Inktober (Day 3 & 4)

in BDCommunity20 days ago

Day: 03
Theme: crown

conceive করার পর থেকে বাবা আম্মু আমাদের কিভাবে বড় করেছে এইটা নিয়ে প্রায়ই ভাবতাম। বাবুকে কিভাবে বড় করবো ভাবার সময় তাদের কথা মনের অজান্তেই মাথায় চলে আসতো। ছোটবেলায় তো বাবা আম্মুর সাথে মন কষাকষি লেগেই থাকতো, আমাদের কোনো কথা শুনে না, friend দের সাথে ট্যুরে যেতে দেয় না, কারো বাসায় একলা থাকতে দেয় না, কিছু বুঝে না; কিন্তু এখন নিজেরা বাবা মা হয়ে বুঝি যে বাবা আম্মুই ঠিক ছিল। প্রতিটা স্টেপেই মনে হয় যে ওনারা এভাবে এভাবে আমাদের বড় করেছে বলেই আজকে আমরা এই অবস্থায়। কয়েকটা উদাহরণ দেই..

যেমন আমরা হওয়ার পর থেকেই বাবা আম্মুর টার্গেট ছিল খোলামেলা আর আলো বাতাসপূর্ণ বাসা নেয়ার৷ একটু বড় হওয়ার পর বাবা প্রতিদিন বিকালে আমাকে নিয়ে মাঠে যেতো৷ হাত পা যাতে শক্ত হয় সেজন্য বাবা জোরে জোরে আমাদের সাথে ফুটবল খেলতো। ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, সাইকেলিং এসব কিছুই শিখেছি বাবার থেকে।

দুপুরে রাতে সব সময়ই আমরা একসাথে বসে ভাত খেতাম। বাবা একটা কথা প্রায়ই বলতো যে "আমি তোমাদের সব খাওয়ায় অভ্যাস করাবো, যাতে কারও বাসায় গেলে বলে যে -ওরা সবকিছু খায়, কোন কিছুতে বাছ বিচার নাই"। আর আসলে হয়েছেও তাই, আমি আর টিকলি সবকিছুই খাই।

আর বইপত্র নিয়ে বলা শুরু করলে তো শেষ হবে না। বই পড়ার আগ্রহই হয়েছে আম্মু আর বাবার থেকে। টিকলি স্কুলে ভর্তির আগেই রিডিং পড়তে পারতো। আমার ক্লাশ ওয়ানের ডায়েরি এখনও বাসায় আছে।

আম্মু চাইতো আমাদের যাতে নাচ, গান, কবিতা সবকিছুতেই আগ্রহ থাকে৷ স্কুল শেষে খাওয়ায় দাওয়ায় আমাদের নিয়ে ছুটতো নাচের ক্লাশে। বার্ষিক প্রতিযোগিতায় যা যা ইভেন্ট আছে, সবগুলাতে জোর করে আমাকে ঢুকাতো, কি যে একটা অবস্থা!

এছাড়া নানা জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, বইমেলা থেকে ঝুলি ভরে প্রতি বছর বই কিনে আনা, আঁকাআকিতে উৎসাহ সবকিছুতেই বাবা আম্মু অনেক সময় দিয়েছে। এত কিছু বলে শেষ করা যাবে না। এই princess treatment পাওয়ার পরেও আমরা আহ্লাদি করি নাই। কিছু যে চাইলেই পাওয়া যায়না, হিসাব করে চলতে হয়, এধরণের কড়া শাসনও ছিল বহাল।

বাবুকে বড় করতে গিয়ে প্রায়ই মনে হয় আমরা এর কতটুকু ওর জন্য করতে পারবো? বাবা আম্মুর মতন প্যারেন্টিং পারবো? বাবুকে তো দেখলে মনে হয় নিজের সবটা উজার করে দিয়ে দেই! আল্লাহ সহায় হোক। 💙

IMG_20251003_215953.jpg


Day: 04
Theme: Murky

স্কুলে থাকাকালীন সময়ে যখন বাড়ি যেতাম তখন আমাদের এলাকায় লোডশেডিং এর খুব সমস্যা ছিল। রাতে ১ ঘন্টা কারেন্ট আসা মানে পরের ২ ঘন্টা লোডশেডিং। প্রতিদিন বিকালে নাসরিন আপুর কাজ ছিল হারিকেনের চিমনি বের করে মুছা, আর কেরোসিনের তেল ভরা৷ ( আরেকটা কাজ ছিল, চাচার জন্য হুক্কার পানি চেঞ্জ করে নতুন টিকি দিয়ে রেডি করে রাখা)।

এসব করে মাগরিবের আজানের সময় বের হয়ে যেতাম ডোবার পাড় থেকে হাঁস মুরগী নিয়ে আসতে। সারাদিন বাইরে ঘুরে হেলেদুলে যেভাবে খুপরির ভেতর ঢুকতো, এটা দেখতেই মজা লাগতো৷ এরপর ডাইনিং টেবিলে আমরা চার মেয়ে মিলে পড়তে বসতাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই কারেন্ট চলে যেতো। চাচি হারিকেন আর কুপি জ্বালিয়ে দিতো। কুপির আগুনের উপর হাত রেখে কালি লাগাতাম। হারিকেনের চারপাশে বসা পোকা দেখতাম। চাচা ৮ টার মধ্যে ভাত খেয়ে নিতো। ওই হারিকেনের আলোতেই চাচার পাশে বসে খেয়ে নিতাম।

এরপর উঠানে বেঞ্চ, আর পাটি নিয়ে সবাই মিলে বসতাম। তখন আশেপাশে সব বাড়ির সাথেই বড় উঠান ছিল। বন্দের ঠান্ডা আরাম আরাম বাতাস সবার উঠান পার হয়ে আমাদের কাছে আসতো। চাঁদের আলো ছাড়া আর কিছু ছিল না। বাড়ির পিছনের গাব গাছ, কামরাঙ্গা গাছ বাতাসে দুলতো। পাটিতে শুয়ে আকাশের তারা আর চাঁদ দেখতাম। বাবা কিছু constellation এর নাম শিখিয়েছিল। ওগুলা বের করতাম।

দুই একটা জোনাকি মাঝে মাঝে উড়ে আসতো৷ জোনাকি ধরতে চাইলে চাচি বকা দিতো। মাথার নিচে হাত দিয়ে জোনাকির এদিক ওদিক উড়ে বেড়ানো দেখতাম।

এরপর আমি কত জায়গা থেকে রাতের আকাশ দেখেছি কিন্তু ওই বাড়ির উঠানে শুয়ে আকাশ দেখার শান্তি আর কোথাও পাই নাই। বাড়িতে শরীর-মন automatic zen mode এ চলে যেতো।

light pollution এর কারণে ওইরকম সুন্দর আকাশ এখন আর নাই। বাড়িতে আমাদের ছাড়া আর কারও উঠান নাই বললেই চলে। বাতাস আসার পথও বন্ধ। কারেন্ট চলে গেলে উঠানে আর বসা হয়না, ফোনে সবাই ব্যস্ত। বাড়িই যাই না কত বছর হয়ে গেলো!

IMG_20251006_194127.jpg