মহাকবি

in BDCommunity5 years ago

কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি!

—-মহাকবি কায়কোবাদ

আমি নাস্তিক নই, আবার পুরোপুরি ধার্মিকও নই, কারণ ধর্মের যেসব নিয়মকানুন প্রতিনিয়ত পালন করার কথা তার পুরোটা আমি পালন করতে পারিনা। তবে ধর্মের প্রতি আনুগত্য এবং বিশ্বাস দুটোই আছে। এই বিশ্বাসটুকু আছে বলেই আজও ধর্মীয় যেকোনো আলোচনা শুনে কিংবা বই পড়ে আবেগে আপ্লুত হই। বহুদিন পরে উপরের এই লাইনগুলো পড়ে আবার আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান মতে বাংলা সাহিত্যে আযান নিয়ে এর কাছাকাছি মানের এত সুন্দর কোন কবিতা রচিত হয়েছে বলে জানা নেই। একটা সময় এই আযান কবিতা আমাদের স্কুলের বইয়ে পাঠ্য ছিল। আজ নতুন কিছু উঠতি কবিদের ভিড়ে এই রকম আরো অনেক গুণী কবিদের কবিতা পাঠ্যবই থেকে উধাও হয়ে গেছে!! বই থেকে উধাও হলেও মহাকবি কায়কোবাদের এই কবিতাটা আজও লক্ষ মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে।

8FD822A4-D7BC-460F-9783-D0F75C917178.jpeg

আজ এই লেখাটা কিছুটা দায়বদ্ধতা থেকেই লিখছি। কারণ মহাকবি কায়কোবাদ আমার প্রাণের কবি, আমার গ্রামের কবি। তাকে নিয়ে লিখতে বিশেষ করে বেশি উদ্বুদ্ধ হলাম যখন উপরের এই মসজিদের কাছে গেলাম। ছোটবেলায় এই মসজিদের আশেপাশে অনেক খেলেছি, তবে এবারের অনুভূতিটা ছিল অন্যরকম। এই সেই মসজিদ যেটির কথা কবি তাঁর রচিত আযান কবিতায় উল্লেখ করেছেন। মসজিদটির পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম আর অবাক হয়ে ভাবছিলাম যে একসময় এই জায়গাটি কবির পদচারণায় মুখরিত ছিল। এই মসজিদের আজানের ধ্বনি শুনে কবি শিহরিত হতেন এবং তার ফলশ্রুতিতেই তার এই আযান কবিতা রচনা করা।

F029C24C-D6A2-4BA3-914B-D33F3F932409.jpeg

কিন্তু দুঃখের বিষয় হল কবির স্মৃতি রক্ষার্থে তার বংশধর এর পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু তার ভিটেমাটি টুকু পর্যন্ত বিক্রি করে ফেলা হয়েছে। প্রতিনিয়তঃ দূরদূরান্ত থেকে কবির আবাসস্থল দেখতে এসে লোকজন হতাশ হয়ে ফিরে যায়। এলাকার কিছু উৎসাহী মানুষের প্রচেষ্টায় তার স্মৃতি রক্ষার্থে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, যেটুকুই এখন তার একমাত্র স্মৃতি। তার নামে একটি স্কুল এবং কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে যার নাম মহাকবি কায়কোবাদ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজ। এলাকায় তার নামে একটি পাঠাগার ও রয়েছে। আমার নিজেরও একান্ত ইচ্ছা রয়েছে কবির স্মৃতি রক্ষার্থে কিছু একটা করার। হয়তো কোন একদিন যদি সেই কাজটি করতে পারি তাহলে নিজেকে ভারমুক্ত মনে করব।

মহাকবি কায়কোবাদ এর পুরো নাম কাজেম আল কোরাইশী। তিনি ১৮৫৭ সালে ঢাকা জেলার অন্তর্গত নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তিনি অনেক কবিতা রচনা করে গেছেন, তবে মূলত তিনি মহাশ্মশান কাব্যগ্রন্থের জন্য মহাকবি উপাধি পান। এইরকম কবি যুগে যুগে জন্মায় না, তাই এইরকম একজন স্বনামধন্য কবির বাড়ির পাশের মানুষ হিসেবে আমি নিজেকে গর্বিত বোধ করি। তবে দুঃখের বিষয় হলো পাঠ্যবই থেকে উনার কবিতা সরিয়ে ফেলার কারণে অনেক নতুন প্রজন্মই এই কবির সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে জানতে পারছে না। নতুন প্রজন্ম যদি আমাদের এই গুণী মানুষদের সম্পর্কে না জানে, তাহলে আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার তৈরি হবে না। এবং সেটা আমরা কখনোই চাইনা।

Sort:  

Hi @deepu7, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON

আমরা আসলেই গুনীজনদের কদর করতে জানি না। সারা বাংলাদেশে এমন অসংখ্য গুনীজনের কোন চিহ্ন টুকুও নেই। আশা করি আপনার স্বপ্নটুকু পুরন হোক।

 5 years ago  

That’s the fact what you have mentioned. Thanks brother for wishing.

হুম..এমন একজন প্রতিভা এই পৃথিবীতে চলে গেল। দুঃখের বিষয় হ'ল বর্তমান প্রজন্ম তার দ্বারা নির্ধারিত প্রভাব ও উত্তরাধিকার নিয়ে তেমন প্রভাব ফেলবে না।

ভাল লেখার।

Congratulations @deepu7! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You distributed more than 16000 upvotes.
Your next target is to reach 17000 upvotes.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP