আমার সাইকেল [স্পাইডার-3]

in BDCommunity4 years ago

তোর কাছেই শুধু বায়না করার সুযোগ পেতাম। মনে আছে আপু,তুই আমি বিকেলে রাস্তায় হাঁটছিলাম আর তখনই এক ছোট্ট বাবু সাইকেল চালাচ্ছিল। সেটা দেখে আমি বলছিলাম আমার যদি এমন একটা সাইকেল থাকতো!!

bicycle-5266774_1280.png
source

আর তুই সে কথা শুনে কয়েক মাস পরেই তোর জমানো টাকা দিয়ে আমাকে একটা সাইকেল কিনে দিলি। আমি সবাইকে বলতাম এটা আমার সাইকেল। আর কাউকে সাইকেল ধরতেই দিতাম নাম। সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে কত ঘটনাই না ঘটেছিল। পাড়ার অর্ধেক মানুষ আমাকে সাইকেল চালাতে সাহায্য করছে। এরপরও সাতদিন পার হয়ে যাওয়ার পরও ভালো মতো সাইকেল চালাতে পারতাম না ।

একবার সাইকেল থেকে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলাম সেই ভয়ে আর কয়দিন সাইকেল চালাতাম না। ২-৩ দিন পর শফিক স্যার আমাকে আবার সাইকেল চালানো শেখায়।বিকেলে আমি আর স্যার সাইকেল চালিয়ে বাবার দোকানে ভালোমতোই গিয়েছিলাম, তবে বাসায় ফেরার সময় রিক্সার সঙ্গে আমার সাইকেলটা ধাক্কা লেগে যায়। আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। ছোট ছিলাম দেখে হয়তো কেউ কিছু বলেনি।

এদিকে তৃতীয় শ্রেণীতে ওঠার পর থেকে প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতাম। অনেকদিন আমাকে চেকপোষ্টে গেট থেকে সাইকেল নিয়ে বাসায় ফেরত আসতে হয়েছে। তাই আবার হেটে হেটে স্কুলে যেতাম।তবে একদিন আবার সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম আর মনে মনে ঠিক করেছিলাম আজ আমি ওনাদের কথা শুনবো না দ্রুত সাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যাব।

স্কুল ছুটি হলেই আমি আর ঐশী আপু দুজনে মিলে সাইকেল চালিয়ে পুরো ক্যান্টনমেন্টে এরিয়া ঘুরে বেড়াতাম। বেশ ভালোই লাগতো।ক্যান্টনমেন্ট এরিয়ায় সাধারণ মানুষ খুব কমই চলাচল করত আর রাস্তায় সারিবদ্ধ ভাবে ফুলের গাছ লাগানো থাকত। তাই সাইকেল চালিয়ে বেশ মজা পেতাম। আর দিনে চার-পাঁচবার মত নতুন কাপড় দিয়ে সাইকেল পরিষ্কার করতাম।

এদিকে ভাই সব সময় আমাকে বকাবুকি করত -সাইকেল পেয়ে বাসায় পড়তেই বসতাম না। একদিন তো ভাই রাগ করে সাইকেলে তালা দিয়ে রেখেছিল। আমি কত কান্নাকাটি করেছিলাম শেষ পর্যন্ত দুপুরে না খেয়ে ছিলাম। তারপর মা ভাইকে বলে আমাকে সাইকেল চালাতে দিল। এভাবে ৫ টা বছর কেটে গেল। এরপর থেকে আমি স্কুলে হেটে বা রিকশাতেই যেতাম।

আর মা রাফিকে আমার সাইকেলটা দিয়ে দিয়েছিল মাঝেমধ্যে আমি রাফিদের বাসায় যেতাম সাইকেল দেখতে। সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আমি সাইকেলের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের ছোট্ট পিচ্চির সাইকেল দেখে আমার সাইকেলের কথা মনে পড়ে গেল। ও ঠিক আমার মতোই সকাল-সন্ধ্যা সাইকেল চালাতে ভালোবাসে।

সত্যি আপু তোর দেওয়া উপহার দিয়ে ছোটবেলার দিনগুলো অনেক ভালোই কাটিয়েছি। আর তুই আমার জীবনের সব থেকে বড় উপহার।

আমি নিহা।বিবিএ ৩য় বর্ষে পড়ছি।গল্প, কবিতা লিখতে পছন্দ করি।

20200608_115836-3.gif

Sort:  

This post earned a total payout of 8.970$ and 4.485$ worth of author reward that was liquified using @likwid.
Learn more.