আজকের দিনটা মোটামুটি সবার জন্যই স্পেশাল। একে তো পহেলা বৈশাখ, বাংলা বছরের প্রথম দিন। তার উপর আবার প্রথম রমজান। মুসলিমদের সবচেয়ে প্রিয় মাস যাকে বলা হয়। তাই মোটামুটি কম বেশি সবাই হাসি খুশি একটা দিন আর করছে।
আমার জন্যেও আজকের দিনটা শুভ একটা দিন বলা যায়। কারণ আজকে আমার আসল জন্মদিন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আসল জন্মদিন আবার কী জিনিস? তাই না? আসলে আমার সার্টিফিকেটে আমার জন্মদিন ১০ আগস্ট লেখা হইছে। বড় ভাই এর জন্মদিন ভুল হওয়ায় আমারটাকেও চেইঞ্জ করতে হয়েছিল। তা না হলে উনার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য ৪ মাসেরও কম হয়ে যেত। এই কারণেই বর্তমানে এক বছরে আমি দুইটা করে জন্মদিন পালন করি। একটা সার্টিফিকেট অনুসারে, অন্যটা সত্যিকারের জন্মদিন হিসেবে।
ফেসবুকে বন্ধু ও ছোট ভাইদের শুভেচ্ছা
আজকের দিনটা আমার জন্য ভাল হলেও আমার এতটা ভাল লাগছে না। জীবনে প্রথমবারের মতো প্রথম রোজা পরিবারের থেকে অনেক দূরে বসে পালন করছি। কাজের খাতিরে ঢাকায় থাকতে হয়। লকডাউনের কারণে এইবার বাড়িতে যাওয়া হয় নি আর। ইদের সময়েও বাড়ি যেতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।
পরিবারের সাথে রোজার প্রথম দিনটা কাটাতে পারছি না বলে মন কিছুটা হলেও খারাপ হয়ে আছে। তবে আশার কথা হল, আমি যেখানে থাকি, সেখানে আমার অন্য যেসব মেস মেটরা আছেন, তারা সবাই মিলে খুব সুন্দর একটা দিন কাটিয়ে যাচ্ছি। এরা না থাকলে আমার আজকের দিনটাই মাটি হয়ে যেত।
আজকে সেহরির রান্না আমরা সবাই মিলেই রান্না করেছিলাম। আমি এর আগে টুকটাক রান্না করলেও সেগুলো শুধুমাত্র নিজের খাবার হিসেবে চালিয়ে নেয়ার মতো। আমাদের মেসে টুটাল মেম্বার ৮ জন। এর মাঝে শুধুমাত্র ২ জন অন্যদের চেয়ে ভাল রান্না করতে পারে। এজন্য আজকে ওরা দুইজন মিলেই গরুর মাংস রান্না করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, রান্না খুবই বাজে হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কিছুই করার নাই। রান্না খারাপ হলেও সবাই মিলে খুব মজা করে হাসি ঠাট্টা করে সেহেরি খেয়ে শেষ করেছিলাম।
কেউ হয়তো স্বীকার করবে না, কিন্তু আমি জানি যে পরিবারের কাছে সময়টাতে থাকতে না পেরে সবারই মন খারাপ হয়ে আছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এই মন খারাপের বিষয়টা আমরা কেউ কাউকে সারাদিনে একটুর জন্যেও বুঝতে দিচ্ছিলাম না। সবাই সবার সাথে ঠিকই মজা করছি, আড্ডা দিচ্ছি।
বিকেলের দিকে নিজেরা নিজেরাই ইফতার বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম। এর আগে আমাদের সবার টুকটাক রান্না করার অভিজ্ঞতা থাকলেও ইফতারি বানানোর অভিজ্ঞতা কারোই ছিল না। ফলে এই ব্যাপারটা আমাদের জন্য একেবারেই নতুন একটা এক্সপেরিয়েন্স ছিল।
আমাদের বাড়িতে রমজানের প্রথম রোজায় খুব বড় আয়োজন করা হয় সবসময়। এবারও করা হয়েছে। কিন্তু শুধু আমিই মিস করে ফেললাম। তবে আমাদের মেসের আয়োজনও কম হয় নি আজ। ছোলা, মুড়ি, জিলাপি, আলুর চপ, বেগুনি, শরবত, খেজুর, কলাসহ আরো কিছু আইটেম তৈরি করেছিলাম আমরা।
যায় হোক, আজকের দিনে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে কোনটা জানেন? মেসের সবাই আমরা আমাদের ডাইনিং রুমে একসাথে জামায়াতে নামাজ আদায় করেছি পাঁচ ওয়াক্ত। গতকাল রাতে মেস মিটিং এ সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে করোনাকালীন এই সময়ে আমাদের মেসের ডায়নিং রুমটাকে নামাজের রুম হিসেবে ব্যাবহার করা হবে।
সবকিছু মিলিয়ে ভালই একটা দিন কাটলো আজ। তবে অন্যান্য বারের মতো পহেলা বৈশাক কিংবা পহেলা রমজান কোনোটাই পালন করতে পারলাম না এবার করোনা পেন্ডামিকের জন্য। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখের প্রোগ্রামগুলা মিস করছিলাম খুব। পাঞ্জাবি পরে ঘুরাঘুরি, পান্তা আর ইলিশ খাওয়ার মতো ট্রেডিশনাল বিষয়গুলো আসলেই মিস করার মতো, তাই না?
কিন্তু কিছুই করার নেই। মহামারির সময় আমাদের অবশ্যই বিবেচকের মতই কাজ করতে হবে। সাময়িক আনন্দের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই সরকার ঘোষিত লকডাউন যতটুকু সম্ভব মেনে চলুন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। গেলেও যথাযথ স্বাস্থিবিধি মেনে চলবেন। নিজে সুস্থ থাকবেন ও পরিবারের সবাইকে সুস্থ রাখবেন। পরিবারকে সময় দিবেন। আর আমার জন্য দোয়া করবেন।
শুভ জন্মদিন ভাই। জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো।