মানুষ বাঁচে আশায়
দেশ বাঁচে ভালোবাসায়
কথাটা কোথায় শুনেছি বা পড়েছি মনে করতে পারছিনা। যেহেতু আমার দুটো করে হাত-পা আছে, নাক-চোখ-কান, ঘ্রাণশক্তি সবই আছে, দেখতে মানুষের গরণ, তাই নিজেকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতেই পারি। যদিও এইসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকলেই মানুষকে মানুষ বলা যায় না যদি তার বিবেক বোধ না থাকে। যেহেতু নিজেকে কিছুটা হলেও বিবেকসম্পন্ন মনে করি, আমারও আর দশজন মানুষের মতো আশা ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
আমার কাছে আশা শব্দটা বেশ আপেক্ষিক এবং বর্ষার আকাশের মত ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তনশীল।
আমি যখন বেশ ছোট তখন আমার চাচা বাম পকেটের ওপরে একটা প্রজাপতি সদৃশ্য বস্তু লাগিয়ে পাড়াময় ঘুরে বেড়াতো। সেই প্রজাপতি আবার রাতের বেলায় আলো দিত। তখন আমার মনে প্রাণে একটাই আশা ছিল যদি আমার ওইরকম একটা আলো দেয়া প্রজাপতি থাকতো!
কিছুদিন পর বুকপকেটের ওপর থেকে প্রজাপতি নেমে গিয়ে শূন্য স্থান দখল করলো ম্যাকগাইভারের সেই আশ্চর্য ক্ষমতা সম্পন্ন ছুরি, তারপর সেই পকেটে গোল্ডলিফ সিগারেটের প্যাকেট, অবশেষে যৌবনে সেই একই বুকপকেটের নিচে স্থান পেল একাধিক যুবতীর অবয়ব।
এখানে আমাকে লুইস ক্যাটাগরিতে ফেললে খুবই অবিচার করা হবে কারণ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেখানে বলেছেন-
ফুলের বনে যার পাশে যাই তারেই লাগে ভালো।
ও রজনীগন্ধা তোমার, গন্ধসুধা ঢালো।
প্রতিটি উঠতি বয়সের যুবক এর কাছে এই পৃথিবীটা রঙিন, ফুলের বনের মতো-সেখানে এই বয়সে একাধিক নারীর প্রেমে পড়াটা দোষনীয় বলে আমি মনে করিনা। কারণ ক্লাস টেনের কোন এক সহপাঠীকে ভালোলাগা এবং ইউনিভার্সিটি তে কারো সাথে প্রেম করা- দুটোই তৎকালীন সময়ের আবেগের বহিঃপ্রকাশ। তুমি যখন ইউনিভার্সিটিতে তোমার প্রেমিকার হাত ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছে তখন ক্লাস টেন পড়ুয়া সেই মেয়েটি পরিণত বয়সে দুই বাচ্চার হাত ধরে হাঁটছে স্কুলের পথে। বাল্য প্রেমের সফলতা নাটক সিনেমাতেই বেশি দেখা যায়, বাস্তব জীবনে সাকসেস রেট খুব কম।
মানুষের আশা বা চাহিদা অনেকটা মাসলো (Maslow) এর সেই বিখ্যাত তত্ত্বের মত কাজ করে। প্রথমে বাসস্থান তারপর নিরাপত্তা, এরপর প্রেম-ভালোবাসা বা বিয়ে, সর্বশেষে পরিচিতি, সামাজিক স্বীকৃতি এবং আত্মতৃপ্তি। এই আত্মতৃপ্তি বা self-satisfaction এর মধ্যে হয়তোবা আরেকটা বিষয় লুকিয়ে আছে সেটা হচ্ছে ধর্মভীরুতা বা পরকালের চিন্তা, যদিও এর পুরোটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত।
একজন মানুষ যৌবনে চোখের দৃষ্টিতে যেখানে হাজারো যুবতীকে ধর্ষণ করেছে সেও শেষ বয়সে পাপ মোচনের প্রত্যাশায় ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে আত্মসমর্পণ করছে।
অপরপক্ষে, সত্তিকারের আশাবাদী এবং ধর্মভীরু লোকজনও রয়েছে যাদের জন্য আজ ও সমাজ এবং দেশটা এতো সুন্দর, কারণ কোন ধর্মই সহিংসতার কথা বলে না।
আমি একজন সাধারন মানুষ তাই আমার আশাগুলি ও এই তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত। আমি আজ আমার সন্তানের চোখে পৃথিবী দেখি, তাদের সাথে খেলি, আমার শৈশবে ফিরে যাই। মানুষ তাদের সন্তানের মধ্যে নিজের শৈশব ফিরে পায় বলেই হয়তো সন্তান এত প্রিয়।
আমি এই লেখা শুরু করেছিলাম দেশের কথা দিয়ে যেখানে দেশকে ভালোবাসার কথা বলা রয়েছে। আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিগত আশা এবং স্বপ্নের একটা ক্ষুদ্র অংশ দেশের জন্য তুলে রাখি তাহলে দেশটা অনেক ভালো থাকবে। আমার এই দেশ ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের এবং দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া। আমরা যে আজ বাংলা ভাষায় কথা বলি তাও রক্তের বিনিময়ে কেনা।এই শহীদদের আত্মা সেদিনই শান্তি পাবে যেদিন এই দেশটা হবে স্বশিক্ষিত, দুর্নীতিমুক্ত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ।
দেশকে ভালোবাসার এই আশা এবং বীজ আমি আমার নতুন প্রজন্মের মধ্যেও বপন করে যেতে চাই। সেই ক্ষুদ্র প্রয়াস এর ফলস্বরূপ নিচের ছবিটি যা আমার মেয়ের নিজের হাতে আঁকা, আমাদের গর্ব স্মৃতিসৌধ।
আমার এই লেখায় কোথাও নিরাশার কথা বলা হয়নি। একজন নিরাশ মানুষ হয়তো শারীরিকভাবে জীবিত কিন্তু মানসিকভাবে মৃত। আমি মনে করি নিরাশা মানেই পরাজিত আর আমি জীবন যুদ্ধে পরাজিত হতে চাই না।
এটা আমার বিডি কমিউনিটি এর পক্ষ থেকে আয়োজিত কনটেস্টের এন্ট্রি। আপনারা যদি বিডি কমিউনিটি কর্তৃক আয়োজিত এই কনটেস্টে অংশগ্রহণ করতে চান তাহলে এই লিংকে ক্লিক করুন
প্রথম দিকে মজা পাইছি, শেষের দিকেও ভালো লাগছে । সব মিলিয়ে ভালো লিখেছেন ।
Dhonnobad vai.
Twitter link-
সুন্দর হয়েছে ভাই। দেশ কে ভালোবাসতে হবে দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেশ প্রেম জাগ্রত করতে হবে।
Dhonnobad vai.
Good writing.. carry on..
Thanks brother.
শেষের চরণগুলো ভাবিয়ে তুললো।