দুইদিন ধরে বৃষ্টিতে কাবু গোটা দেশ। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব। একটানা ঝড়বৃষ্টি গতকাল রাতে থামলেও বাসার সামনের রাস্তার পানি হাটু সমান পানি নামার কোন লক্ষণ নাই। ঢাকা শহরবাসী আদোও সামনে মনে হয় না কখনও এই পানি জমাটবাধার অবস্থার উন্নতি দেখবে। আবহাওয়া দেখার জন্য সেদিন নতুন একটা জিনিসের সন্ধান পেলাম - zoom earth. যুম আর্থ দিয়ে খুবই চমৎকার ভাবে টানা ৩ দিনের ওয়েদারের লাইভ আপডেট দেখা যায়। আমার কাছে জিনিসটা ভালোই ফ্যাসিনেটিং লেগেছে।
তো দুইদিন আগে ভয়াবহ গরমের মধ্যে থেকে দেখছিলাম সামনে একটা ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় আসতে যাচ্ছে। তখন মনে হচ্ছিল -যাক! একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব কয়েকদিন থাকলে ভাল! আরামসে কাজ করা যাবে। কিন্তু ঝড় যে এমন গোটা দেশকেই ভাসায় নিয়ে যাবে এটা বুঝি নাই। ডুবন্ত পটুয়াখালি, কুয়াকাটা, বাগেরহাট এলাকা দেখে মন ঠিক করতে পারছি না। কুয়াকাটায় আত্মীয় থাকায় খোঁজ নিলাম। কারেন্ট গত দুইদিন ধরে নাই। সামনের দুইদিনেও আসার সুযোগ নাই কারণ গাছ পড়ে মিটার পর্যন্ত ড্যামেজ হয়ে গেছে। বাঁধের ভেতরের দিকে থাকায় বাসায় পানি উঠে নাই, এটাই রক্ষা।
এত বৃষ্টির পরেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ যে ভাঙ্গে নাই এটাই অনেক। না হলে নোনা পানি আরও কত গ্রামকে যে ভাসায় নিয়ে যেত কে জানে! হাজার হাজার মাছের ঘের এখন পানির তলে। কত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলো তা এখনও হিসাব করে বের করা হয়নি। এত মানুষের দেশে এমনিতেই খাদ্যের সমান বন্টন হওয়ার সুযোগ নাই। সবকিছুর দাম হু হু করে বেড়ে চলছে। সেখানে এই মাছের সঙ্কটের ফায়দা নিয়ে দাম আরও কয় দফা বাড়বে কে জানে!
ফেইসবুকে প্যারাসাইটের একটা মিম বেশ দেখছি। কয়েকদিন ধরে আমিও এটার কথাই ভাবছিলাম।
এসব হতাশামূলক কথা বলার সুযোগ পেলে নিজেকে থামতে খুব হিমসিম খেতে হয়। আজকের পোস্ট র্যান্টিং নিয়ে হবে না। রিসেন্টলি একটা থ্রিলার জনরার বই পড়ে শেষ করেছি। ওইটা নিয়ে কিছু বলতে চাই (নিজেকেও প্যারাসাইটের রিচ বউটার মতন লাগছে, sigh!)
বইয়ের নাম “বাজিকর”। লেখক নাবিল মুহতাসিম। বইটা কারোও রেফারেন্সে কেনা না। কয়েকদিন আগে এই লেখকের একটা ছোটগল্প পড়েছিলাম প্রথমআলোতে। তার লেখার শৈলী, শব্দচয়ন, মেটাফোর সবকিছু দেখেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের, চমৎকার একটা ছোট গল্প ছিল সেটা। এরপর গুগলে খোঁজাখুঁজি করে দেখলাম সে আদতেই একজন লেখক। তার কয়েকটা গল্পের বইও বের হয়েছে। এবারের বইমেলায় বইয়ের লিস্টে তাই ওনার “বাজিকর” বইটা পুরে দিয়েছিলাম। ভাবছিলাম যে ছোটগল্প এত ভাল লিখে সে উপন্যাস না জানি কত ভালো লিখবে!
