পা‌রে; শরীর থেকে রক্তের বিরাট প্রবাহ বের হয়ে যাচ্ছে, বক্স বক্স প্যাড হয়ত ব্যবহৃত হয়, কিন্তু নিঃসৃত রক্তের পরিমাণ কম। সাধারণত প্রথম দুই দিন বেশি রক্ত নিঃসৃত হয়। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের মতে, প্রতি মাসে কয়েক চামচ থেকে বড়জোর এক কাপ পরিমাণ রক্ত বের হয় শরীর থেকে। যদি ব্যবহার শুরু করার দুই ঘণ্টার কম সময়ে প্যাড সম্পূর্ণ ভিজে যায় এবং বদলানোর মত হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি স্বাভাবিকের বাইরে এবং তখন অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মেয়েদের মাসিক ২ থেকে ৭দিন পর্যন্ত চলতে পারে।

৫) মা‌সিক চলাকালীন সময় মেয়েদের শরীরের অন্যান্য জায়গা দিয়েও রক্ত বের হতে পারে। সাধারণত পিরিয়ডের সময় নারীদের জরায়ু থেকে রক্ত নির্গত হয়। তবে মা‌সি‌কের কারণে তাদের চোখ, নাক এবং মুখ দিয়েও রক্ত বের হতে পারে।

অনেক নারীই জানেন না যে তার মা‌সিক বা ঋতুস্রাব সঠিক নিয়মে হচ্ছে, নাকি হচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান আর বান্ধবীদের মাঝে আলোচনা। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই নারীদের এই মা‌সিক হয়ে থাকে। মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এটি একবার করে হয়ে থাকে। তবে মাসে ২-৩ বার হওয়া বা একেবারেই না হওয়া একটি খারাপ লক্ষণ। তবে হঠাৎ করে এর স্বাভাবিক সময় পরিবর্তন হওয়াটাও খারাপ একটি লক্ষণ। এর জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ কোন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
মা‌সি‌কের লক্ষণঃ

বয়:স‌ন্ধিকা‌লে পি‌রিয়ড বা মা‌সিক হওয়ার পূ‌র্বে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। আবার যে কোন নারীরই মা‌সিক শুরুর সময় বা পূ‌র্বেও কিছু লক্ষণ দে‌খে বোঝা যায় যে মা‌সিক হ‌বে বা হ‌চ্ছে। নি‌চের লক্ষণগুলোয় বোঝা যায় কিশোরীর মা‌সি‌কের সময় হয়েছে!

  • অবসাদ হয়;

  • তলপেটে ব্যাথা;

  • স্তন বা নিপ‌লে ব্যাথা;

  • মাথা ব্যাথা করা;

  • মাথা ঘোরানো;

  • মেজাজের পরিবর্তন হওয়া;

  • বিরক্তিকর ভাব বেড়ে যাওয়া;

  • যৌনানুভূ‌তি বৃ‌দ্ধি পে‌তে পা‌রে;

  • খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়া;

  • ওজন বৃদ্ধি পাওয়া;

  • প্রচুর গ্যাস হয় এবং ঢেকুর উঠে;

  • কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া দেখা দেয়;

  • মুখে ব্রণ উঠা।
    মা‌সি‌কের সময়কালঃ

সাধারণত ১২ থে‌কে ৪৫ বছর বয়সী সব নারীরই মা‌সিক বা ঋতুস্রাব হওয়ার সময়কাল হয়ে থাকে ৩-৫ দিন পর্যন্ত। কিন্তু এর স্বাভাবিক সময়কাল হল কমপক্ষে ২ দিন থেকে ৭ দিন পর্যন্ত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭ দিনের একটু বেশি সময় ধরে অল্প অল্প করে রক্তস্রাব হওয়াটা স্বাভাবিক; তবে যদি রক্তপ্রবাহ অনেক বেশি হয়ে থাকে তাহলে তা অবশ্যই অস্বাভাবিক।
download1823887571.jpg

একেকজন নারীর ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে মা‌সিক বা পি‌রিয়ড হয়ে থাকে। কারও অনেক কম হয়ে থাকে, কারও অনেক বেশি হয়ে থাকে আবার কারও মাঝামাঝি পর্যায়ে হয়ে থাকে। মে‌য়ে‌দের মা‌সি‌কে স্বাভাবিক রক্তস্রাবের পরিমাণ কেমন; তা প্র‌ত্যেক মে‌য়ে‌দের জানা দরকার।

