Describe Your Best Adda Ever: [রোদেলা দিনগুলি]

in BDCommunity4 years ago (edited)

hive.jpg

“ভাইয়া, আবার কবে আসবেন পড়াতে?”
“আজ কয়টায় এসেছি যেনো , হুমম সারে পাঁচটায়। আগামীকালও একই সময় আসবো”
“আচ্ছা ভাইয়া, আসসালামুয়ালাইকুম”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম”

খুব গরম পরেছে আজ, শরীরটাও জ্বর জ্বর।সন্ধ্যা হয়ে আসছে , আকাশের এই রক্তিম আমেজটা ভালো লাগার মতন।আজকালকার দিনে, কেনো যে কেউ দেখে না আকাশটা! এতটাই বাস্তবমুখী আমরা, নাকি একটা বৃহৎ মার্কেটের অংশ হিসেবে, তাদের টার্মস এন্ড কন্ডিশনে “আকাশ দেখা যাবে নাহ” এরকম কোনো রুলস রেগুলেশন আছে। হাসি পায়, নিজের মনে মনে হাসি।সমস্যা নাই, মানুষের সেই ফুরসত কোথায় আমাকে পাগল বলার!

প্রান্তিকে, বাস থেকে নেমে রাস্তার মাঝ দিয়ে পারাপার হবার সময় মাথায় আসে, বন্ধু সাকিবের কথা।
“রাষ্ট্রের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করো বন্ধু”
কথাটা এখোনো কানে বাজে, আমি এর পর থেকে আর কখোনো রাস্তার ওপর দিয়ে রাস্তা পার হই নি, ওভারব্রিজ দিয়েই হয়েছি।কিন্তু সাকিব আর আমি অনেকবারই কথাছলে, রাস্তারমাঝের ছোটো তাঁরকাটা ডিঙিয়ে ,বাসের সাথে কাবাডি খেলে কতবার যে পার হয়েছি।কিন্তু কাবাডিতে বিপরীত দলের কেউ ছুঁলে সে আবার পরবর্তী দানের জন্য বসে থাকে, কিন্তু এখানে সোঁজা ওপারে যেতে হবে।

আমার এই বন্ধুটা মৎসশিকারী, জীবন সম্নধে আলাদা বোধ আছে, আছে বিশ্বাস, আছে পাগলামী।আমি ওকে মাঝে মাঝে বলি, একটা জলসাঘর বানিয়ে দিবো তোকে !সামনে নর্তকী নাচবে, নাচ পছন্দ হলে গলার মালা ছুড়ে মারবি, হা হা হা । ওর মাঝে একটা সামন্ত সামন্ত ভাব আছে।

ঘড়িতে দেখলাম সরে সাতটা বাজে, রিক্সা নিলাম, সারাদিন পরের সিগারেটটা ধরিয়েছি, আজকের আবাহাওয়া টা ভালো, বাতাসটা গায়ে লাগছে।সিগারেটটা মেডিক্যালের সামনে আসতে আসতেই ফুড়াবে। আপন মনে টানতে টানতে মনের একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজি !এই যে বন্ধুরা বসেছে ম্যাডিকেলের সামনের চায়ের দোকানটায়, আমিও যাচ্ছি রোজকার মতন, তবুও ক্লান্তি লাগে না কনোদিন! কিছু একটা অছে এই বন্ধুত্ব জিনিসটায় যা আমাকে রোজকার মতন আজো টানছে সেখানে তাড়াতাড়ি পৌছানোর জন্য। আমার মনে হয় যখন চাকুরীতে ঢুকবো, তখোনো হয়তো এতোটা নিয়মিতো ডিউটি করবো নাহ , যেমনটা সেচ্ছায় ওদের জন্য করি।

রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে দোকানের দিকে এগুতেই দেখি , সাকিব, মানিক, তুরাগ, মাহিন, ফাহিম ওরা সবাই বসে আছে। সবাই গল্প করছে, কিছু গল্প আছে পারিবারিক অবস্থার, কিছু আছে প্রেমের , কিছু আছে ব্যাক্তি বিশ্বাসের আর কিছু কমন-গ্রাউন্ডেড গল্প, যেগুলো উঠলে দোকানদার চাচাও বিরক্তিতে বলে, “মামারা একটু আস্তে কথা কন! কানটা ঝালায়ে ফালান একবারে”!

দোকানটা খোলা জায়গায়, সামনে পুকুড় তবে হ্যা পাড়ওয়ালা পুকুড়।দোকানটার গঠন তারা ভালো বুঝবে যারা রাস্তার পাশের চটপটিওয়ালা মামার কাছে থেকে চটপটি খেয়েছে।কাকা দাড়িঁইয়েই চা বানায়, কাকী এটা ওটা এগিয়ে দেয়।তাদের একটা ছোট্ট নাতি আছে এর ওর কাছে থেকে ফোন নিয়ে গেমছ খেলে।

“কিরে হাউয়া এতো লেইট হয় ক্যান তোর” মাহিনের প্রশ্ন
“আরে কইস নাহ বাল, স্টুডেন্টের পরিক্ষা চলে, তবুও আন্টি কয় আরো একটু পড়াইতা বাবা!”
“বল কেমনডা লাগে”
“কাকা আমাকে একটা রংচা দিবেন, একটু আদা আর লেবুও দিবেন।আর আপনার বুকের ব্যাথার কি অবস্থা?”
কাকি উত্তর দিলো, “আর বইলো নাহ ঐ বড়ো বালতিতে করে পানি আনতে হয় দোকান খোলার আগেই ব্যাথাডা কমে নাহ তাই।“
আচ্ছা, আমাদের মধ্যে যে আগে আসবে, সে আপনাকে পানি এনে দিয়ে যাবে। আমাদের মধ্যে কথা হইছে এই নিয়ে, আপনি টেনশন করবেন নাহ, আর প্রেশারের ওষুধটা খাবেন নিয়মিতো।
হুম চাচা,খাচ্ছি নিয়মিতোই, আল্লাহ ভরোসা।

“ফাহিম, কখন আসছস? তুই তো এতো তাড়াতাড়ি আসস নাহ?”
“হঠাৎ করে মনে হলো, আজ আর পড়াবো নাহ।টিউশনির এই এক বড়ো ভালো জিনিস জানস তো, নিজে নিজে ছুটি নেওয়া যায়!”
“ হা হা হা, হুম তা অবশ্য যায়।অনিম আসে নাই আজ!বিলাই সালা!কই থাকে ইদানীং?”
“ওই সালারে দেখলাম বাইকে করে মাইয়া নিয়ে যাইতেছে! কেমন ধাপ্পাবাজ সালা!এহানে আসবো নাহ অথচ মাইয়া লইয়া ঠিকই ঘুরা পারে” , তুরাগ উত্তর দেয়!

কথা হচ্ছিলো এটা ওটা নিয়ে, হাসছিলাম কারন অকারনে! কেমন যেনো একটু বেশিই ডোপামিন ক্ষরনের মতন , সব কিছুই ভালো লাগার । “এই মামা ফার্স্ট কলে” বিনা চুক্তিতে সিগারেট দিয়ে দেবার এবং একে ওপরকে পচঁনোর সুরে বেজে গেলো নয়টা।হঠাৎ করেই একটা ছেলের ভাড়ি গলায় বলে , “দাদা, এক কাপ চা আর একটি গোল্ডলিফ দেওয়া যাবে?”

