আত্মহত্যা নাকি খুন? অন্তিম পর্ব

in BDCommunity5 years ago

রশিদ মিয়ার বাড়িতে চুরির ব্যাপারে পরে কিছু একটা করার আশ্বাস দিয়ে রনি বাড়ি ফিরে এলেন।রশিদ মিয়া রনিকে চেনেন।জানেন কেইসটা রনির মাথায় চেপে বসেছে। সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত লেগে থাকবেন। "এরকম একটা এতিম ছেলের কে এমন শত্রু হয়ে গেল যে ছেলেটাকে মরতে হলো?" বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলেন রনি।ঠিক তখনি রশিদ মিয়ার ফোন এলো।জানালেন,মাদ্রাসার ছাদের দরজার উল্টো পাশে কোণার দিকটায় খুব কায়দা করে লুকোনো সিগারেটের প্যাকেট পাওয়া গেছে।রনি বুঝতে পারলেন ফুয়াদের কথায় সত্যতা আছে।পরদিন আদিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রনি নিজেই তার বাড়ি গেলেন।মাদ্রাসায় খুঁজে তাকে পাওয়া যায়নি।প্রিন্সিপাল আদিবকে জিজ্ঞাসাবাদের কারণটা ধরতে পেরে রনিকে আদিবের ঘরে নিয়ে গেলেন।আদিবকে ভিষণ অসুস্থ দেখালো।রনি প্রিন্সিপালকে চোখের ইশারায় বেরিয়ে যেতে বলে আদিবের কপালে হাত রাখলেন।আদিব চোখ মেলে তাকালো।রনি প্রশ্ন ছুড়লেন, সিগারেট খাও?
আদিব কিছু না বলেই চোখ বুজলো। রনি ওর দিকেই তাকিয়ে রইলেন।আদিবের চোখের কোণ বেয়ে পানি বেরিয়ে এলো। আদিব বলল, আমি সিগারেট খাই তা যে আপনি জানেন সেটাতো আপনার বুক পকেট থেকে উঁকি দেয়া সিগারেটের প্যাকেটটাই জানান দেয়!
রনি পকেটে তাকিয়ে দেখলেন সত্যিই সিগারেটের প্যাকেটটা আংশিক বেরিয়ে আছে।আদিব আবারো বলল,আমি রাত একটার পর ছাদে গিয়ে সিগারেট খেতাম। অবশ্য মাদ্রাসা সুপার বিষয়টা জানতেন।জেনেও কিছু বলতেন না।তার কারনটাও আশা করি আপনি জানেন।
জানেন স্যার আমি সিগারেট খেতে গিয়ে সর্বপ্রথম কার কাছে ধরা পরেছিলাম? সাফির কাছে।সেদিন আমার জন্মদিন ছিলো।বাবা আমাকে বাড়িতে থাকতে বলেছিলেন। সিগারেট খাওয়াটা আমার মারাত্মক নেশায় পরিণত হয়েছিলো ততোদিনে।বাবা জানতেন না। আর আমিও সিগারেট না খেয়ে থাকতে পারতাম না।তাই সেদিন রাতেও সুযোগ বুঝে মাদ্রাসার ছাদে দৌঁড়ে গেলাম। সাফি কিভাবে যেন দেখে ফেললো। পেছন পেছন গেলো আমার।গিয়ে আমাকে সিগারেট খাওয়া অবস্থায় দেখে ফেললো। আমি কারো আনাগোনার শব্দ শুনে পেছনে তাকালাম।দেখলাম এক রাশ বিরক্তি মুখে নিয়ে সাফি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ক্ষেপেই গিয়েছিলাম প্রায় কিন্তু সাফির পেছনে আরেকটা মানব অবয়ব দেখে থমকে গেলাম।
বাবা!
এক ঝটকায় হাতে থাকা সিগারেট টা ফেলে দিলাম।বাবা খেয়াল করলেন না।তবে পড়ে থাকা জ্বলন্ত সিগারেটটা দেখে ফেললেন।আমি ভয় পেয়ে গেলাম খুব। অন্ধকারে বাবার মুখোভংগী আঁচ করতে পারলাম না। সাফিকে দেখলাম একবার ঠান্ডা চোখে আমার দিকে তাকালো।তারপর বাবার দিকে ফিরে মাথা নিচু করে বললো,ভুল হয়ে গেছে স্যার।আর হবে না।

আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাবা আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, এতো রাতে এখানে কি করছো? তোমাকে না আজ বাড়িতে থাকতে বলেছি! সাফির চোখের ইশারায় পাশের দড়িতে ঝুলে থাকা একটা পাঞ্জাবি টেনে হাতে নিলাম।বললাম, পাঞ্জাবি নিতে এসেছি।অন্ধকারে বাবা আর তেমন কিছু যাচাই করলেন না।শুধু যেতে যেতে ঝাঁঝালো কণ্ঠে পরদিন সকালে দেখা করতে বললেন। পরদিন সাফি সবগুলো ক্লাসে গিয়ে শাস্তিস্বরূপ দশবার কান ধরে উঠবস করলো। আর হ্যাঁ পাঞ্জাবীটা সাফির ছিলো।ও আমার পেছন পেছন যায়নি। নিজের পাঞ্জাবী আনতে গিয়েছিলো। যদিও এরকম একটা ঘটনার পরও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়নি।কিন্তু ওকে খুন না করার পেছনে এতোটুকু কারণ কি যথেষ্ট নয়?

pexels-photo-2823459.jpeg

রনি কিছু বলে ওঠার আগেই তার ফোন এলো। রশিদ মিয়ার ফোন।ময়না তদন্তের রিপোর্ট এসেছে।রশিদ মিয়া জানালেন সাফির মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধের কারনে।আর সময় টা একটার কাছাকাছি। বডিতে কোনো আংগুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। রনি রশিদ মিয়াকে মাদ্রাসায় আসতে বলে ফোন রাখলেন।আদিবকে বললেন, আপাতত তুমি আমার সন্দেহ থেকে রেহাই পেলে।রনি আরো একবার গলার স্বর কিঞ্চিৎ মোটা করে বললেন, "আপাতত"।

সাফির ঘর তল্লাশীর উদ্দেশ্যে রনি মাদ্রাসায় উপস্থিত হলেন।রশিদ মিয়া আগে থেকেই সাফির ঘরে উপস্তিত ছিলেন। ফুয়াদকে ডাকা হলো।
রনি বললেন, তুমি সাফিকে কয়টায় যেন পড়তে দেখেছো?
-১.১৫ তে স্যার!
-তুমি নিশ্চিত?
-জ্বী স্যার।
-তুমি ওকে কি রঙের জামা কাপড় পরা দেখেছিলে?
-মনে নেই!
-মনে করার চেষ্টা করো।
ফুয়াদ বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করার পর বলল, স্যার ও গোসল সেরে বেগুনী রঙের একটা পাঞ্জাবী পরেছিল।সন্ধার পর পাঞ্জাবী পালটে হলুদ একটা গেঞ্জি পরেছিল।এরপর ও আর পাল্টায়নি!
এবার ফুয়াদ আত্মবিশ্বাসের স্বরে বললো, হ্যাঁ স্যার আর পালটায়নি! কিন্তু! কিন্তু স্যার আমি ওকে তখন পাঞ্জাবী পরা অবস্থায় দেখেছি!
রনি জিগেস করলেন, তুমি নিশ্চিত?
ফুয়াদ বলল শতভাগ নিশ্চিত।
রনি রশিদ মিয়াকে পুরো ঘর তল্লাশী করতে বললেন। সেদিন সাফির গায়ে থাকা হলদে গেঞ্জিটা কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না।ফুয়াদ রনির কাছে জানতে চাইলো, কেইসের কোনো সুরাহা হয়েছে কিনা। রনির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গভিরভাবে কি যেন ভাবতে লাগলেন। হঠাৎ রনি পুরো ঘরের চারপাশে তাকিয়ে কি যেন দেখলেন।তারপর ফুয়াদকে বললেন, তুমি সাফিকে পেছন থেকে দেখেছিলে।ওর মুখ দেখোনি।তাইনা?
-জ্বী স্যার!
-তোমাদের আরেকজন রুমমেট আবিদ কোথায় ছিলো তখন?
ফুয়াদের চেহারায় ঘন অন্ধকার নেমে এলো মুহূর্তেই।ফুয়াদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো।রনির দিকে তাকিয়ে বললো, আমি সাফিকে কোথাও দেখতে পাইনি। যাকে দেখেছি সে ছিল আবিদ।রশিদ মিয়া জিগেস করলেন, তুমি কি করে বুঝলে?
সাফি বলল, কারন ও বাম হাত দিয়ে লিখছিলো।
pexels-photo-685674.jpeg

রনি আবিদকে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়ে ঘরটাতে আরো একবার গেঞ্জিটা খুঁজতে লাগলেন।আবিদ বেশ স্বাভাবিক ভাবে এসে হাজির হলো।সংগে সংগে ফুয়াদ আবিদের কলার চেপে ধরলো।বলল, কেন খুন করেছিস? কেন? ও তোকে সবথেকে কাছের বন্ধু ভাবতো!
রনি ফুয়াদকে টেনে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করলেন।বললেন, আবিদ খুন করেনি! ফুয়াদ মানতে চাইলো না। রনি বললেন, সাফির মৃত্যু হয়েছে ১টা নাগাদ আর তুমি ওকে পড়তে দেখেছো ১.১৫ তে। শ্বাসরোধ করে সাফিকে জানে মেরে ফেলে তারপর তাকে ছাদে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আবার ঘরে ফিরে এসে সাফির পোশাক পড়ে সাফি সেজে বসে থাকতে পনের মিনিটেরও বেশি সময় প্রয়োজন।
ফুয়াদ রনির কথার যথার্ততা বুঝতে পেরে চুপ করে গেলো।বলল, তাহলে কেন ও সাফির কাপড় পড়ে বসেছিল?
রনি আবিদের দিকে তাকিয়ে একই প্রশ্ন করলেন। আবিদকে হতবিহবল দেখালো।কি যেন বলতে চাইলো সে। কথাগুলো আটকে আটকে যাচ্ছিলো।রনি রক্তিম চোখে তাকিয়ে আবারো জিগেস করলো, কে বলেছিলো তোমাকে ওভাবে বসে থাকতে?
আবিদ কাঁপতে কাঁপতে মেঝেতে গড়িয়ে পড়লো।জ্ঞান হারালো সে। আবিদকে হসপিটালাইজড করা হলো।পুরো কেইসটা সেখানেই থমকে গেলো। আবিদের জ্ঞান ফেরার ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে। রনি ভাবতে লাগলেন খুনি টা তবে কে?
কিন্তু পরদিন খুব অদ্ভুদ একটা ঘটনা ঘটলো।সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সকাল থেকেই একটা ভিডিও বেশ তাণ্ডব ঘটিয়ে ফেলেছে।প্রায় সকলের কাছেই ভিডিওটা পৌঁছে গিয়েছে।এ খবরটাও পল্টুই দিলো রনিকে। রনির দেখতে ইচ্ছা হলো না। পল্টু তবু জোর করে দেখাতে চাইলো। দেখা গেলো কয়েকজন লোক মিটিং এ বসেছে।প্রত্যেকেই হুজুর। তার মধ্যে লিডার ধরনের একজন যে কিনা বড়সড় একটা চেয়ারে বসে সবাইকে বিশ্রী ভাষায় গালাগাল দিচ্ছেন। কয়েকজন বোরখা পরিহিতা মহিলা দেখা গেলো। তাদের বিশ্রী ভাবে গালাগাল করা হচ্ছে। রনি এবার গুরুত্ব দিয়ে দেখলেন। যিনি গালাগাল দিচ্ছেন তার চেহারা দেখা যাচ্ছেনা। কিন্তু সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে এরা সহকর্মী। পল্টু তখনি বলে উঠলো, দেখলেন স্যার! একটা মাদ্রাসার শিক্ষক ক্যামনে এমন হয়? পোলাপান তাইলে কি শিখবো?
রনি হতচকিত হয়ে পল্টুর দিকে তাকালো।
-মাদ্রাসা শিক্ষক?
-হ স্যার।
-কোন মাদ্রাসা?
-তা তো জানি না।
রনি পল্টুর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিজেই দেখতে লাগলেন। একজন পুরুষ শিক্ষককে রনির বেশ চেনা চেনা মনে হলো। তবে কিছুতেই কিছু মনে করতে পারলেন না! তবে বেশি বেগ পেতে হলো না রনিকে। অল্পকিছুক্ষন পর ফোন এলো আবিদের জ্ঞান ফিরেছে। আর তখনি রনির মনে পরলো লোকটাকে কোথায় দেখেছেন।
'বশিরউদ্দীন'। নূরে আলম আলিয়া মাদ্রাসার আল কোরআনের শিক্ষক।রনি কি ভেবে যেন দ্রুত থানা থেকে বেরিয়ে গেলেন।
নূরে আলম আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে গ্রেফতার করে থানায় পুরা হলো। রনি কাওকেই কিছু জানালেন না। রশিদ মিয়াকে নিয়ে হসপিটালে উপস্থিত হলেন। আবিদ রনির দিকে তাকিয়ে বললো, আমি খুন করিনি স্যার।
রনি কিছুই বললেন না। আবিদ আবার বললো, আমাকে প্রিন্সিপাল স্যার রাতে ডেকেছিলেন মাদ্রাসা ক্যানটিনে।স্যার নিজেই চা বানালেন। আমার সাথে নানান গল্প করলেন।হঠাৎ অসাবধানতাবশত আমার পাঞ্জাবী তে স্যারের চা পড়ে গেলো। ভাজ্ঞিস চা টা গরম ছিলো না৷ স্যার নিজেই আমাকে আমার ঘর পর্যন্ত নিয়ে এলেন। সাফির পাঞ্জাবি দিয়ে বললেন আপাতত এটাই পড়তে। আমিও রাজী হলাম।ঘুমোতে যাবো ভাবছিলাম স্যার বললেন বসে বসে পড়তে। সকালে নাকি নিজেই আমাকে পড়া ধরবেন। বেশ কিছু পড়াও দিয়ে দিলেন।কোনো উপায় না পেয়ে পড়তে বসি আমি।স্যার সাফিকে তখনই বের করে নিয়ে যান বলেছেন সাফি নাকি রাতভর ওনার কাছে পড়বে। তখন ঘড়িতে ১২ টার ঘণ্টা পড়লো।
সাফিকে আমি তখনই শেষবার দেখেছি।

রশিদ মিয়া বললেন, এসব কথা এখন বলার মানে কি?
রনি উত্তর দিলেন, মানে তো আছেই!
রশিদ মিয়া কি যেন একটা বুঝতে পারলেন না।রনির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
রনি বললেন, আবিদের থেকে বিদায় নিয়ে হোসেইন সাহেব সাফিকে নিয়ে নিজের ঘরে গেলেন৷ সেখানে সাফিকে পড়ালেন বা পড়ানোর ভান ধরলেন প্রায় ১২.৪০ পর্যন্ত। এরপর নিজের আসল রূপে ফিরলেন। বালিশ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করলেন সাফিকে।কিন্তু এভাবে তো রেখে দেওয়া যায়না তাইনা? কায়দা করে সাফির বডিটা ছাদে নিয়ে গেলেন। যদি জানতেন ওনার ছেলে রাতে ছাদে বসে সিগারেট খায় তাহলে হয়তো সাফির বডিটা ছাদে নিতেন না। তবে সেদিন রাতে ওনার সৌভাগ্যবশত ওনার ছেলের ছিলো ভীষণ জ্বর। তাই সে বাড়িতেই ছিলো। আর হোসেইন সাহেব কোনো বাধা ছাড়াই সাফিকে ছাদ পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। ঘটনা কিন্তু এখানে শেষ নয়। এখানেও আছে আরেকটা টুইস্ট। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন হোসেইন সাহেবের সাহায্যকারী এক মহামানক। কিন্তু কে?

আসুন সেটা জানার আগে ঘটনার মূল খণ্ড টা শুনি। আজ থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে প্রিন্সিপাল হোসেইন সাহেব তারই কক্ষে একজন মহিলা শিক্ষকের সাথে দূর্ব্যাবহার করছিলেন। জোর যবরদস্তি করছিলেন। একা নন! তার সাহায্যকারী মহামানবও অংশ নিয়েছিলেন সাথে। হয়তো অন্যান্য শিক্ষকরা জানতেন।কিছু বলেন নি।হয়তো ভয়ে নয়তো কোনো স্পেশাল সার্ভিসের লোভে! সে যাইহোক। প্রিন্সিপালের বিশেষ সাহায্যকারী মহামানবের সাথে প্রিন্সিপালের সম্পর্কটা কি জানেন? প্রিন্সিপাল নারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন, ফ্ল্যাটের ব্যাবসার নামে সহজ সরল মানুষের সারাজীবনের সঞ্চয় আত্মসাৎ করেন, বিভিন্ন শিক্ষকদের স্পেশার ট্রিটমেন্ট দিয়ে দলে ভিরিয়ে নেন। আর এ সবকিছু ট্যাকল দেন তার সাহায্যকারী মহামানব। এতে করে মানুষের টাকাগুলো ফিফটি ফিফটি ভাগাভাগি করে নেন দুজনে।
এবার আগের ঘটনায় ফিরে যাই। এদের দুজনের সাফির সাথে শত্রুতা হলো, সেদিন কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ না করলেও সাফি সবকিছু দেখে ফেলে প্রতিবাদে এগিয়ে আসে। মহামানবের মুখোমণ্ডল দেখে ফেলে। সব চুক্তি সম্পর্কে জেনে যায়। কিন্তু কেউ সাফিকে সাপোর্ট করেনা।কিছুই করতে পারেনা সে। তবে সাফি সাহায্যকারীর হাতে ওদের চুক্তির সবগুলো প্যাপারস দেখে ভাবে এগুলোকে কাজে লাগিয়ে সে সবাইকে এদের মতো পিশাচের হাত থেকে রক্ষা করবে। তাই সে লোকটার পেছন পেছন গিয়ে বাড়ি চিনে আসে। সেদিন রাতেই সে লোকটার বাড়িতে লুকিয়ে চুরি করতে গেলো। কিন্তু পারলো না।কোনো মতে ঢুকে গেলেও কাগজ খুঁজতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলো। লোকজন জড় হলো। সাহায্যকারী লোকটা চোরকে চিনতে পারলেন। চুরির উদ্দেশ্য ধরতে পারলেন। নিজের কুকীর্তি ফাঁস হওয়ার ভয়ে চোরকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন।
আর তারপর লোকজন কে বুঝ দিতে কাহিনি বানালেন। তার বাড়ি থেকে নাকি মেয়ের বিয়ের জন্য সঞ্চয় করা টাকা চুরি হয়ে গেছে।
সাফিকে তবুও কোনোভাবে দমানো গেলো না বলে দুজনে মিলে শেষ পর্যন্ত প্ল্যান করলেন ছেলেটাকে মেরে ফেলবেন। এতিম ছেলে।মরলে কার কি যাবে! আর সাহায্যকারীও সবকিছু ট্যাকেল দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সাহস বাড়িয়ে দিলেন।ব্যাস!

রনি সম্পূর্ণ ঘটনা শেষে সরাসরি রশিদ মিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, হোসেইন সাহেব আপনার ছেলেবেলার বন্ধু।কই একবারো তো বললেন না! আচ্ছা যাই হোক! আপনাদের চুক্তির ফ্ল্যাট ব্যাবসার সকাল প্যাপারস যেগুলোর জন্য সাফি প্রাণ হারালো সেগুলো ইতিমধ্যে আপনার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আর সাফির হলদে গেঞ্জিটাও পাওয়া গেছে তবে আপনার বাড়িতে না। আপনার ছেলেবেলার বন্ধুর বাড়িতে।

রশিদ মিয়াকে গ্রেফতার করা হলো আর তাকে বরখাস্তও করা হলো। পরদিন থানায় রনির কাছ থেকে পল্টু পুরো ঘটনা শুনলো। বলল,স্যার আমি তো ওনারে বলদ ভাবতাম! পাত্তাই দিতাম না।
রনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,একজন সামান্য কনস্টেবলের এত ক্ষমতা নেই।এর পেছনে অনেক বড় বড় হাত আছে। সবগুলো অপরাধের গোড়া খুজে বের করে যদি উপড়ে ফেলা যেত তাহলে সমাজে আর কোনো অপরাধ হতো না।

সমাপ্ত

Pictures are taken from pexels.com