বৃহস্পতিবার ছিল আমাদের হাফক্লাস৷ টিফিনেই ছুটি৷ বিটিভি-তে তখন প্রথমবারের মত শুক্রবারের পাশাপাশি বেস্পতিবারও সিনেমা দেখানো শুরু হইলো৷ বিষুদবারের সিনেমা তাড়াতাড়ি শুরু হইতো বলে দেড়টায় যখন ইশকুল ছুটি দিত আনরা সাথে সাথে দৌড় লাগাইতাম৷ সিনেমা দেখনের লাইগা সে কি পরিশ্রম৷ আহারে সিনেমা...
ছোটবেলায় আমরা ছিলাম নায়ক রুবেলের ভক্ত৷ বিটিভির সঞ্চালিকা ঠিক যেই মুহুর্তে বলে উঠতেন- শ্রেষ্ঠাংশে রুবেল, ঠিক এইটুকু শোনার পর আনন্দে দাপাদাপি শুরু করে দিতাম আমরা৷ রুবেল মানেই কারাতে/ফাইট', ঢিশুম ঢিশুম- আর আমাদের তখন ড্রামা, রোমান্স কিংবা রোমাঞ্চের চেয়েও 'একশন নাই তো সিনেমা ভালো না' এই বুঝের বয়স৷
মূলত আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি তারা দেখেছি টিভি কি ভীষণ আরাধ্য হতে পারে৷ খুব অল্প কিছু বাড়িতে টিভি ছিল তখন আর যারা সে-ই সৌভাগ্যবান তাদের কিছুটা যে অহংকার ছিলো এ কথা মিথ্যে নয়৷ কেননা সপ্তাহান্তে সিনেমার লোভে যদি পাড়ার লোক এসে ভীড় করে বাড়িতে তবে যে কারো মাঝেই...আমিও তাদেরই একজন কেননা দুই বাড়ি মিলিয়ে একমাত্র আমাদের ছিল টোশিবার ১৪ ইঞ্চি রঙিন টিভি৷ আমি আর মা এই দুইজনের ছোট্ট পরিবারে প্রতি শুক্রবার ঘরটা সরগরম হয়ে উঠতো আর আমিই যেহেতু টিভি-র দায়িত্বে ছিলাম, বীরদর্পে হেঁটে যেয়ে যখন টিভি চালাতাম তখন মনে হতো যুদ্ধে বিজয়ী সেনাপতি কোন, চারিদিকে মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনী৷
Photo Source
বিটিভির টেলিকাস্ট শুরু হবার আগেই আমরা টিভি চালিয়ে দিতাম আর সেই ঝিরঝির 'হোয়াইট নয়েজ' কে জীবনে আর কখনোই এত মধুর মনে হবে না৷ সেই সময়ের জাঁদরেল খলনায়ক এটিএম, ফরিদী, রাজীব- প্রতি সিনেমায় এদের মুখে একটা কমন ডায়লগ থাকতোই যা ওঁরা সিনেমায় বারবার আওড়াতেন আর সপ্তাজুড়ে খেলার মাঠে ইশকুলে আমরা বন্ধুরা সেই ডায়লগগুলো মজা করে বলতাম৷ এ ছিল এক অদ্ভূত আনন্দের বিষয়৷
আমার নানাজানের কথা মনে পড়ে৷ সিনেমায় গভীর আবেগের দৃশ্য আসলেই দেখতাম নানাজান কাঁদছেন৷ নানাবাড়িতে বিদ্যুৎ ছিলো না বলে লোকটা বেড়াতে আসতেনও বিষুদবার ধরে যাতে করে দুটো সিনেমা দেখে ফেরা যায় - এতোই সিনেমাপাগল ছিলেন লোকটা৷ নানাভাই মারা যারার এত বছর পরেও আমার ওই দৃশ্যটা আজো মনে পড়ে, নানাভাই অঝোরে কাঁদছেন সিনেমা দেখে৷ অবশ্য কখনো কখনো এমনও হতো যে ছেলেবুড়ো সবাই কাঁদতো৷ মানুষকে আপ্লুত করবার ঐশ্বরিক ক্ষমতা সিনেমার আছে৷ আমিও হয়তো কেঁদেছি দুয়েকবার৷
আমার দাদীজান কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারতেন না টিভির মত ছোট্ট বাক্সে এত এত মানুষ কি করে আঁটে! কতবার যে উনি টিভির পেছনে উঁকি দিতেন, আর বলতেন 'এরা ঢুকতেছে কোনদিক দিয়া'? কিংবা এক সিনেমায় কতল হওয়া ভিলেন কিংবা নায়ককে পরের সপ্তাহে যখন ফের টিভিতে দেখতেন, আঁতকে উঠে বলতেন 'এইটা না গত সপ্তাহে মইরা গেছিল, আবার আইলো কইত্তে'?
অসহনীয় লোডশেডিং ছিল, ঝড়ে এন্টেনা ভেঙে পড়তো, কিংবা আস্ত টিভিটার ভেতরের কোনও যন্ত্রাংশ বিকল হতো প্রায়শই তবু এই টিভিই ছিলো আমাদের ছেলেবেলায় বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম৷ চ্যানেল বলতে সবেধন নীলমনি বিটিভি-ই ছিল সব যার প্রধান আকর্ষণ শুক্রবারের (পরবর্তীতে বৃহস্পতিবারও যোগ হয়) সিনেমা৷ শালমান শাহ-শাবনূর, মান্না-মৌসুমী, আলমগীর-শাবানা, রাজ্জাক-কবরী, ববিতা, রুবেল, পপী, দিতি সহ অসংখ্য কলাকুশলী যারা আমাদের ছেলেবেলাকে আরো রঙিণ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা৷ হুমায়ুন আজাদের কবিতা দিয়ে শেষ করি-
ভালো থেকো ফুল
মিষ্টি বকুল
ভালো থেকো৷
ভালো থেকো মেলা
লাল ছেলেবেলা
ভালো থেকো...
Reminds me of some good old days!
Hi @ingmar.bergman, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON