Do you play Gambling?
প্রশ্নটা তীরের মত ছুটে এল আমার দিকে। হয়তোবা পাড়ার বেশকিছু মুরুব্বী শ্রেণীর মানুষ পাশে ছিল বলেই প্রশ্নটা বিজাতীয় ভাষায় করা। আমার পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাস্টারমশাইরা তখনও পর্যন্ত আমাকে Gambling শব্দের অর্থটা পুরোপুরি শিখিয়ে উঠতে পারেননি। যাইহোক মুহূর্তেই বুঝে ফেললাম যে একটু আগে যে কাজটা করে এসেছি প্রশ্নটা সে কারণেই।
সিগারেটের মোড়ক দিয়ে অনেকেই ছোটবেলায় খেলা করার কথা। যার কাছে যত ভিন্নধর্মী মোরক থাকতো সেটার চাহিদা ততবেশি। তখনকার সিগারেটের মোরক অবশ্য এখনকার মতো এতটা আধুনিক ছিল না, প্রতিটি প্যাকেটে একটি করে জিভের মত কাগজ থাকত যার ভেতরে ছিল সিগারেট গুলির অবস্থান। সেই জিভটা ফেলে দিয়ে মোরকটাকে সমানভাবে ভাজ করা যেত এবং তখন এটার নাম হত ‘খোলা’। এখন যেমনটা বিটকয়েন বা হাইভ চাইলে ডলারে রূপান্তরিত করা যায় তেমনি সেই মোরক বা খোলাগুলি টাকার বিনিময়ে কেনা যেত। এই মোরকগুলো দিয়েই বিভিন্ন উপায়ে খেলা হত।
যাই হোক ঈদের দিনের সেমাই হালুয়ার পরিবর্তে বেশকিছু উত্তম-মধ্যম খেয়ে বুঝতে পারলাম এটা আসলে কার কান্ড। আমারই এক প্রাণ প্রিয় বন্ধু খেলায় আমার কাছে সর্বস্ব হারিয়ে বাসায় এসে এইভাবে অভিযোগ করেছিল।
‘কাকা আপনার পোলায় উত্তরপাড়ার বাঁশঝাড়ের তলে খোলা দিয়া জুয়া খেলতাছে’
পাড়ার কথা মনে পড়লেই আজও আমার মস্তিষ্কে সেই উত্তরপাড়ার স্মৃতিগুলো বিদ্যুতের মতো অনুরণন ঘটায়। এটা সেই পাড়ার ছাড়াবাড়ি যেখানে একটু জোরে বাতাস এলেই টুপ করে পাকা আম পড়তো। যেখানে উঠতি বয়সের তরুণীরা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতো গোল্লাছুট খেলায় অথবা উঠানে বৃত্তাকারে মাঝ বয়সী মহিলাদের একে অপরকে চুল আঁচড়ে দেয়ার দৃশ্য।
সময় বহমান। তখন হাফ প্যান্ট ছেড়ে সবেমাত্র ফুলপ্যান্ট পরতে শুরু করেছি, পাড়ার উঠান ছেড়ে বড় মাঠের দিকে পা বাড়িয়েছি। পাড়ার মুরুব্বীদের এড়িয়ে মাঠের কোনায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দক্ষ এক বন্ধুর কাছে সিগারেট খাওয়ার দীক্ষা নিচ্ছি আর খকখক করে কাসছি।
ওই যে বললাম সময় বহমান ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকার দিকে পা বাড়িয়েছি আমার প্রিয় পাড়া এবং বন্ধুদেরকে পেছনে ফেলে। অনেক কষ্টে চোখের অশ্রু লুকানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কখন জানি কপোল গড়িয়ে তা নিচের দিকে নেমেছে টের পায়নি।
যাইহোক আমার পাড়া ছেড়ে মহল্লার গল্প শুরু, পুরনো ঢাকার সিদ্দিক বাজারে আমার অবস্থান। আমি অবাক হয়ে শুনছি সবাই এখানে ‘স’ কে ‘ছ’ উচ্চারণ করছে। আরো মজার ব্যাপার হলো সবাই এখানে মাঝ রাত অব্দি জেগে থাকে আর সকালে হোটেলে লাইন দিয়ে নেহারি আর পরোটা কেনে। বিকেল হলে মহল্লায় মহল্লায় চলে ঘুড়ি উৎসব। আমার দীর্ঘ ৭ বছর পুরান ঢাকায় থাকার অভিজ্ঞতা বলে এরা মানুষ হিসেবে খুবই সরল এবং অতিথি প্রিয়।
আমার বর্তমান অবস্থান তথাকথিত নতুন ঢাকায় যেখানে পাড়া বা মহল্লার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াটা একটু কষ্টকর। সবাই এখানে ফ্ল্যাট বন্দি জীবন যাপনে অভ্যস্ত যেখানে পাড়ার সবার খবর নেওয়া তো দূরের কথা পাশের ফ্ল্যাটে কি হচ্ছে দেখার সময় বা মানসিকতা কারোরই নেই।
তবে আপনি ঢাকা শহরের পাড়ার অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন বিভিন্ন বস্তিগুলোতে, এখানে এখনো একে অপরের প্রতি সৌহার্দ্য এবং ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। ওরা মুহূর্তে ঝগড়া করে এবং পরক্ষণেই তা ভুলে গিয়ে একে অপরে একসাথে বসে চা পান করে, বিপদে-আপদে একে অপরকে সহায়তা করে। এরা যেকোন সামান্য বিষয়ে অবাক হয়, হাসে, কাঁদে মজা করে। অবাক হওয়ার ক্ষমতা এদের মধ্যে আছে বলেই এত কষ্টে এরা সুখী, রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমায়। অপরদিকে ফ্ল্যাট বাসিরা নরম বিছানায় শুয়ে ঘুমের ওষুধ ছাড়া দু'চোখের পাতা এক করতে পারে না।
ঢাকার বস্তি গুলো সাধারণত সুউচ্চ ভবনের পাশে গড়ে ওঠে। আমি প্রায় দিনই আমার বিল্ডিং এর জানালা দিয়ে সেই রকম একটি বস্তির কিছু ঝগড়া, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি, রিক্সাওয়ালা বাবা তার মেয়ের প্রতি মমতা, নব্য বিবাহিত যুগলদের আড়চোখে তাকানো, এবং বয়স্কদের শূন্য চোখের দৃষ্টি দেখতে পাই। এই বয়স্ক লোক গুলো হয়তো শূন্য দৃষ্টিতে ভাবছে তার সেই প্রিয় পাড়ায় কাটানো শৈশবের কথা যেখানে সে তার বন্ধুদের সাথে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতো। তাই সে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে যদি আবার ফিরে যেতে পারত তার সেই ছোট পাড়ায় যা একান্তই নিজের....
এটা আমার বিডি কমিউনিটি এর পক্ষ থেকে আয়োজিত কনটেস্টের এন্ট্রি। আপনারা যদি বিডি কমিউনিটি কর্তৃক আয়োজিত এই কনটেস্টে অংশগ্রহণ করতে চান তাহলে এই লিংকে ক্লিক করুন
দিলেন তো অতীত মনে করিয়ে😊❤
Ha vai, purana smriti mone korte valoi lage. Dhonnobad.
তিনমাস পাগল আছিলাম ডায়ালগ টা দেন দাদা
Bhalo koisen bhai. Next time.
Congratulations @deepu7 ! You won the bdcommunity weekly contest ( 2nd Place).
source
Thank you brother @linco, @bdcommunity and honourable judge @azircon dada for all the support.