আম্রপালীর কল্পকথা....!!

in BDCommunity4 years ago

"আম্রপালী" আমের সাথে আমরা সবাই কম-বেশী পরিচিত। আকারে ছোট কিন্তু মিষ্টির দিক থেকে সকল আমকে পেছনে ফেলে দেয় এর স্বাদ। কিন্তু আমরা কি জানি আম্রপালী-র নামকরণের পেছনের কাহিনী?... হয়তো অনেকে জানবেন আবার হয়তো অনেকেরই অজানা। যদিও আমি আমার আব্বুর মুখে শুনেছি এই কাহিনী, এখন নিজের মতো করে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

আম্রপালী ছিলেন একজন নারী যিনি আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আম্রপালী বাস করতেন বৈশালী শহরে । বৈশালী ছিল প্রাচীন ভারতের একটি গণতান্ত্রিক রাজ্য।
তিনি ছিলেন সে সময়ের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নর্তকী । তার রুপে পাগল ছিল পুরো পৃথিবী। এজন্য তাকে রাষ্ট্রীয় আদেশে পতিতা বানানো হয়েছিল। ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী যাকে রাষ্ট্রীয় নির্দেশে পতিতা বানানো হয়। তার আসল বাবা-মা কে তা এখনো অজানা । "মহানামন" নামক এক ব্যক্তি তাকে আম গাছের নিচে কুড়িয়ে পাওয়ায় তার নাম রাখা হয় "আম্রপালী" ।

কিন্তু শৈশব পেরিয়ে কৈশরে পা দিতেই আম্রপালীকে নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায় কারন তার রুপে আশেপাশের সব মানুষ পাগল ছিল । দেশ-বিদেশের রাজা রাজপুত্র এমনকি সাধারণ মানুষ ও তার জন্য পাগলপ্রায় ছিল। সবাই তাকে বিয়ে করতে চাইতো।
এ নিয়ে আম্রপালীর মা-বাবা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন । তারা তখন বৈশালীর সকল গণমান্য ব্যক্তিকে এর একটি সমাধান করার জন্য বলেন ।
তখন বৈশালীর সকল ক্ষমতাবান ব্যক্তিবর্গ মিলে বৈঠকে বসে নানা আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেন যে, আম্রপালীকে কেউ বিয়ে করতে পারবে না কারণ তার রুপ একা কারো হতে পারে না । তাই আম্রপালী-কে হতে হবে সবার । সে হবে একজন নগরবধু।

আম্রপালী সভায় উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্তের পর সে সভায় পাঁচটি শর্ত রাখেন-

১. নগরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় তার ঘর হতে হবে ।
২.প্রতি রাতের জন্য তাকে পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রা দিতে হবে।
৩.একবারে মাত্র একজন তার গৃহে প্রবেশ করতে পারবেন।
৪. কোন অপরাধীর সন্ধানে প্রয়োজনে সপ্তাহে সর্বোচ্চ একবার তার গৃহে প্রবেশ করা যাবে ।
৫.তার গৃহে আসা যাওয়া নিয়ে কোন অনুসন্ধান করা যাবে না ।

সবাই তার সব শর্ত মেনে নেন । দিন দিন আম্রপালী বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন । তার রুপের কথা দেশ-বিদেশে আরও বেশী করে ছড়িয়ে পড়তে থাকে ।

প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যের রাজা ছিলেন বিম্বিসার। তিনি তার সভাসদের থেকে আম্রপালী সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে তাকে কাছে পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন।
তার সভাসদ বলেন,

আম্রপালী কে কাছে পেতে হলে বৈশালী রাজ্য জয় করতে হবে। আরো একটি সমস্যা হলো আম্রপালী মন না চাইলে কারো সাথে দেখা করেন না ।

এত কথা শুনে বিম্বিসারের আগ্রহ আরও বেড়ে গেল । তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ছদ্মবেশে বৈশালী রাজ্যে গিয়ে আম্রপালীকে দেখে আসবেন ।
তারপর বহু কষ্টে অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে তার আম্রপালীর সাথে দেখা করার সুযোগ আসে । আম্রপালীর প্রাসাদ ছিল আম্রকুঞ্জে । আম্রপালী কে এক নজর দেখেই রাজা চমকে উঠেন। এ কোন মানবী নয়, এ যেন সাক্ষাৎ পরী। কোন মানবের এত রুপ হতে পারে না।

এদিকে আম্রপালী প্রথম দেখাতেই বিম্বিসারকে মগধ রাজ্যের রাজা বলে চিনে ফেলেন এবং জানান- তিনি অনেক আগে থেকেই তাকে ভালবাসতেন।
এই কথা শুনে রাজার বিস্ময়ের সীমা থাকে না ।
রাজা সাথে সাথে তাকে তার রাজ্যের রাণী বানানোর প্রস্তাব দেন । কিন্তু আম্রপালী জানান, তার রাজ্যের মানুষ এটা কখন-ই মেনে নেবেন না ।
একথা শুনে বিম্বিসার বৈশালী রাজ্য আক্রমন করে আম্রপালীকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু আম্রপালী তার নিজের রাজ্যের কোন ক্ষতি চান না । তাই তিনি রাজা বিম্বিসারকে তার নিজ রাজ্যে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

বিম্বিসারের একমাত্র সন্তান ছিলেন অজাতশত্রু। তিনিও পিতার মতো আম্রপালীর প্রেমে মগ্ন ছিলেন । তিনি বিম্বিসারকে আটক করে নিজে সিংহাসন দখল করেন এবং আম্রপালীকে পাওয়ার জন্য বৈশালী রাজ্য আক্রমণ করেন । কিন্তু তিনি রাজ্য দখল করতে ব্যর্থ হোন এবং যুদ্ধে মারাত্মক ভাবে আহত হোন । পরবর্তীতে আম্রপালী তাকে সেবা করে সুস্থ করে তোলেন এবং নিজ রাজ্যে ফেরত পাঠান।

তখন ছিল গৌতম বুদ্ধ-র সময়কাল। গৌতম বুদ্ধ তার কয়েকশ সঙ্গী নিয়ে বৈশালী রাজ্যে ভ্রমণে আসেন। সেখানে এক বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসীকে দেখে আম্রপালীর মনে ধরে যায় । তিনি ভাবলেন, দেশ-বিদেশের রাজারা আমার পায়ের কাছে এসে বসে থাকেন আর এত সামান্য একজন মানুষ ।
একথা ভেবে তিনি সেই সন্ন্যাসীকে চার মাস তার কাছে রাখার জন্য গৌতম বুদ্ধকে অনুরোধ করলেন । সবাই ভাবলেন, বুদ্ধ কখনই রাজি হবেন না । কিন্তু গৌতম বুদ্ধ তাকে রাখতে রাজি হলেন।
তিনি বললেন,

আমি শ্রমণের (তরুণ সন্ন্যাসী) চোখে কোন কামনা-বাসনা দেখছি না । সে চার মাস থাকলেও নিষ্পাপ হয়েই ফিরে আসবে।

চার মাস শেষ হল । গৌতম বুদ্ধ তার সঙ্গীদের নিয়ে চলে যাবেন । কিন্তু শ্রমণের কোন খবর নেই । তবে কি আম্রপালীর রুপের কাছেই হেরে গেলেন শ্রমণ ?

সেদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে তরুণ শ্রমণ ফিরে আসেন । তার পিছনে পিছনে আসেন একজন নারী । সেই নারীই ছিলেন আম্রপালী ।
আম্রপালী তখন বুদ্ধকে বলেন,

তরুণ শ্রমণকে প্রলুব্ধ করতে কোন চেষ্টা বাকি রাখেননি তিনি। কিন্তু এই প্রথম কোন পুরুষকে বশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বৈশালীর নগরবধূ আম্রপালী । তাই আজ সর্বস্ব ত্যাগ করে বুদ্ধের চরণে আশ্রয় চান তিনি ।

পরবর্তীতে সব কিছু ত্যাগ করে বাকী জীবন গৌতম বুদ্ধের চরণেই কাটিয়ে দেন ইতিহাস বিখ্যাত সেই রমণী আম্রপালী। এই আম্রপালী নামেই ১৯৭৮ সালে ভারতের আম গবেষকরা 'দশোহরি' ও 'নিলাম'- এই দু'টি আমের সংকরায়নের মাধ্যমে এক নতুন জাতের আম উদ্ভাবন করেন এবং যার নামকরণ করা হয় 'আম্রপালী' ।

mango4967956_1280.jpg

Sort:  

Source
Plagiarism is the copying & pasting of others' work without giving credit to the original author or artist. Plagiarized posts are considered fraud and violate the intellectual property rights of the original creator.

Fraud is discouraged by the community and may result in the account being Blacklisted.

If you believe this comment is in error, please contact us in #appeals in Discord.

সারাজীবন আম খেয়েই গেলাম কিন্তু তার পেছনের কাহিনী টা জানা ছিল নাহ,আজকে প্রথম শুনলাম। ধন্যবাদ ভালো লিখেছেন।

আমিও আজকেই প্রথম জানলাম... তাই ভাবলাম শেয়ার করি

হমম ভালো ছিল👌

!hw ban

Mass plagiarism scam and fraud.

Congratulations @asfekatisha! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You got more than 10 replies. Your next target is to reach 50 replies.

You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

To support your work, I also upvoted your post!

Vlo laglo apu pore..

Thanks dear 🎀