শৈশব স্মৃতিকথা

in BDCommunity3 years ago

IMG_20210617_113401298.jpg

আমার নানুর বাড়ির সামনে এই জায়গা। অনেকদিন যাওয়া হয় না। নানুর বাড়িতে গেলেও এইদিকটাতে বেশ কয়েকবছর আসা হয়নি। বাড়ির নিচে ভাড়াটিয়ার পিচ্চি ছেলে এসে বললো পুকুরের এদিকটাতে নাকি গ্রামের ছেলেরা এসে জাম পারতেছে। আম্মা আমাকে বললো যেয়ে কিছু জাম আনতে। বাসার তিন পিচ্চি কে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম জাম আনতে। গিয়ে আর জাম গাছ খুঁজে পাইনা। পরে দেখি পুকুরের ধারে জঙ্গলের সাথে একটা জাম গাছ আর গাছে তিনজন ছোট ছোট ছেলে জাম পারতেছে। গিয়ে বললাম কিছু জাম দিতে কিন্তু ওরা এমন ভাব কল যেনো আমার কথা শুনতেই পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরে বলে ভাই আমরা নিজেরাই পাইনা আপনাকে কি দিবো। আপনাকে কিছু ডাল ভেঙ্গে দিচ্ছি আপনি ওখান থেকে খুলে নিতে পারেন। কিন্তু আমি নিজে দেখতেছি ওদের হাতে পলিথিন ভর্তি জাম। সাথে ভাড়াটিয়ার যে পিচ্চি কে নিয়ে গেছিলাম ওর তো দেখি মাথা গরম। সে ফাপর নিতে লাগলো জানো এই গাছ কাদের? যাদের গাছ তাদেরকেই জাম দিতে চাইতেছো না। নিছে নামলে তাদের হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি পর্যন্ত দিতেছে। আমিতো অবাক এই পিচ্চি করে কি। ওকে চুপ করায় দিয়ে গাছের উপরে যারা ছিলো ওদের বললাম আমাকে অল্প কিছু জাম দাও এর পরে তোমরা যত খুশি পারো। এরপরে আমাকে কিছু ডাল ভেঙ্গে দিলো। দেশি জাম খেতে ভালই লাগছিলো। তিন পিচ্চির হাতে তিনটা ছোটো ছোটো ডাল ধরায় দিয়ে আমি বড় একটা ডাল নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

IMG_20210617_115641407_2.jpg

ছোটো বেলায় যখন এদিকটায় আসতাম অনেক গাছ ছিলো আরও জঙ্গল হয়ে ছিলো। এখন গাছপালা অনেকটাই কমে গেছে। তাল গাছ, জাম্বুরা গাছ, আম গাছ, বাবলা গাছ ছিলো। এখন কোনটাই নেই শুধু একটা জাম গাছ দাড়িয়ে আছে। বাবা চাকরি থেকে অবসর নেবার পরে আমার প্রাইমারী ও হাই স্কুল নানু বাড়ি থেকেই পড়াশুনা করা হইছে। এখানেই আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। শীতকালে ভোরে বাবার সাথে এই জমির দিকে চলে আসতাম আলু তুলতে। গ্রামের অনেক মহিলা পুরুষ আমাদের জমিতে কাজ করতো। প্রতিদিন সকালে তাদের সাথে যেয়ে আলু তুলতাম। এর পরে আলু বাঁশের ঝাঁকাতে করে পুকুর ঘাঁটে এনে ধুয়ে বস্তাতে ওজন করে রেখে দিতো। সব আলুর ওজন মাপা হয়ে গেলে ভ্যানে তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়া হতো বিক্রির উদ্দেশে। কিন্তু প্রতিদিন আবার বাবা সাথে নিয়ে যেতো না। কারন জমিতে গেলে সকালে পড়াশুনা হতো না। নতুন আলু জমি থেকে তুলে চুলায় আগুনে দিয়ে পুড়িয়ে খেতে অনেক মজা লাগতো। বাসায় যখন কাজিনরা আসতো তখন স্কুল থেকে ফেরার পরে আমরা জমির দিকে যেয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে নিজেদের জমি থেকে নিজেরাই আলু চুরি করে আনতাম। এরপরে ছাদের উপরে আগুন জ্বালায়ে ওর মধ্যে আলু ছেড়ে পুড়িয়ে খেতাম। আলু শেষ হলে ভুট্টার সিজন শুরু হতো। জমিতে ভুট্টাও লাগাইছি। কাঁচা ভুট্টা পোড়া অনেক মজার। আম্মা ভুট্টার বড়া বানায় দিতো। প্রথমবার খেয়ে এতো ভালো লাগছিলো এর পরে থেকে ভুট্টা পেলেই বাসায় এনে বড়া বানায় খেতাম। ভুট্টার জমির ভিতরে ঢুকতে অনেক ভয় করতো। কিছুদুর গেলেই পিছনে তাকালে আর কিছু দেখা যেতো না। এইজন্য জমির সামনে থেকেই ভুট্টা ছিঁড়ে নিয়ে চলে আসতাম। ধান লাগানোর সময় শুধু জমিতে যেতাম না কারণ ওই সময় জমিতে প্রচুর কাঁদা থাকতো। কিন্তু ধান কাঁটার সময় আবার অনেক যেতাম। ধান গাছ কেটে এর পরে মেশিনের সাহায্যে ধান আলাদা করা হতো। এটি দেখতে অনেক ভালো লাগতো আমার। কিছু বাসায় এনে সেই ধান সিদ্ধ করা হতো। ধান শুকিয়ে পরে মেশিনের সাহায্যে চাল বানানো হতো। এরপরে সেই চাল ঢেঁকি দিয়ে ভেঙ্গে চালের আটা বানাতো নানি। চালের রুটি, কালাই পিঠা, পাকান পিঠা আরও অনেক রকমের পিঠা বানানো হতো। বাসায় সেই সময় মোটামুটি একটা উৎসব চলতো। সব খালা মামাদের বাসায় পিঠা পাঠানো হতো। অনেক মজার একটা আমেজ ছিলো। কতদিন এরকম পরিবেশ দেখিনা আর। বড় হবার সাথে সাথে আস্তে আস্তে সব কিছুই হারিয়ে গেছে।

Sort:  

Hi, I have manually curated your content as you have posted a photo that I found interesting. Your post will be included in my Photophile series of posts in my blog. Keep on sharing great photos!

Here's a slice of !PIZZA for you!

Connect

Trade


@amishahi! I sent you a slice of $PIZZA on behalf of @photophile.

Learn more about $PIZZA Token at hive.pizza (3/10)


Congratulations @amishahi!
You raised your level and are now a Minnow!