আরে এটাতো অনিক।আমাদের মধ্যে ও ই একমাত্র চাকুরীজিবী, কিন্তু ওর মুখে এরকম ভাষা মনে হয় নাহ আমাদের এখানে কেউ এক্সপেক্ট করে! সবাই তো হাসি , সালা, চাকুরী করে দেখে সালার পার্ট দেখো!এই সালা তোর চাকুরীর ঘন্টা শেষ হয়েছে , এখানে এমনে কথা মাড়াইতেছোস ক্যান! হালারপু, মাইরা তোর হাড্ডি দিয়া গুড্ডি উড়াবো সালা!!!
সবার কথা উপেক্ষা করে , কারো দিকে দৃষ্টি না দিয়ে বেঞ্চের এক কোনে মাথা নিচু করে চায়ে চুমুক দেয় আর সিগারেটে গুনে গুনে টান দেয় অনিক।
মাহিন ফিসফিস করে বলে সালার যে অবস্থা, সিগারেটে কল দেওয়ার ও সাহস পাচ্ছি নাহ!
আমার পাশেই বসেছিলো অনিক।আমি বললাম, মামা, তোর কি হয়েছে?তুই তো এমনে কথা কস নাহ! কি হইছে বল?চাকুরী থেকে ছাটাই করছে নাকি মামা তোরে?
না দাদা, আমাকে ছাটাই করবে কি করে! আমার মতন টেকনিক্যাল কাজ জানা লোক আর একটাও আছে ঐ অফিসে! কিছু হয় নি দাদা ধন্যবাদ।
বলে কি সালা! এই সালারে আমি তো কি! আমার কনো বন্ধুই চিনবে নাহ এখন!!
না পেরে, আমি আমার ভ্রম্মা অস্ত্র ব্যবহার করলাম। এই পরিস্থিতে কথা বের করার জন্য আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার সুরে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি ! সেই উপায়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেই কাজ হলো,অনিক কাঁদতে লাগলো! দোকানে আমরা ব্যাতীত আরো লোকজন ছিলো, আমি ওর হাত টান দিয়ে পুকুড় পাঁড়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকলাম …
সাকিব ঝট করে দুইটা গোল্ডলিফ নিয়ে এলো, এর পরের কাজটা সাকিবের।আমি তাই অনিকের কথা বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকলাম।

“এই যে চাকুরী করি, চাকুরীর টাকায় বাইক কিনছি, কনোদিন,বাপ বেচেঁ আছে তবুও তাকে ফোন দিয়ে বলতে পারলাম নাহ যে আব্বা বাইকটা কিনছি বা আপনি বাসায় আসেন, এসে, দেখে জান। ফাহিম সেদিন কি সুন্দর, বাইক কেনার পরই তার বাবাকে বাইকটা প্রথম দেখালো।মানুষের বাপ মরে গেলে তো স্বাত্ননা দেবার কারন থাকে, কিন্তু আমি আমাকে কি বলে স্বান্তনা দিবো?”
সাকিব প্রতিউত্তরে বলল,” তুই বাইকটা কিনে প্রথম আন্টিকে দেখাইছস নাহ ! কতো জনের এই ভাগ্য হয়? আর হয়তো সব ঠিক হবে একদিন, যা আছে তাই বড়ো করে দেখ! শান্তি পাবি”

কথা বলতে বলতে অনিক শান্ত হয়ে এলো, স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে লাগলো,পরিস্তিতি স্বাভাবিক দেখে সবাই অনিক কে নিয়ে মজা করতে করতে, হাসির মাঝেই রাত দশটা বেজে গেলো।

আমি আর সাকিব বাসায় ফিরছিলাম, দুইজনের টাকার শেষ অংশ দিয়ে শেষ সিগারেটটা ধরিয়ে বাসার পথে হাঁটা দিলাম।ফিলোসফিকাল কথা বার্তায় বাড়ির পথ ফুঁড়াতে থাকলো। এভাবেই চলে যাচ্ছে আমার রোদেলা দিনগুলি!

আহারে! আমার না ফিরে পাবার দিনগুলি!

signature.png

Sort:  

Congratulations @nirupom.azad ! You won the bdcommunity weekly contest( 2nd Place).

tenor.gif
source

Thank you soo much vai for the appreciation..

সুন্দর করে লিখেছেন ভাই। ❤

ধন্যবাদ রেজা ভাই লিখাটা পড়বার জন্য। চেষ্টা করে যাচ্ছি কিছু দিয়ে যাবার

Congratulations @nirupom.azad! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You distributed more than 200 upvotes. Your next target is to reach 300 upvotes.

You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!