কিন্তু এই হাই একপেক্টেশনই আসলে কাল হয়ে দাঁড়ালো। বাজিকর আমাকে হতাশ করে নাই কিন্তু যেই হাইপ নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম সেটাও আসলে মিট করে নাই।
বইটা স্পাই থ্রিলার জনরায় লেখা। আমার জানা মতে বাংলাদেশে এই ধারায় মৌলিক লেখা কাজী আনোয়ার হোসেন ছাড়া আর কেউ লেখেনি। সেই দিক থেকে ভাবলে লেখক নাবিল বাংলা সাহিত্যে ছোট্ট করে অবদান রাখতে পেরেছে।
কাহিনী শুরু হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মেয়ের প্লেন হাইজ্যাক নিয়ে। যেখানে তার সাথে ছিল বাজিকর জনি (বাজিকর শব্দের সাথেও এই প্রথম পরিচিত হলাম। এটা এমন একটা উপাধি যেটা দেশের সবচেয়ে সেরা, আনডিফিটেড এসপিওনাজ (স্পাই) এজেন্টকে দেয়া হয়। একটা দেশে একটাই বাজিকর থাকে)। প্লেনটা গায়েব হয়ে যায় ইউক্রেনের মাটিতে। সেটা উদ্ধারের কাজে নিয়োজিত করা হয় দেশের সবচেয়ে দক্ষ মিলিটারি ইন্টিলিজেন্স টিম “দ্য এজেন্সি”। বাছাই করা ছয় জন এক্সপার্টকে নিয়ে রেসকিউ মিশনের প্ল্যান করা হয়। এরই মধ্যে একজন সবচেয়ে কনিষ্ঠ টিম মেম্বার আহাদ। আর তার বর্ণনা থেকেই শুরু হয় টান টান উত্তেজনাপূর্ণ একশন থ্রিলার!
এক্সপেক্টেশন না মিট করার ব্যাপারটা এসেছিল দুইটি কারণে। কিছু জায়গা অতিরঞ্জন লেগেছে (হান্ডগান সাবরিনা নিয়ে বাড়াবাড়ি, এত মার খেয়েও না মরা)। তবে এসব কিছুই মাইনর হয়ে যায় ক্লাইমেক্সের ফাইনাল টুইস্ট দিয়ে! একদমই আঁচ করতে না পারার কারণে চমকে যাওয়ার মতন আসল মজাটা পেয়েছিলাম!
তবে বইটা খারাপ এটা কোন দিক থেকেও আমি বলবো না। সবচেয়ে ইম্প্রেসিভ পয়েন্ট হিসেবে ছিল geo politics.
রাশিয়া-ইউক্রেনের geo politics এর হিসাব নিকাশ খুব চমৎকার ভাবে বইটাতে তুলে ধরা হয়েছে। আর সব কিছু ফিকশন হলেও ফ্যাক্ট হিসেবে যা বর্ণনা করেছে তা অনেকটাই বাস্তব। এটা বলতে হবে যে বইটা লেখার আগে নাবিল ভাল মতন জায়গাগুলা নিয়ে রিসার্চ করে নিয়েছিল। এই সুযোগে আমাদের মতন রিডারদেরও লাভ হয়েছে হিস্ট্রি আর পলেটিক্স নিয়ে ডিটেইল ইনফরমেশন জানার।
আমি এমনিতে অ্যাকশন জানরার ফ্যান না, তবে বইয়ে পড়তে বেশ ভালই লেগেছে। পুরো কাহিনী জানার জন্য এই বাজিকর ট্রিলজির আরও দুইটা বই বাজি আর বাজিমাত পড়তে পারলে ভাল হতো। দেখি জোগার করতে পারি কিনা!
বইঘর থেকে ই-বই কিনেছিলাম ৩টারই। ডিভাইসে পড়তে অসুবিধা না হলে পড়তে পারেন। তবে হ্যাঁ, এই সুপারহিরো লেভেলের স্পাইগিরি ভালো লাগে নাই। আর বেশি বিরক্ত হয়েছিলাম তৃতীয় খণ্ড পড়তে গিয়ে। ওভারঅল ভালো জিনিস। লেখাও আটকে রাখে। কিন্তু তাও কী যেন একটা কম।
একদম! আহাদকে সুপারহিরো লেভেলে না নিলেই হয়তো উপন্যাসটা আরও রিয়েলেস্টিক হতো।
সময় কাটে এই আরকি।