আড্ডা চলছে...
পারিবারিক আড্ডা....
ছোটবেলা থেকে নানুবাড়ী বড় হওয়া আমার লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে সদ্য চাকুরিপ্রাপ্তি ঘটেছে। ইতোমধ্যে বিবাহের পাঠটাও চুকিয়ে নিয়েছি, নিজের পছন্দে এবং নানাভাই এর সম্মতিতে।
আজকের আড্ডার কোন বিষয়বস্তু নেই, নেই কোন সূচনা বা উপসংহার এর আদিক্ষ্যেতা। আজ সবার মাঝে একটা প্রাপ্তির আনন্দ।
তাদের আদরে বড় করা ছেলেটা আজ তার পায়ের নিচে একটা নিজের অবলম্বন তৈরি করতে পেরেছে। তাদের ২৫ বছরের প্রচেষ্টা আজ সফলতার মুখ দেখেছে। যদিও আমার কাছে তাদের কোন স্বার্থ নেই তবুও তাদের মতো তৃপ্ত আজ এই ধরণীতে আর কেউ নেই।
আজকের আড্ডার সদস্য সংখ্যা আমরা পরিবারের সবাই। নানাভাই, নানু, বড় মামা, বড় মামী, ছোট মামা (আরেকজন সেজো মামা প্রবাসী), দুই আন্টি, আম্মু, ছোট বোন এবং আমি নিজে।
আজ সবচেয়ে খুশি আমার নানাভাই, তার দুটো স্বপ্ন ছিলো..
১. তার বড় নাতীর বউ দেখে যাওয়া। এবং
২. তার নাতীকে স্বাবলম্বী দেখা।
আজ তার দুটো স্বপ্নই পূরণ হবার দিন। তাই আজ সে বাজার থেকে মিষ্টি, চানাচুর, আপেল এবং কোল্ডড্রিংক্স নিয়ে এসেছে। আর আমি এনেছি আইসক্রিম। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে এদের নিয়ে মুখকে ব্যস্ত রাখা আর আড্ডাকে ঝাল, মিষ্টি & ঠান্ডার একটা মিশ্র আবহ দেয়ার প্রচেষ্টা চলতেছে। আর এই প্রচেষ্টা অনেকাংশেই সফলও হচ্ছে।
সবার মাঝে সবচেয়ে চুপচাপ বড় মামা। উনি স্বভাবগত ভাবেই চুপচাপ মানুষ। কিন্তু নিশ্চুপ চেহারার মাঝেও যে বিশাল আত্মতৃপ্তি ফুঁটিয়ে তোলা যায় তা আজ মামাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে। আর তৃপ্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক, আজ যে তার আদরের ভাগ্নে স্বাবলম্বী।
আর বড় মামীর আদরের আব্বাজানের (মামী আমাকে আব্বাজান ডাকতো) জন্য আজ মামী আমার পছন্দের সকল ডিশ রান্না করেছে। পোড়া বেগুনের ভর্তা, শুটকি ভর্তা, আলু-করলা ভাজি, ডিমের দোপেয়াজা আর গরুর মাংস। আমার কল্যানে আজ সকলের জমপেশ ভুড়িভোজ হবে।
এগিয়ে চলেছে আড্ডা...
আড্ডায় এখন আমার ছোটবেলা থেকে বর্তমানকালের বিভিন্ন ভালো কাজের ব্যবচ্ছেদ হচ্ছে। আর হবেই না কেনো?
আজ তোহ আমার প্রাপ্তির দিন। ভালোর দিনে সব ভালই সামনে আসে।
আজ সবার ভালবাসায় আমি সিক্ত। আগামীকাল আমি ৪৫ দিনের চাকুরীপূর্ব ট্রেনিং এ যাচ্ছি। তাই এই দিনগুলোর সকল ভালবাসা আজ আমায় দেয়া হচ্ছে।
সন্ধ্যা ৭ টা থেকে শুরু করে রাত ১ টায় আড্ডার সমাপ্তি টানা হলো আমার সকালে রওনা দিতে হবে বলে।
নতুবা এই আড্ডার সমাপ্তি আজ রাতে হবার ছিলো না।
সমাপ্তি & অপ্রাপ্তি পর্বঃ
পরদিন সকালে আমি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। তার কিছুদিন পর খবর আসে আমার বড় মামা মরণঘাতী "জিবিএস" ভাইরাসে আক্রান্ত। যার কোন সীকৃত চিকিৎসা এখনো বিজ্ঞানের হাতে নেই। আমি মাঝে একবার ট্রেনিং থেকে ছুটি নিয়ে মামাকে দেখতে যাই এবং রক্ত দেই আর ঈদের দিন সস্ত্রীক মামার সাথে দেখা করি। মামা আইসিউ তে থাকায় তার সাথে দেখা করা সম্ভব ছিলো না।
প্রায় ৩ মাস আইসিইউ তে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে পরাজিত হয়ে সবার মায়া ত্যাগ করে চলে যান উনি। তখন আমি চাকুরিসূত্রে কুমিল্লাতে ছিলাম। অপ্রাপ্তির মাঝে আরো বিশাল মাত্রা যোগ হয় যখন জ্যামের প্যাচে পড়ে আমি যখন বাসায় পৌছাই তখন মামার দাফন সম্পন্ন।
যার কাঁধে চরে আমার শৈশব কাটালাম, তার লাশটা কাঁধে নেয়ার সৌভাগ্য আমার হলো না।
মামা মারা যাবার শোকে নানা ডিপ্রেশনে চলে যায়, আর এরই মাঝে নানাভাই এর শরীরে বাসা বাঁধে মরণঘাতী ক্যান্সার। কিছুমাস পর নানাভাই ও আমাদের থেকে বিদায় নেন। যদিও উনার জানাজা & দাফনে থাকার সৌভাগ্য আল্লাহ আমায় দিয়েছিলেন।
আমার প্রাপ্তি উপলক্ষে আয়জিত আড্ডাটাই যে তাদের সাথে আড্ডার সমাপ্তি নিয়ে আসবে এটা আমার জন্যে মেনে নেয়া কষ্টকর হয়ে উঠে।
***এই প্রাপ্তির আড্ডাই হয়ে উঠে তাদের সাথে আড্ডার সমাপ্তি। ***
Generally...
I'm a Sports lover, writer (Specially Cricket), Gardener, Traveler (When i get some free time), Photographer (I love it too much) and Now i am working as a Marketing Executive in a private firm.
I am available at discord...
My Discord ID: rasheddh#8075
সুন্দর লিখেছেন। আপনার মামাকে মহান আল্লাহ্ জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুক এই দোয়াই করি। আপনার ও আপনার পরিবারের সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।
ধন্যবাদ ভাইয়া