সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অধ্যায়টাও আজ শেষের পথে। সর্বমোট বারোটি সেমিস্টারের মধ্যে এগারোটি ইতিমধ্যেই শেষ করে বারো তম সেমিস্টারে পদার্পন করেছি বেশ কিছুদিন হলো। শেষ সেমিস্টারে এ এসে চারদিক থেকে চাপটা বেড়ে গেছে অনেক বেশি। একে তো এখনো থিওরি কোর্স শেষ হয়নি, তার উপর আবার ইন্টার্ন, থিসিস এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টের মহা ঝামেলা। শেষদিকে তো ডিফেন্স অপেক্ষা করছেই আমাদের জন্য!!
তাই হঠাৎ করেই ইন্টার্নশিপের আগে থিসিস সেরে ফেলার পরিকল্পনা করলাম। শেষদিকে প্রেসার হয়ে যাবে সেই চিন্তা করেই আগেভাগে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া। যথারীতি ডিপার্টমেন্ট থেকেই আমাদেরকে থিসিস গ্রুপ দেওয়া হয়েছে। তবে আমি একাই থিসিস করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেননা কাজের বেলায় কাউকেই খুজে পাওয়া যায়না, একা একা সব কাজ সারতে হয়।
আমাদের হাতে সুযোগ ছিলো থিসিস অ্যাডভাইজার হিসেবে নিজের পছন্দের স্যারকে বেছে নেওয়া। সেই সুবাদে আমি ডিপার্টমেন্টের সবচাইতে বন্ধুসুলভ শিক্ষকের হাত ধরেই কাজ শুরু করি। কয়েকদিন নেট ঘাটাঘাটি করে করে থিসিসের টপিক বেছে নেওয়া পার্টটা ছিলো বেশ আকর্ষণীয়। কেননা আমি যেই কাজটা করবো বলে বাছাই করতাম, ঠিক সেই কাজটাই ইতিমধ্যে কেউ না কেউ আগেভাগেই সেরে ফেলেছে।
অনেক খুজাখুজির পর সমুদ্রের পানি ব্যবহার করে ডায়িং করার সিদ্ধান্ত নেই। এক্ষেত্রে আমাদের বিষয়বস্তু হলো কিভাবে সমুদ্রের পানি ব্যবহার করে কটন /সুতি ফ্রেবিকের রিয়েকটিভ ডায়িং করা যায় লবন (ইলেকট্রোলাইট) ছাড়াই। সাধারনত রিয়েকটিভ ডায়িংয়ের ক্ষেত্রে বেসিক ক্যামিক্যাল হিসেবে ইলেকট্রোলাইট / লবন ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে লবন রিয়েকটিভ ডাই এবং ফাইবারের মধ্যে যেই আয়নিক ব্যায়ারিয়ার থাকে তা দূর করে ভালো ডায়িং/ রঙ হতে সাহায্য করে। যদি আমরা সুতার কাপড় ডায়িংয়ের ক্ষেত্রে আমরা সমুদ্রের পানি ব্যবহার করতে পারি তাহলে প্রোডাকশন খরচ কিছুটা কমে যাবে এবং সাধারন পানির উপর প্রেশারটা কমে যাবে। কেননা ইদানীং ঢাকা শহরে পানযোগ্য পানির স্বল্পতা তৈরি হয়েছে।
যাইহোক এখন কাজ শুরু করার পালা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে এক বন্ধুর সাহায্যে পানির ব্যাবস্থা হয়ে গেছে। সবকিছু নিয়ে আজ ওয়েট প্রসেসিং ল্যাবে হাজির আমি থিসিসের কাজ শুরু করবো বলে।
স্যারের সাহায্য নিয়ে শুরু হয় আমার রেসিপি ক্যালকুলেশন আর ডায়িং। দীর্ঘ চারঘন্টা পর শেষ হয় প্রথম পর্বের কাজ। আলহামদুলিল্লাহ আজকে মতো সবগুলো টেস্টে সফল হয়েছি আমরা। ল্যাবে সবরকম সুবিধা থাকাতে সমুদ্রের পানিতে লবনের পরিমান নির্নয় করতে সমস্যা হয়নি। আমাদের আশানুরূপ ভালো ডায়িং/রঙ এসেছে সমুদ্রের পানি ব্যাবহার করে, যা স্বাবাভিক ডায়িংয়ের মতোই। কাল আবারো ল্যাবে চলবে আরো গভির পরিক্ষা নীরিক্ষা 😃
বিজ্ঞানী ফাহিম😉😉😉
😀😀😀