Ashaa Othoba Nirashaa:ব্যর্থতাই জীবনের সঙ্গী

in BDCommunity4 years ago

মাঝপথে আমার আশার আলো নিভে যাওয়ার গল্পটা বেশ রহস্যজনক। আর পাঁচজনের মতো বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আশা থাকলেও কিছু ব্যতিক্রম আশা মনে পুষে রাখতাম।

black-3950334_1280.webp
source

ছোট বেলায় টিভিতে নাটক দেখে মায়ের কাছে গিয়ে হুবহু অভিনয় করে দেখাতাম। তখন বোধ হয় আমার বয়স ৫ বছর একদিন মা শিশু একাডেমীতে নিয়ে গিয়ে আমাকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলো।এখানে নৃত্য,সঙ্গীত, অভিনয় শেখানো হয়। আমি অভিনয় শিখছিলাম। প্রতিবছরই জাতীয় ও অন্যান্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। তখন প্রতিযোগিতা কি সেটাই বুঝতাম না।

তবে এখান থেকে আমার আশার পথ চলার গল্পটি শুরু হয়।

মা বাসা থেকে আমাকে সেজেগুজে একাডেমিতে নিয়ে গিয়েছিল। ''একক অভিনয়'' প্রতিযোগিতা আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম। বিকেলে বিজয়ীদের নাম জানিয়ে দিয়েছিল মা খোঁজ নিয়ে দেখলো আমি তৃতীয় হয়েছি। তাই পরের রাউন্ডের জন্য বাসায় প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এভাবে ব্যস্ততার মাঝে দিনগুলো বেশ ভালই কাটছিল।

এদিকে বাবার আশা আমি সঙ্গীত শিল্পী হবো আমারও গান ভালো লাগে। তাই দু'বছর পর শিশু একাডেমীতে আবার গানের ক্লাসে ভর্তি হই। বেশ কয়েকটি ছড়াগান শিখেছিলাম। নজরুল রবীন্দ্রসঙ্গীত মোটামুটি গাইতে পারি। কিন্তু উচ্চাঙ্গসংগীত বেলায় গান শেখাটা কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল । কোনভাবেই সুর তুলতে পারতাম না।

বাবা বলতো বয়স কম তাই গাইতে পারছো না তবে হাল ছেড়ে দিতে নিষেধ করতো।

এজন্য বাসায় একটি গানের শিক্ষক রেখেছিলেন। সপ্তাহে দুদিন গান শেখাতেন। সত্যি বলতে অভিনয়ের মতো গান টাকে ভালবাসতে পারিনি। তাই হাজার চেষ্টা করেও কোন মতে গান শিখতে পারছিলাম না। এদিকে শিশু একাডেমির চার বছরের অভিনয় কোর্স শেষ করলাম। কয়েক মাস পরেই পিএসসি পরীক্ষা তাই পড়াশোনায় মনোযোগী হই।

প্রায় ২-৩ বছরের মতো আর কোনো অভিনয় প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করতে পারিনি। ভাবলাম আমার দ্বারা মায়ের আশা পূরণ করা সম্ভব না।তাই পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়াই ভালো হবে। হঠাৎ একদিন স্নেহার আম্মু বাসায় কল করেন। তিনি বললেন কিছুদিনের মধ্যেই দলীয় মঞ্চনাটক প্রতিযোগিতা শুরু হবে আমি চাইলে সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারি। এটা শুনে আমি অনেক খুশি হলাম। পরের দিন মা আমাকে সারথি নাট্য সংগঠনে নিয়ে যায়। সেখানে আমরা সপ্তাহ খানেকের মত প্রাক্টিস করেছিলাম। আমাদের দল জেলা বিভাগীয় পর্যায়ে দুবারই প্রথম হয়েছিল।

তাই জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করার জন্য আমাদের ঢাকায় যেতে হবে। সে বারই আমি জীবনের প্রথম ট্রেনে ঢাকায় গিয়েছিলাম। বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করতে এসেছে এসেছিল। আমার খুব ভয় লাগছিল সরাসরি দর্শকের সামনে অভিনয় করাটা সত্যিই অনেক কঠিন। আমাদের দলের পারফরম্যান্স বেশ ভালই ছিল তবে এবার আর বিজয়ীর খেতাব নিতে পারেনি। এরপর থেকে প্রত্যেক বছরই আমি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি কিন্ত প্রতি বার হার মেনে যাওয়াই নিরাশা গ্রস্থ হই।এত বছরের সাধনার পরেও ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।

বাবা আবার আমাকে না বলে শিল্পকলা একাডেমি ভর্তি ফরম বাসায় নিয়ে আসে। ভেবেছে হয়তো এখানে ঠিকঠাক অনুশীলন করতে পারলে আমার আশা পূরণ হবে। কি আর করার বাধ্য হয়ে আমি আবার অভিনয় শিখতে শুরু করলাম। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চান্স পেয়ে যাই। তাই রংপুরে থাকার সুযোগ হারিয়ে ফেললাম আর আশার আলোর দুয়ার নিজ হাতেই বন্ধ করে দিলাম। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার সংগঠন থাকলেও কোন ভাবেই আমার আর নিরাশ হবার ইচ্ছে নেই।তাই অন্য মানুষদের মত আমিও সাধারণ জীবন যাপন করতে শুরু করেছি।

হ্যাঁ আমি ব্যর্থ হয়েছি বাবা-মা আর আমার আশা পূরণ করতে পারেনি। নিরাশার মাঝে আশার অনুসন্ধান করার ক্ষমতা আমার আর নেই। তাই মাঝপথে আশার আলো দেখা বন্ধ করে দিয়েছি। এই জীবন যুদ্ধে হার মানার গল্পটাই আমার সঙ্গী করে নিয়েছি।

আমি @BdCommunity কে ধন্যবাদ জানাই প্রতিবারের মতো এবারও কনটেস্ট আয়োজন করায়।

Sort:  

Congratulations @niha ! You won the bdcommunity weekly contest ( 2nd Place).

tenor.gif
source

I am very happy so I want to thank everyone...🙋🙋🙋

This post earned a total payout of 12.756$ and 6.378$ worth of author reward that was liquified using @likwid.
Learn more.