অল্প অল্প করে দিনে কয়েকবার হওয়াটা স্বাভাবিক। দিনে ৩ টা প্যাড পরিবর্তন করাটাও স্বাভাবিক। তবে মধ্যরাতে একই পরিমাণ প্যাড পরিবর্তন করাটা অস্বাভাবিক। কেননা অ‌নে‌কেরই স্বাভাবিক নিয়মেই রাতে মা‌সিক একটু কম হয়ে থাকে। কারণ শারীরিক পরিশ্রমের উপরে এর পরিমাণ বাড়তে পারে, আবার রাতে পরিশ্রম একেবারেই হয় না বলে এর পরিমাণও কম হয়ে থাকে।

মা‌সিক বা ঋতুস্রাবের প্রথম কয়েকদিন এর প্রবাহ একটু বেশি থাকবে এটি স্বাভাবিক কিন্তু তাই বলে প্রতি ঘন্টা বা প্রতি ২ ঘন্টায় প্যাড পরিবর্তন করাটা অস্বাভাবিক। এমন অস্বাভাবিকতা দেখামাত্র ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হওয়া খুবই জরুরি।
স্বাভাবিক মা‌সি‌কের লক্ষণঃ

মে‌য়ে‌দের ঋতুস্রাব প্র‌তি মা‌সেই শরীর বৃ‌ত্তীয় প্র‌ক্রিয়ার অংশ হি‌সে‌বে ঘ‌টে থা‌কে। যা সম্পূর্ণ প্রাকৃ‌তিক। ত‌বে অ‌নেক সময় বি‌ভিন্ন অ‌নিয়ম ও সমস্যার কার‌ণেও মা‌সি‌কের স্বাভা‌বিক গ‌তি নষ্ট ক‌রে সমস্যার সৃষ্টি ক‌রে। আর সমস্যা দেখা দি‌লে অবশ্যই তা নি‌য়ে আ‌লোচনা করা বা চি‌কিৎস‌কের স্বরণাপন্ন হ‌তে হ‌বে। নি‌চে মা‌সিক বা পি‌রিয়‌ডের স্বাভা‌বিক লক্ষণগু‌লো তু‌লে ধরা হ‌লো:

  • পে‌টে ব্যাথা হ‌তে পা‌রে;

  • হালকা মাথাব্যথা হবে;

  • স্ত‌নে ব্যাথা হ‌বে;

  • ক্ষুধা লাগবে;

  • শারীরিক অনুভূতি দৃঢ় হবে;

  • যৌন কামনা বাড়‌তে পা‌রে;

  • খিটখিটে মেজাজ থাকবে;

  • হালকা মাথাব্যথা হবে;

  • মুখে ব্রণ হতে পারে;

  • ঘুমের সমস্যা হতে পারে;

  • মাঝে মাঝে বমি ভাব হতে পারে।
    পরবর্তী মা‌সি‌কের মধ্যবর্তী সময়কালঃ

স্বাভাবিকভাবেই জানা যায় যে, বর্তমান মা‌সিক থেকে পরবর্তী মা‌সি‌কের মধ্যবর্তী সময়কাল হয়ে

থাকে ২৮ দিন। তবে গবেষণায় উঠে এসেছে যে, এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। বর্তমান মা‌সিক থেকে

পরবর্তী মা‌সি‌কের মধ্যবর্তী সময়কাল ২১ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এই সময়কাল ২১ দিনের কম এবং ৩৫ দিনের বেশি হওয়াটা অস্বাভাবিক। তবে মা‌সি‌কের ক্ষেত্রে যে কোন জটিলতায় অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হওয়ার মান‌সিক প্রস্তু‌তি থাক‌তে হ‌বে।
প‌রি‌শে‌ষে ম‌নে রাখা জরু‌রি যে, মা‌সি‌কের সমস্যা থে‌কে প‌রিত্রা‌ণের জন্য স‌চেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। স‌চেতনতার ম‌ধ্যেও য‌দি কখ‌নো সমস্যা দেখা দেয়, ত‌বে অবশ্যই অ‌ভিজ্ঞ কোন চি‌কিৎস‌কের পরামর্শ নি‌তে হ‌বে।

Sort: